হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য
হিন্দু ধর্ম এবং ইসলাম ধর্মের মধ্যে মৌলিক পার্থক্য
~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~~
১। হিন্দু ধর্ম একেশ্বরবাদী। ব্রহ্মই সব কিছুর স্রষ্টা। তবে তার বিভিন্ন গুণ প্রকাশের জন্য বহু দেব-দেবীর কল্পনা করা হয়েছে। হিন্দুরা এই সব দেব-দেবীর মাধ্যমেই এক ব্রহ্মের উপাসনা করেন। ইসলাম ধর্ম কট্টর একেশ্বরবাদী। তাদের কাছে কোনাে দেবদেবী কল্পনা করা ক্ষমার অযােগ্য পাপ। শুধু তা-ই নয়, (হিন্দু) দেব-দেবীকে ইসলামী নরকের জ্বালানী হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
২। হিন্দুদের দৃষ্টিতে সৎকাজ করলে যে কেউ স্বর্গে যেতে পারবে। ইসলাম ধর্ম অনুসারে মুসলমান ছাড়া কেউ স্বর্গে যেতে পারবে না।
৩। হিন্দু ধর্ম প্রসারের জন্য বিশেষ কোনাে ব্যবস্থা নেই। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই জন্মসূত্রে একজন মানুষ হিন্দু হতে পারে। ইসলামে ধর্ম প্রচার ও প্রসারের জন্য বিশেষ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য কঠোর নির্দেশ আছে। ধনী দেশগুলি কোটি কোটি ডলার খরচ করছে ইসলাম প্রচার করার জন্য। গরীব মুসলমানদের জন্য তারা যে টাকা খরচ করছে তা সিন্ধুতে বিন্দুমাত্র।
৪। হিন্দুরা হিন্দু ধর্মকেই একমাত্র শ্রেষ্ঠ ধর্ম বলে মনে করেন না। ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে হিংসা বা বিদ্বেষ করার বিধান নেই। ইসলাম ধর্ম ঠিক এর বিপরীত। একজন মুসলমানের কাছে অমুসলমান মানেই ঘৃণার পাত্র। মূর্তি পুজারীরা তাে চরম ভাবে ঘৃণিত। তারা চিরদিনের জন্য অপবিত্র’ (কোরান-৯/২৮)। তাকে পবিত্র হতে গেলে মূর্তি পূজা ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে হবে।
৫। আত্মরক্ষা এবং দেশরক্ষা ছাড়া যুদ্ধের বিধান নেই হিন্দু ধর্মে। ইসলাম ধর্ম প্রসারের জন্য যুদ্ধ করার বিধান ছিল। নবীজী নিজেই এ কাজ করেছেন (দেখুননবীজীর যুদ্ধ নীতি)। বর্তমানে অবশ্য ঐ নীতির সরাসরি প্রয়ােগ নেই। তবে ১৯৭১-এ বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় ঐ নীতি প্রয়ােগ করা হয়েছিল একটু ঘুরিয়ে। একাত্তরের আগস্ট মাসে ইয়াহিয়া খান সাধারণ ক্ষমা ঘােষণা করেছিলেন। ঐ ক্ষমা আংশিক ভাবে প্রযােজ্য হয়েছিল। তাও কেবলমাত্র মুসলমানদের ক্ষেত্রে। এ ছাড়া যে সব হিন্দু ঐ সময় মুসলমান হয়েছিল তাদের অনেককে ক্ষমা করা হয়েছিল। এ ছাড়া কোনাে হিন্দুকে ক্ষমা করা হয়নি।
৬। অহিংসা এবং ব্রহ্মচর্য পালন করা হিন্দুদের কাছে মহাপুণ্যের কাজ। ইসলামে এ দু’টোর স্বীকৃতি নেই।
৭। সকল হিন্দুদের জন্য বিয়ে আবশ্যিক নয়। সন্ন্যাসীরা বিয়ে করেন না। ইসলাম ধর্মে বিয়ে আবশ্যিক। যৌন অক্ষমতা ছাড়া কোনাে মুসলমান বিয়ে না করলে তাকে ঘৃণার চোখে দেখা হয়।
৮। হিন্দু ধর্মে বিশেষ ক্ষেত্র ছাড়া দ্বিতীয়বার বিয়ে করা যাবে না।
৯। ইসলাম ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ বা তালাক অতি সহজ ব্যাপার। প্রাচীন কালে হিন্দু ধর্মে বিবাহ বিচ্ছেদ ছিল না। কিছুদিন আগে বিবাহ বিচ্ছেদের আইন পাশ হয়েছে; তবে তা যথেষ্ট কঠিন কাজ।
১০। অনেক অনেক হিন্দু নবীজীকে অসীম শ্রদ্ধা করেন। পক্ষান্তরে একজন মুসলমানও পাওয়া যাবে কিনা সন্দেহ যিনি শ্রীকৃষ্ণ বা মহামানব গৌতম বুদ্ধকে শ্রদ্ধা করেন।
১১। হিন্দু ধর্মশাস্ত্র পরস্ত্রীকে মায়ের মতাে দেখতে পরামর্শ দেয়। মাতৃবৎস রদারেষু'। ইসলাম ধর্মে এমন কোনাে ব্যাপারই নেই। ১৯৭১-এ পাক সেনারা বাঙালি মেয়েদের ‘আওরত’ বলে ধরে নিয়ে দিনের পর দিন ধর্ষণ করে করে তাদের জীবন ও যৌবনকে বরবাদ করে দিয়েছিল। ভারতীয় সেনারা ঐ সব মেয়েদের উদ্ধার করার সময় তাদের ‘মা’ বলে সম্বােধন করেছেন। অনেক হিন্দুই এই তত্ত্বে বিশ্বাসী। শিবাজী মহারাজ তাদের অন্যতম।
১২। হিন্দু ধর্ম পরদ্রব্যকে ‘লােবৎ’ (নুড়ি পাথর) ভাবতে শেখায়; ইসলাম ধর্ম সেখানে বিধর্মীর দ্রব্যকে (ধন-সম্পদ) লুট করার বিধান দেয়।
১৩। ইসলামের দৃষ্টিতে একজন চরিত্রহীন ক্রীতদাস পুতুল-পূজারী হিন্দুর চেয়ে পবিত্র। হিন্দু ধর্মের কোথাও এই ধরনের বক্তব্য নেই।
---------------------------------------------------------------------------------------------
“তুমি যদি অন্য কোন দেশে গিয়া মুসলমানদিগকে বা অন্য ধর্মাবলম্বীগণকে তােমার জন্য একটি মন্দির নির্মাণ করিয়া দিতে বল, দেখিবে তাহারা কিরূপ সাহায্য করে। তৎপরিবর্তে তােমার মন্দির এবং পারে তাে সেই সঙ্গে তােমার দেহমন্দিরটিও তাহারা ভাঙিয়া ফেলিবার চেষ্টা করিবে। এই কারণেই পৃথিবীর পক্ষে এই শিক্ষার বেশি প্রয়ােজন - ভারতের নিকট পৃথিবীকে এখনও এই পরধর্মসহিষ্ণুতা, শুধু তাহাই নহে, পরধর্মের প্রতি গভীর সহানুভূতি শিক্ষা করিতে হইবে।”
- স্বামী বিবেকানন্দ (রচনাবলী- ৫/৩)
তথ্যসূত্রঃ
ইসলাম ও বিশ্বশান্তি
লেখকঃ শ্রী দেবজ্যোতি রায়....
https://www.facebook.com/history990
