Translate

দুই বাংলার তথাকথিত মুক্তমনা মানুষের কাছে সদা উপেক্ষিত এক বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ

না হয়েছে কোন জাদুঘর, না বানিয়েছে একটি দুই ঘন্টার সিনেমা, না লিখেছে একটি ৮০ পৃষ্ঠার উপন্যাসও। দুই বাংলার তথাকথিত মুক্তমনা মানুষের কাছেও সদা উপেক্ষিত এক বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ, জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করা, ধর্ষণ লুটপাটের ইতিহাস, কারণ শিকারের জাতিটির নাম যে "হিন্দু"।


দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ নিয়ে এক হলিউডই যতগুলো সিনেমা বানিয়েছে, মনে হয় অনন্ত হবে সংখ্যাটা। কিন্তু ১৯৪৬ আর ১৯৫০ এর হিন্দু হত্যাযজ্ঞ নিয়ে কয়টি লাইন লেখা হয়েছে। বৃহৎ নোয়াখালী ও বরিশাল অঞ্চলের জনসংখ্যার গতিপ্রকৃতি যেন রাতারাতি বদলে গিয়েছিল। তাইতো আজও কারো বাড়ি ওখানে শুনলে অজান্তেই একটা মনে সূক্ষ্ম বেদনা জাগে, জিজ্ঞেস করতে ইচ্ছে হয়, ৪৬ এর আগে না পরে?


যারা এদিকে বেঁচে গিয়েছিল, তারাও বা তাদের পরবর্তী প্রজন্মকে কতটা জানাতে চেয়েছে? আত্মঘাতী হিন্দু কি বলে সাধে? আমার দাদুর একটি ভাই যে ৪৬এর দাঙ্গায় মারা গেছে, এটি আমি জানলাম কয়েক মাস আগে। দাদুকে ধরে যে পুরো কাহিনী শুনবো তার উপায় নেই। তিনি চলে গেছেন চার বছর আগে। মায়ের উপর রাগই হলো, আরো আগে কেন তিনি বললেন না। আরো বিরক্তই হলাম, যখন তিনি এমন ভাব করলেন যেন রীতিমত ভয়ানক কিছু বলে ফেলেছেন আর সাথে সাথে বললেন, "এসব নিয়ে কিছু ফেসবুকে লিখিস না!"

হ্যাঁ, মা তার স্বভাবজাত মাতৃস্নেহ থেকে হয়তো কথাটা বলেছেন কিন্তু এই যে তথাকথিত "হিন্দুরা আরামে আছে" ন্যারেটিভের সামনে আমার মায়ের ভয়ার্ত ইতিহাস চেপে রাখা...এটা কী?




আমার মা চেপে রেখে, কোথাও কিছু না বলেই বা কী পেলো? তাকে ৯২ সালের হিন্দু নির্যাতনের সময় ঠিকই লুকিয়ে থাকতে হয়েছে। '০১ সালে তার স্বামীকে নিয়ে ভয়ে থাকতে হয়েছে, এখন আমাকে নিয়ে ভয়ে আছেন। তাহলে ভয় যখন যাচ্ছে না তখন সত্য নিয়ে চুপ থাকা কেন?

রামকৃষ্ণ মিশনকে ধরা হয় সবচেয়ে নির্বিবাদী অবিতর্কিত একটি সংগঠন। আজও যদি আপনি যেকোন রামকৃষ্ণ মিশনে যান, দেখবেন হিন্দুর থেকে অহিন্দু বেশিঃ সন্ন্যাসীদের থেকে, শিষ্য চিকিৎসকদের থেকে স্বল্পমূল্যে চিকিৎসা নিচ্ছে। বিদ্যালয়গুলোতে ছেলেমেয়েরা পড়ছে স্বল্পখরচে। তো ১৯৪৬ সালে পরিস্থিতি কীরকম খারাপ হয়েছিল যে "সব মতই ঈশ্বরের পথ" বলে বিশ্বাস করা রামকৃষ্ণ মিশনও এই বইটি ছাপতে বাধ্য হয়, তা ভেবে দেখুন।

অগ্রহায়ণ, ১৩৫৩ সালে প্রকাশিত এই বই শত শত হিন্দুকে ফিরিয়ে আনতে সাহায্য করেছিল। শুধু রামকৃষ্ণ মিশন না, অদ্বৈতবাদী পুরীর সারদা মঠের শঙ্করাচার্য, দ্বৈতবাদী ভাবে চলা গৌড়ীয় বৈষ্ণব মঠ, কাশীর পণ্ডিতসভার সবাই এগিয়ে এসেছিলেন এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার প্রতিবাদে ও আপাত প্রতিকারে। সম্প্রীতি রক্ষার নামে ভারত সরকার ও গবেষক মহলে এসব চাপা দেয়া হয় বটে, কিন্তু মিথ্যাচার থেকে কখনো প্রকৃত সম্প্রীতি গড়ে উঠেনা। যে অপরাধী তাকে লজ্জা পেতে হয়, ভুল স্বীকার করে ক্ষমা চাইতে হয়। সেরকম কোন চেষ্টা উদ্যোগ আর হয়নি।



তাই ঋত্বিক সেন দ্যাশভাগ দ্যাশভাগ বলে মুখে ফ্যানা তুললেও সারাজীবনে ব্যাখ্যা দেননি কেন তার আত্মীয় ধীরেন্দ্রনাথ দত্তের সম্পত্তি এপারে বাজেয়াপ্ত হয়েছিল, পরিবারের অনেকে ভারতে বাস করতো। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, নচিকেতারা কাঁনতে কাঁনতে চোখের জল নাকের জল এক করলেও এপ্রসঙ্গে একদম নীরব। সেদিন হিন্দুধর্মীয় সংগঠনগুলো এগিয়ে এসেছিল বলেই কোলকাতার হেঁদু, যাদের সমার্থক শব্দ গান্ডু, তাদের আজ এত গান বাজনা সংস্কৃতি চিত্রকর্মের বড়াই। সেসবের বড়াইয়ে তারা অনায়াসে ধর্ম অবজ্ঞা করে। রাস্তায় কড়াই চাপিয়ে নিষিদ্ধ মাংস খায়, সরস্বতী প্রতিমা নিয়ে কটুক্তি করে, জুতা দিয়ে পূজার প্যান্ডেল করে। অচিরেই তার ফলভোগ করবে এ নিশ্চিত। পূর্ববঙ্গ থেকে পালিয়ে তো ত্রিপুরা, পশ্চিমবঙ্গে যাওয়া গেছে। এরপরে কোথায় যাবে?


Sanatan_Philosophy_and_Scripture - SPS



Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url