ভারতে গুজরাটের দাঙ্গায় হিন্দুদের গণহত্যা | Massacre of Hindus in Gujarat riots in India
![]() |
Gujarat riots |
ফলত, একদা নরেন্দ্র মােদীর প্রশংসায় পঞ্চমুখ শ্রীযুক্ত নীতীশের দাঙ্গার অব্যবহিত পরে দেওয়া সার্টিফিকেটগুলি আপাতত বিস্মৃতির ইতিহাসের নীচে চাপা দিয়ে কংগ্রেস দল এবং অন্য সেকুলার মহাশয়েরা তুমুল বিক্রমে নেমে পড়েছেন মােদীজীর মুণ্ডপাত করার জন্য। নীতীশের ভােলবদলের পিছনের আসল কারণটি যে দেবগৌড়া, চন্দ্রশেখর, গুজরালদের মত তালে গােলে প্রধানমন্ত্রীর গদিতে বসা - সেটা আনপড় জনতা বুঝলেও সেকুলার বাবুরা বুঝতে চাইছেন না। কিংবা বুঝলেও প্রকাশ করতে চাইছেন না। মানুষের স্মৃতি কখনও সবল নয়। ভুলে যাওয়াটাই আমাদের ধর্ম, ভুলতে আমরা ভালবাসি। আর এই ভুলিয়ে দেওয়ার খেলার পিছনে যদি থাকে গােবেবসকে হার মানায় এমন মিথ্যা প্রচারের বন্যা – তবে তাে কথাই নেই। তখন সত্যের ঠাই হয় গােরস্থানে। কিন্তু ইতিহাসের স্বার্থে, ভবিষ্যতের মুখ চেয়ে সত্যকে কবর থেকে বের করে আনতে হয়। শিক্ষা নিতে হয়। যাতেআগামী দিনের সঠিক পথনির্দেশ পাওয়া যায়।
২৭-০২-২০০২ তারিখে সাবরমতী এক্সপ্রেসে করে অযােধ্যা থেকে ফিরছিল হিন্দু তীর্থযাত্রীরা। গুজরাটের গােধরা রেল স্টেশনের কাছে প্রায় ২০০০ জনের এক মুসলিম জনতা সেই ট্রেন আক্রমণ করে, আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগার পর কোনও যাত্রী যাতে পালিয়ে বাঁচতে পারে তার জন্য ট্রেনের দুপাশে পেট্রোল বােমা, অ্যাসিড বােমা, তরােয়াল, আরও নানান অস্ত্র নিয়ে মােতায়েন থাকে সেই জনতা। ফলত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৫৮ জন তীর্থযাত্রী। যার মধ্যে ২৫জন মহিলা ও ১৫ জন শিশুও ছিল।
সাবরমতী এক্সপ্রেসে অগ্নিসংযােগ গুজরাটে সেদিন কী ঘটেছিল?
২৭-০২-২০০২ তারিখে সাবরমতী এক্সপ্রেসে করে অযােধ্যা থেকে ফিরছিল হিন্দু তীর্থযাত্রীরা। গুজরাটের গােধরা রেল স্টেশনের কাছে প্রায় ২০০০ জনের এক মুসলিম জনতা সেই ট্রেন আক্রমণ করে, আগুন ধরিয়ে দেয়। আগুন লাগার পর কোনও যাত্রী যাতে পালিয়ে বাঁচতে পারে তার জন্য ট্রেনের দুপাশে পেট্রোল বােমা, অ্যাসিড বােমা, তরােয়াল, আরও নানান অস্ত্র নিয়ে মােতায়েন থাকে সেই জনতা। ফলত অগ্নিদগ্ধ হয়ে মারা যান ৫৮ জন তীর্থযাত্রী। যার মধ্যে ২৫জন মহিলা ও ১৫ জন শিশুও ছিল।
এই ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা বাধে। দাঙ্গা চলেছিল তিনদিন। যদিও, বিক্ষিপ্ত সংঘর্ষ চলেছিল প্রায় পাঁচ মাস ধরে। সংঘর্ষে মারা যান ৭৯০ জন মুসলমান এবং ৫৮ জন হিন্দু (এই সংখ্যার মধ্যে গােধরায় মৃত ৫৮ জন নেই)। এছাড়া মারা যান ২০০ জন পুলিশ। পরিস্থিতি যখন শান্ত হয়ে এসেছে, তখন নতুন করে দাঙ্গার আগুন লাগাবার জন্য ২৪-০৯-২০০২ তারিখে ইসলামী সন্ত্রাসবাদীরা গান্ধীনগরের স্বামীনারায়ণ মন্দির অক্ষরধামে আক্রমণ চালিয়ে ২৯ জন হিন্দুকে হত্যা করে। সৌভাগ্য, এই ঘটনার পরে আর নতুন করে দাঙ্গা ছড়ায়নি। নরেন্দ্র মােদীর সরকার সামলে নিয়েছিল পরিস্থিতি।
বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার ট্রেন যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে দিয়ে। কোথাও এমন আক্রমণ হয়নি। কিন্তু এখানে কেন হল?
এই কাহিনির গুজরাট দাঙ্গা ও ঢারের জবাবে কেন্দ্রে আছে কুতুবউদ্দিন আনসারি নামে এক গুজরাটি মুসলমান। গুজরাটের দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষটিকে নিয়ে পশ্চিম বাংলার তৎকালীন খানদানী সেকুলার মুখ্যমন্ত্রী ও তার দল সিপিএম-এর নাট্যচর্চায়না ছিল ক্লান্তি, গলার জোরেনা ছিল ঘাটতি। আনসারিকে শুধু নেমন্তন্ন করেই ক্ষান্ত থাকেননি তারা। সিপিএম-এর ছাত্র-যুব সংগঠন রীতিমত লােকলস্কর নিয়ে মিছিল করে স্লোগান ফুকেতাকেহাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতায় আনল। খুব একচোট শ্রাদ্ধ হল নরেন্দ্র মােদীর আর গুজরাটের হিন্দুদের। আনসারির কান্নায় ভেঙে পড়া মুখের ছবি উঠতে থাকল খচাং খ, সেই ছবি ছড়াল বিশ্বময়। সেখানেই শেষ নয়। পরের অংশে শুরু হল ভাইফেঁটা দেওয়ার ধূম। কিন্তু দুঃখের কথা, বেশিদিন চলল না এই নাটক। আনসারি বােধহয় বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে নিয়ে নাট্যচর্চার পশ্চাতের ধান্দাবাজিটি। ওদিকে খবর আসছিল গুজরাট থেকে কোনও সমস্যা নেই। প্রশাসনকে শক্ত হাতে ধরেছেন মােদীজী। কলকাতার যাত্রাদলে কেন আছাে ? অতএব দুদিনের ছুটি নিয়ে সেই যে পালালেন, আর এলেন না। এত আয়ােজনে তৈরি করা সম্প্রীতির নাটক মুখ থুবড়ে পড়ল।
কেন ট্রেনে আক্রমণ:
বছরের পর বছর ধরে হাজার হাজার ট্রেন যাওয়া-আসা করছে বিভিন্ন মুসলিম অধ্যুষিত এলাকার মধ্যে দিয়ে। কোথাও এমন আক্রমণ হয়নি। কিন্তু এখানে কেন হল?
একটি সুত্রে প্রকাশ - হিন্দুতীর্থযাত্রীরা গােধরা স্টেশনে মুসলিম ভেণ্ডারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার করেছিল, তার শাস্তি দিতে দল জুটিয়ে এই আক্রমণ। প্রশ্ন উঠতেই পারেঃ
- এমন কী দুর্ব্যবহার, যে লােক জুটিয়ে এমন ভাবে পুড়িয়ে মারা হল এতগুলাে মানুষকে?
- দেশে আর কোথাও কি কোনওদিন ভোর-যাত্রী গােলমাল হয়নি?
দ্বিতীয় একটি কারণ হিসেবে জানা যায় যে, সম্ভবত রান্নার স্টোভ ফেটে আগুন লাগে কামরার ভিতরে, ছড়িয়ে পড়ে সেই আগুন। এখানে প্রশ্নঃ কেরােসিন তেলে জ্বলে যে স্টোভ, তার আগুন এত তাড়াতাড়ি ছড়াল কীভাবে?
পেট্রল ছাড়া আগুন কি এভাবে ছড়াতে পারে? অবশ্যই না।তৃতীয় একটি কারণেব কথাও জানা যায়। তা হল, অযোধ্যায় ছিল বাবরি মসজিদ, যা ১৯৯২ সালে করসেবকরা ভেঙে দিয়েছিল। অযােধ্যা প্রত্যাগত তীর্থযাত্রীদের প্রতি আক্রোশের মূল কারণ হল সেটাই। কিন্তু আক্রোশ যতই থাক, এত দ্রুত সেই আক্রোশকে কাজে পরিণত করা হল কীভাবে? এখানেই আসে পূর্ব পরিকল্পনার কথা। এই পূর্ব পরিকল্পনা তত্ত্ব খারিজ করতে এবং মুসলিমদের ঘাড় থেকে সন্দেহের বােঝাটা নামাতে রেলমন্ত্রী হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই লালু প্রসাদ যাদব সুপ্রিম কোর্টের প্রাক্তণ বিচারপতি উমেশচন্দ্র ব্যানার্জিকে দিয়ে একটি তদন্তের ব্যবস্থা করলেন। জাস্টিস ব্যানার্জি তার রিপাের্টে বললেন, বাইরে থেকে আগুন লাগানাে হয়নি, আগুন সম্ভবত লেগেছিল ট্রেনের ভিতরে। স্টোভ ফেটে।
এছাড়াও তিনি কড়া ভাষায় সমালােচনা করলেন স্থানীয় পুলিশের তদন্তের। ২০০৬ সালে গুজরাট হাইকোর্ট রায় দেয় যে ব্যানার্জিকমিটি অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং ভারত সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত। ফলত বাতিল হয় ব্যানার্জি কমিটির রিপোের্ট। এরপর গুজরাট সরকার নিযুক্ত নানাবতী-শাহ কমিশন রিপাের্ট দেয় যে, ট্রেনে আগুন লাগানাে হয়েছিল বাইরে থেকে এবং তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ হয়েছে একেবারে পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মােতাবেক।
এছাড়াও তিনি কড়া ভাষায় সমালােচনা করলেন স্থানীয় পুলিশের তদন্তের। ২০০৬ সালে গুজরাট হাইকোর্ট রায় দেয় যে ব্যানার্জিকমিটি অবৈধ, অসাংবিধানিক এবং ভারত সরকারের এক্তিয়ার বহির্ভূত। ফলত বাতিল হয় ব্যানার্জি কমিটির রিপোের্ট। এরপর গুজরাট সরকার নিযুক্ত নানাবতী-শাহ কমিশন রিপাের্ট দেয় যে, ট্রেনে আগুন লাগানাে হয়েছিল বাইরে থেকে এবং তীর্থযাত্রীদের উপর আক্রমণ হয়েছে একেবারে পূর্ব পরিকল্পিত ষড়যন্ত্র মােতাবেক।
গােধরা পরবর্তী দাঙ্গা:
গােরার ভয়াবহ ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় মুখ্যত গুজরাটের শহরাঞ্চলে যথা আমেদাবাদ, গান্ধীনগর ইত্যাদি জায়গায় হিন্দু-মুসলিম দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। আগেই বলেছি, মাত্র তিনদিনের মধ্যে ঘটনা নিয়ন্ত্রণে আসে। কিন্তু কংগ্রেস ও তার মিত্র তথাকথিত সেকুলারদের অভিযােগ, দাঙ্গার সময় হিন্দু দাঙ্গাকারীদের মদত দিয়েছিল পুলিশ ও প্রশাসন। প্রশাসন মানে নরেন্দ্র মােদী। অতএব তাকে অভিযুক্ত করা হল।আর এই কারণেই সেকুলারদের বক্তব্য - এই দাঙ্গা সরকারি মদতপুষ্ট গণহত্যা বা Genocide। যার আভিধানিক অর্থ হল, পরিকল্পিতভাবে কোনও জনগােষ্ঠী বা জাতিকে ধ্বংস করা। জেনােসাইডে মৃত্যু ঘটে সম্পূর্ণ একতরফাভাবে, বিনা প্রতিরােধে। যেমন ঘটেছিল হিটলারের হাতে ইহুদিদের। যেমন ঘটেছিল নােয়াখালিতে মুসলমানদের হাতে হিন্দুদের। গুজরাট দাঙ্গা কি এই সংজ্ঞাতে পড়ে?
এখানে ২৫৪ জন হিন্দু মারা গেছে, ২০০ জন পুলিশ মারা গেছে, বাড়িঘর জ্বালাননা ও অন্যান্য অত্যাচারও একতরফা নয়। বরং বলা যায় যে, ২০০২-এর গুজরাট দাঙ্গা নয়, ১৯৮৪-র শিখ হত্যা ছিল সেই অর্থে Genocide; কিংবা ১৯৪৬-এর অক্টোবর মাসের নােয়াখালি দাঙ্গা। যেখানে ৫০০০০ হিন্দুকে হত্যা করা হয় এবং গােটা নােয়াখালিকে প্রায় হিন্দুশূন্য করে ফেলা হয়। Genocide দিয়ে শুরু হয়েছিল ১৯৪৬-এর ১৬ আগষ্টের দাঙ্গাও। তবু গুজরাটের ক্ষেত্রে ব্যবহার হল এই অভিধা এবং এদেশের আগমার্কা আমেরিকা-বিদ্বেষী (কমুনিস্ট) এম.পি.-রা অন্যান্য সেকুলার এম.পি.-দের সঙ্গে মিলে ৬৫ জনের স্বাক্ষর সম্বলিত এক কাতর আবেদন পাঠাল মার্কিন প্রেসিডেন্টের কাছে – দয়া করে মােদী নামের এই ঘাতকটিকে যুক্তরাষ্ট্রে পা রাখতে দেবেন না। সম্প্রতি এই চিঠির বিষয় ফাঁস হতে বিপ্লবীপ্রবর সীতারাম ইয়েচুরি তার সই জাল হয়েছে বলে বিপ্লবীয়ানা দেখাতে গিয়েছেন বটে, কিন্তু তার সিপিআই সহযােগী এমপি আজিজ পাশাজল ঢেলে দিয়েছেন এই বলে যে, সীতারাম সই করেছিলেন তারই সামনে। আর স্বাক্ষর সংগ্রহের উদ্যোগ যাঁর সেই নির্দল এম পি মহম্মদ আদিব বলেছেন – জাল মনে হলে কোর্টে যান ইয়েচুরি। সে সাহস তার হয়নি।
কারণ, ইতিমধ্যে আমেরিকার ফরেন্সিক দফতর জানিয়েছে, কোনও সই-ই নকল নয়, সব আসল। থাক সে কথা। আমরা আসি দাঙ্গা এবং প্রশাসনের যােগসাজসের অভিযােগের বিষয়ে। কেননা, মনে আর মুখে কখনও এক হয় না কমুনিস্টরা। বাঙালি ছাড়া কে আর এত ভাল করে জানে একথা?
কারণ, ইতিমধ্যে আমেরিকার ফরেন্সিক দফতর জানিয়েছে, কোনও সই-ই নকল নয়, সব আসল। থাক সে কথা। আমরা আসি দাঙ্গা এবং প্রশাসনের যােগসাজসের অভিযােগের বিষয়ে। কেননা, মনে আর মুখে কখনও এক হয় না কমুনিস্টরা। বাঙালি ছাড়া কে আর এত ভাল করে জানে একথা?
পুলিশ ও প্রশাসনের ভূমিকা:
- যদি হিন্দু দাঙ্গাকারীদের সঙ্গে যােগসাজস থাকে, তবে এত হিন্দু মারা গেল কেন?
- এত পুলিশ নিহত হল কেন?
বরদারাজন কমিটি জানিয়েছে, হিন্দুদের বেশির ভাগ নিহত হয়েছে পুলিশের গুলিতে।
- এটা কি পুলিশের মদত দেওয়া প্রমাণ করে?
- তিন দিনের মধ্যে দাঙ্গা থেকে যাওয়া কি প্রমাণ করে যে প্রশাসন নিষ্ক্রিয় ছিল?
গুজরাত সরকার তাে ২৮-০২-২০০২ তারিখেই সৈন্য নামিয়েছিল দাঙ্গা দমনে। সেটা তাহলে কী? এই প্রসঙ্গে উল্লেখ করা দরকার: দাঙ্গা থামাতে উদগ্রীব মােদীজী ব্যাপক হারে হিন্দু-মুসলিম নির্বিশেষে দাঙ্গাকারীদের গ্রেফতারের নির্দেশ দিয়েছিলেন। মােট ২৭,৭৮০ জনকে আটক করা হয়। তার মধ্যে ২১, ৭০০ জন হিন্দু, ৬০৮০ জন মুসলিম। সংখ্যাটি কী প্রশাসনের পক্ষপাত প্রমাণ করে?
প্রশাসনের পক্ষপাতে দাঙ্গা কী ভয়ংকর হতে পারে, তার অন্যতম বড় প্রমাণ ১৬ আগষ্ট ১৯৪৬-এর ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র দাঙ্গা। যার আর এক নাম গ্রেট ক্যালকাটা কিলিং। দেশভাগের দাবীতে মুসলিম লীগ নেতা মহম্মদ আলী জিন্নাহ ডাক দিয়েছিলেন এই ডাইরেক্ট অ্যাকশন ডে-র। কোনও রাখঢাক না করেই বলেছিলেন অস্ত্র হাতে নিতে। সােজাসুজি বলেছিলেন আমি এথিক্স নিয়ে আলােচনা করতে যাচ্ছি না। আমার হাতে একটা পিস্তল আছে আর আমি সেটা ব্যবহার করব। ব্রিটেনের নিউজ ক্রণিকল পত্রিকা তখন বলেছিল – জিন্নাহ ধর্মযুদ্ধ চাইছেন। এবং ধর্মযুদ্ধ হয়েছিল। মুখ্যমন্ত্রী ছিলেন সুরাবর্দী।
মাত্র তিনদিনের দাঙ্গায় সরকারী হিসেবেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৪০০০। বেসরকারী হিসেবে সংখ্যাটা ২০,০০০ এর বেশি। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার ছিল নিহতদের শতকরা প্রায় আশি ভাগ হিন্দু। যদিও তখনকার কলকাতার মােট জনসংখ্যার শতকরা ৬৪ ভাগ ছিল হিন্দু এবং ৩৩ শতাংশ ছিল মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লীগ মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সমর্থনে ও ষড়যন্ত্রে হিন্দুরা হাজারে হাজারে নিহত হয়েছিল। কেবলমাত্র মেটিয়াবুরুজের লিচুবাগান এলাকার কেশােরাম রেয়ন মিলেই কয়েক হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ওড়িয়াদের একটা বিরাট সংখ্যা ছিল। এই প্রসঙ্গে আর একটা ব্যাপারও উল্লেখ্য।
মাত্র তিনদিনের দাঙ্গায় সরকারী হিসেবেই মৃতের সংখ্যা ছিল ৪০০০। বেসরকারী হিসেবে সংখ্যাটা ২০,০০০ এর বেশি। সবচেয়ে আশ্চর্য ব্যাপার ছিল নিহতদের শতকরা প্রায় আশি ভাগ হিন্দু। যদিও তখনকার কলকাতার মােট জনসংখ্যার শতকরা ৬৪ ভাগ ছিল হিন্দু এবং ৩৩ শতাংশ ছিল মুসলমান। সংখ্যাগরিষ্ঠ হওয়া সত্ত্বেও মুসলিম লীগ মুখ্যমন্ত্রী প্রকাশ্য সমর্থনে ও ষড়যন্ত্রে হিন্দুরা হাজারে হাজারে নিহত হয়েছিল। কেবলমাত্র মেটিয়াবুরুজের লিচুবাগান এলাকার কেশােরাম রেয়ন মিলেই কয়েক হাজার হিন্দুকে হত্যা করা হয়। এদের মধ্যে ওড়িয়াদের একটা বিরাট সংখ্যা ছিল। এই প্রসঙ্গে আর একটা ব্যাপারও উল্লেখ্য।
সেটা হল দাঙ্গার সময় নির্বাচন। ১৬ আগষ্ট ১৯৪৬ ছিল রমজান মাস। এই বিশেষ মাসটি মুসলমানদের ইতিহাসে বড় গুরুত্বপূর্ণ। রমজান মাসে কোরাণের বাণীর প্রকাশ ঘটে। মহম্মদ নিজে পৌত্তলিকতার বিরুদ্ধে বদরের যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়েন ও জেতেন রমজান মাসে। মক্কার যুদ্ধ ও সেই যুদ্ধে জয়লাভও করেন মহম্মদ এই মাসটিতে। এহেন রমজান মাসে পঞ্চায়েত ভােট হলে ধর্মপ্রাণ মুসলিমদের বড় ক্ষতি হবে বলে কয়েকদিন আগে যারা সুপ্রিম কোর্টে অনুনয় বিনয় করেছিলেন, তাঁদের কথা শুনলে হাসি পায়। ইতিহাসের বিন্দুবিসর্গও তারা পড়েননি কিংবা পড়লেও মনে রাখেননি। রমজান মাসকে মুসলিমরা যুদ্ধের জন্য পবিত্র মাস মনে করে। প্রশাসনের পক্ষপাতদুষ্ট দাঙ্গার আর এক উদাহরন নােয়াখালি। যেখানে হিন্দু জাতিটাকে প্রায় নিশ্চিহ্ন করে ফেলেছিল মুসলিমরা।
সাম্প্রতিক কালের কথায় আসি। ১৯৬৯ সালে কংগ্রেসি জমানায় আরাে অনেক বড় মাপের দাঙ্গা হয়েছিল গুজরাটে। সেবার আড়াই হাজারের বেশি মানুষ মারা যায়, ৬৫ দিন কাফু জারী থাকে। ছ'মাসের বেশি সময় ধরে চলে দাঙ্গা। ১৯৮০, ১৯৮২ এবং ১৯৯০ থেকে ১৯৯২ বারবার দাঙ্গা বেধেছে গুজরাটে। এর মূলে আছে গুজরাটের ওপর সেই মধ্যযুগ থেকে নেমে আসা বিদেশী মুসলিম অত্যাচারের ভয়াবহ ইতিহাস। যার শুরু ৭১২ খ্রিস্টাব্দে মহম্মদ-বিন-কাশিমের আক্রমণের মাধ্যমে। তারপর থেকে মুঘল শাসনে, ইংরেজ শাসনে এবং স্বাধীনােত্তর পর্বে বারবার বেধেছে দাঙ্গা। দুটি ধর্মীয় সম্প্রদায়ের সম্পর্ক কোনও কালেই মধুর ছিল না। বরং বলা যায় মােদীর সরকার এই সম্পর্ক স্বাভাবিক করার ক্ষেত্রে অনেকটাই সফল। ২০০২-এর পর থেকে আজ পর্যন্ত গুজরাটের কোথাও হিন্দু-মুসলমানের একটি সংঘর্ষও হয়নি। নরেন্দ্র মােদীর উন্নয়নের কর্মকাণ্ড গুজরাটের মানুষকে সংকীর্ণ ধর্মীয় রাজনীতির বিষাক্ত মানসিকতা কাটিয়ে সুস্থ জীবনের পথে এগিয়ে দিয়েছে বলেই গুজরাট এখন দাঙ্গামুক্ত।
কিছু মিথ্যাচারের নমুনা:
মানবাধিকার নেত্রী তিস্তা শীতলবাদ ও বুকার পুরস্কারপ্রাপ্ত লেখিকা অরুন্ধতী রায় বেশ কিছু মুসলিম রমণীর নাম উল্লেখ করে অভিযােগ করেছিলেন যে এরা গণধর্ষণের শিকার। পরে তদন্তে জানা যায় এই মহিলাদের অনেকের বাস্তবে অস্তিত্বই নেই। সুপ্রিম কোর্ট নিয়ােজিত ও প্রাক্তন সিবিআই ডিরেক্টর রাঘবনের নেতৃত্বে গঠিত (স্পেশ্যালইনভেস্টিগেশন M SIT) তদন্ত শেষে ২০০৯ সালের এপ্রিল মাসে আদালতে পেশ করা রিপাের্টে বলে যে অত্যাচারের খবরকে বিপুলভাবে অতিরঞ্জিত হয়েছে মশলাদার হিসেবে পরিবেশন করার জন্যে।একটি ঘটনায় কওসার বানু নামে এক মহিলার ধর্ষণ ও ধর্ষণের পরে ধারালাে অস্ত্র দিয়ে পেট থেকে ভ্রণ বের করে আনার রােমহর্ষক বিবরণ দেওয়া হয়। দেখা যায়, ঘটনাটি ডাহা মিথ্যা। ২২ জন মহিলার এফিডেবিট জমা করেন শীতলবাদ খুন ও ধর্ষণের ভুক্তভােগী কিংবা প্রত্যক্ষদর্শী হিসেবে। এরা সবাই তদন্তের মুখে জানায় তঁারা কিছুই দ্যানে নি। তাদের এফিডেবিট তৈরি করেছেন তিস্তা এবং সবাইকে মিথ্যে সাক্ষ্য দিতেও শিখিয়ে পড়িয়ে দিয়েছেন তিনি। রাঘবনের নেতৃত্বে গঠিত SIT সুপ্রিম কোর্টের তিন বিচারপতি অরিজিৎ পাসায়েত, পি সথাশিবম (বর্তমান প্রধান বিচারপতি) এবং আফতাব আলমের ডিভিশন বেঞ্চকে এই সমস্ত রিপাের্ট দিয়েছে। কংগ্রেস এমপি এহসান জাফরি তার বাড়ির ছাদ থেকে গুলি ছুঁড়েছিলেন। এর পর তিনি আক্রান্ত হন ও নিহত হন।
তার স্ত্রী জাকিয়া :
জাফরি মামলায় টেনে আনেন মােদীজীকে। কেননা, তার হুকুমে নাকি পুলিশ নিষ্ক্রিয় ছিল এবং তার স্বামীকে বাঁচাতে আসেনি। SIT-এর তদন্তের ভিত্তিতে আদালত মােদীর বিরুদ্ধে ভােলা অভিযোেগ খারিজ করে দেয়। বিখ্যাত বেস্ট বেকারি কেস-এর প্রধান সাক্ষী ছিল জাহিরা শেখ। সাক্ষ্য দিতে গিয়ে সে বারে বারে বক্তব্য পাল্টেছে। তার বিরুদ্ধে ওঠা ঘুষ নেওয়ার অভিযােগের তদন্ত করতে সুপ্রিম কোর্ট কমিটি পর্যন্ত গঠন করে। তখন জাহিরার হয়ে শীতলবাদ আবেদন জানান যে গুজরাটে তার মক্কেলের প্রাণসংশয়, মামলা মহারাষ্ট্রে পাঠাননা হােক। আদালত সেই আবেদন মঞ্জুর করে। যদিও মহারাষ্ট্রে গিয়ে জাহিরা আদালতকে বলে যে তিস্তা দিদিমণি ও অন্যরা তাকে মিথ্যে সাক্ষ্য দেওয়ার চাপ দিচ্ছে। এরকম বহু ঘটনা আছে। বাস্তবে হয়েছে এক, আদালতে অভিযােগ আনা হয়েছে আর এক। এই মিথ্যাচারের নাম সেকুলারিজম, যদিও, যখন লাখে লাখে কাশ্মীরী হিন্দুরা মুসলমানদের অত্যাচারে ভিটেমাটি ছেড়ে মান-ইজ্জত খুইয়ে দিল্লি এবং দেশের অন্যত্র উদ্বাস্তু শিবিরে মনুষ্যেতর প্রাণীর জীবন নির্বাহ করে, তখন এই মানবদরদী মহাপুরুষদের ক্ষীণতম কণ্ঠও শােনা যায় না। তাদের মধ্যে বিন্দুমাত্র উৎকণ্ঠা দেখা যায় না। সেকুলারদের এইমহান রাজনীতির একটা ছােট্ট পরিচয় দেওয়ার লােভ সামলাতে পারছিনা।এই কাহিনির গুজরাট দাঙ্গা ও ঢারের জবাবে কেন্দ্রে আছে কুতুবউদ্দিন আনসারি নামে এক গুজরাটি মুসলমান। গুজরাটের দাঙ্গায় ক্ষতিগ্রস্ত এই মানুষটিকে নিয়ে পশ্চিম বাংলার তৎকালীন খানদানী সেকুলার মুখ্যমন্ত্রী ও তার দল সিপিএম-এর নাট্যচর্চায়না ছিল ক্লান্তি, গলার জোরেনা ছিল ঘাটতি। আনসারিকে শুধু নেমন্তন্ন করেই ক্ষান্ত থাকেননি তারা। সিপিএম-এর ছাত্র-যুব সংগঠন রীতিমত লােকলস্কর নিয়ে মিছিল করে স্লোগান ফুকেতাকেহাওড়া স্টেশন থেকে কলকাতায় আনল। খুব একচোট শ্রাদ্ধ হল নরেন্দ্র মােদীর আর গুজরাটের হিন্দুদের। আনসারির কান্নায় ভেঙে পড়া মুখের ছবি উঠতে থাকল খচাং খ, সেই ছবি ছড়াল বিশ্বময়। সেখানেই শেষ নয়। পরের অংশে শুরু হল ভাইফেঁটা দেওয়ার ধূম। কিন্তু দুঃখের কথা, বেশিদিন চলল না এই নাটক। আনসারি বােধহয় বুঝতে পেরেছিলেন, তাকে নিয়ে নাট্যচর্চার পশ্চাতের ধান্দাবাজিটি। ওদিকে খবর আসছিল গুজরাট থেকে কোনও সমস্যা নেই। প্রশাসনকে শক্ত হাতে ধরেছেন মােদীজী। কলকাতার যাত্রাদলে কেন আছাে ? অতএব দুদিনের ছুটি নিয়ে সেই যে পালালেন, আর এলেন না। এত আয়ােজনে তৈরি করা সম্প্রীতির নাটক মুখ থুবড়ে পড়ল।
হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির ভূমিকাঃ
'গুজরাট সমেত ভারতের সমস্ত দাঙ্গার পিহুনে হাত আছে হিন্দুত্ববাদী সংগঠনগুলির' — সেকুলারদের বড় প্রিয় অভিযােগ এটি।যদিও, যে স্বতঃস্ফূর্ততার সঙ্গে গুজরাটে হিন্দুরা জড়িয়ে পড়েছে দাঙ্গায়, তাতে পরিষ্কার যে, এই সংগঠনগুলির এ ব্যাপারে কোনও পূর্ব পরিকল্পনা ছিল না। বিভিন্ন তদন্ত সংস্থার দেওয়া রিপাের্টেও প্রতিষ্ঠিত এই ব্যাপারটা। তথাপি যত দোষ, নন্দ ঘােষ।
প্রশ্ন করা যায় মুসলিমদের সঙ্গে বৌদ্ধদের সংঘর্ষ চলছে চীনে, মায়ানমারে, মুসলিমদের সঙ্গে খ্রিস্টানদের দাঙ্গা চলছে নাইজিরিয়া, আলজিরিয়া, ফিলিপিনস, মরক্কো, চেচনিয়াতে। মুসলমানদের মধ্যে তাদেরই এক সম্প্রদায়ের সঙ্গে অন্য সম্প্রদায়ের (শিয়া-সুন্নী) ধর্মীয় দাঙ্গা চলছে পাকিস্তানে, ইরাকে, ইরানে এমনকি ভারতেও। চাকুরির প্রয়ােজনে লখনউতে থেকেছিলাম বেশ কিছুদিন। সেখানে থাকাকালীন শুনেছিলাম, লখনউতে হিন্দু-মুসলমানে দাঙ্গা হয় না। দাঙ্গা হয়নি কখনও। দাঙ্গা হয় মুসলমানদের দুই গােষ্ঠীতে – শিয়া আর সুন্নীতে। এই ২০১৩ সালের জুলাই মাসেও লখনউতে শিয়া-সুন্নী দাঙ্গা হয়েছে। এইসব দাঙ্গার পিছনে কাদের উস্কানি আছে?
বিগত ১২৫ বছরে ১৮৮০টি নানান মাপের দাঙ্গা হয়েছে ভারতে। কারা দিয়েছিল উসকানি? আর এস এসের জন্ম ১৯২৫ সালে, জনসঘের জন্ম ১৯৫১ সালে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের জন্ম ১৯৬৪ সালে আর বিজেপির জন্ম তাে এই সেদিন - ১৯৮০ সালে। তাহলে গত তেরশ বছর ধরে দাঙ্গার যে ইতিহাস আছে এদেশে, তার জন্য দায়ী কে বা কারা?
নরেন্দ্র মােদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় পরােক্ষভাবে যুক্ত থাকার শেষ অভিযােগও খারিজ হয়েগেছে আদালতে। আমেরিকা-ব্রিটেনসহ বহির্বিশ্বের দেশগুলিও বুঝতে পেরেছে মােদীবিরােধী তথা হিন্দুত্ব বিরােধী তথাকথিত সেকুলারদের গেমপ্ল্যানের পিছনের আসল রহস্য। তথাপি মিথ্যাচারীদের ‘হেট মােদী’ ক্যাম্পেন অব্যাহত। কিন্তু আজকের ভারতবাসী,বিশেষ করে আজকের যুবসম্প্রদায় আক্ষরিক অর্থে ‘মােদী সেনা’ হয়ে উঠেছে।
১৯৮৪ ও ২০০২: তুলনা-প্রতিতুলনাঃ
১৯৮৪ সালে ইন্দিরা গান্ধী হত্যার পর দিল্লিতে এবং বিক্ষিপ্তভাবে দেশের আরও কিছু জায়গায় (এমন কি আমাদের ধর্মনিরপেক্ষ কলকাতাতেও) শিখদের হত্যা করা হয় আর ২০০২ সালে গােধরায় ট্রেনে ৫৮ জন হিন্দুর হত্যার প্রতিক্রিয়ায় গুজরাটে দাঙ্গা বাধে। প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীকে হত্যা করেছিলেন তার দুজন শিখ নিরাপত্তাকর্মী আর ২০০০ মুসলিমের এক জনতা হত্যা করেছিল ৫৮ জন সাধারণ তীর্থযাত্রীকে। ইন্দিরা হত্যা একটি ব্যক্তিবিশেষের হত্যা এবং হত্যাকারীরা দলবদ্ধ হয়ে অংশগ্রহণ করেনি এই হত্যাকাণ্ডে, এটা ছিল তাদের ব্যক্তিগত সিদ্ধান্ত। পক্ষান্তরে, গােধরার হত্যাকাণ্ড এক সম্প্রদায়ের ওপর আর এক সম্প্রদায়ের সমষ্টিগত আক্রমণ। ইন্দিরা হত্যার মত ঘটনা পৃথিবীর অন্য দেশেও ঘটেছে যার মধ্যে সবচেয়ে উল্লেখযােগ্য মার্কিন রাষ্ট্রপতি জন কেনেডির হত্যা, পাশের দেশে বেনজির ভুট্টো হত্যা। কিন্তু আর কোথাও রাষ্ট্রনায়কের মৃত্যুতে শােকোন্মত্ত হয়ে হত্যাকারীর ভাই-বেরাদরদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে কচুকাটা করার কোনও উদাহরণ দেখা যায় নি। ১৯৮৪ সালের শিখ হত্যা স্বতঃস্ফুর্ত ছিল না, কোনও গণ-অভ্যুত্থানও (mass upsurge) ছিল না এর পেছনে। প্রিয় নেত্রীর মৃত্যুর বদলা নিতে কংগ্রেসী বীরপুঙ্গবরা অস্ত্র হাতে বেরিয়ে এসেছিল যেখানে সুযােগ পেয়েছে, সেখানে। সাধারণ মানুষের সায় ছিল না এই নরমেধ যজ্ঞে। অপর দিকে গুজরাটের হিন্দুরা দাঙ্গায় নেমেছিল spontaneous mass upsurge -এর মাধ্যমে। তবু আমাদের মহাজ্ঞানী সাংবাদিক প্রবরেরা, রাজনীতিক বিশ্লেষকরা ও সেকুলার চিন্তাবিদরা শিখহত্যার কুখ্যাত আসামী সজ্জন কুমার আর জগদীশ টাইটলারের পদত্যাগের প্রসঙ্গ তুলে দাবী করেছিল মােদীকেও পদ ছাড়তে হবে এবং বলেছিল দুটো ঘটনাই এক মাপের।১৯৮৪-র দাঙ্গায় ৩,০০০ শিখ নিহত হয়েছিলেন। গ্রেফতার হয়েছিল ৩,৮৭৪ জন দুষ্কৃতী। হত্যাকাণ্ড হয়েছিল একতরফা। কোনওখানেই শিখরা অস্ত্র হাতে নেন নি, পাল্টা দাঙ্গাও করেননি। প্রসঙ্গত, এটা বললে অন্যায় হবে না যে, ইন্দিরার হত্যাকারী যদি মুসলমান হত, তবে তলােয়ার নিয়ে রাস্তায় বেরােবার আগে হাজারবার ভাবতে হত কংগ্রেসিদের। প্রশাসনও চুপ করে বসে থাকতে পারত না। ফারাকটা গড়ে দিত ভােটের অঙ্ক। শিখ ভােটাররা সংখ্যার দিক দিয়ে নগণ্য বলেই কংগ্রেসের মস্তানদের মধ্যে মাতৃহারা সন্তানের ব্যথা বেশি করে বেজেছিল।)একজন হত্যাকারীও পুলিশের গুলিতে মারা যাননি। বরং প্রশাসনের নির্দেশে পুলিশ নিস্পৃহ হয়ে দেখে গেছে হত্যালীলা। তবু কংগ্রেসের প্রসাদভােগী বুদ্ধিজীবীদের মতে এটা গণহত্যা নয়। গণহত্যাহল গুজরাটের সংঘর্ষ। চমৎকার বিচার। আর শাস্তিদানের প্রসঙ্গ? আজ অবধি দিল্লি গণহত্যায় কোনও বড় মাথা শাস্তি পায়নি। যা পাওয়ার পেয়েছে চুনােপুঁটিরা। সিবিআইয়ের বদান্যতায় ৩০ বছর পরেও সজ্জন কুমার-টাইটলারদের ধরতে চোর-পুলিশ খেলা চলছে।
এপর্যন্ত দিল্পি কাণ্ডে ৭টি মামলায় মাত্র ১৬ জন অভিযুক্ত অল্প মেয়াদের সাজা পেয়েছে। আর গুজরাটের দাঙ্গায় ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মুসলিম আছে ৬৫ জন। হিন্দুর সংখ্যা ১৮৪। যার মধ্যে মােদীজীর মন্ত্রী ডাঃ মায়া কোদনানী ও বাবু বজরঙ্গীর মত নেতাও আছেন, যাঁদের ২৮ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবুও বলা হচ্ছে, মােদর রাজ্যে বিচার নেই, বিচার আছে দিল্লিতে। বিচার আছে দেগঙ্গা কাণ্ডের ধাত্রীভূমি এই বাংলাতে, যেখানে দাঙ্গার শিকার হয়েছে হিন্দুরা, তাই খবর ছাপা চলবে না। সেকুলার দিদিমণির নির্দেশে। সেকুলার মিডিয়ার সিদ্ধান্তে।
কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র শাকিল আহমেদ মশাই সম্প্রতি বলেছেন আই.এম (ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন) দলটির জন্ম হয়েছে গুজরাটের দাঙ্গার জন্য। নরেন্দ্র মােদী এর জন্য দায়ী।
এপর্যন্ত দিল্পি কাণ্ডে ৭টি মামলায় মাত্র ১৬ জন অভিযুক্ত অল্প মেয়াদের সাজা পেয়েছে। আর গুজরাটের দাঙ্গায় ২০১৩ সালের এপ্রিল পর্যন্ত ২৪৯ জনকে দোষী সাব্যস্ত করে দণ্ড দেওয়া হয়েছে। এদের মধ্যে মুসলিম আছে ৬৫ জন। হিন্দুর সংখ্যা ১৮৪। যার মধ্যে মােদীজীর মন্ত্রী ডাঃ মায়া কোদনানী ও বাবু বজরঙ্গীর মত নেতাও আছেন, যাঁদের ২৮ বছর করে কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তবুও বলা হচ্ছে, মােদর রাজ্যে বিচার নেই, বিচার আছে দিল্লিতে। বিচার আছে দেগঙ্গা কাণ্ডের ধাত্রীভূমি এই বাংলাতে, যেখানে দাঙ্গার শিকার হয়েছে হিন্দুরা, তাই খবর ছাপা চলবে না। সেকুলার দিদিমণির নির্দেশে। সেকুলার মিডিয়ার সিদ্ধান্তে।
এরা কার দালাল?
কংগ্রেসের অন্যতম সাধারণ সম্পাদক ও মুখপাত্র শাকিল আহমেদ মশাই সম্প্রতি বলেছেন আই.এম (ইন্ডিয়ান মুজাহিদিন) দলটির জন্ম হয়েছে গুজরাটের দাঙ্গার জন্য। নরেন্দ্র মােদী এর জন্য দায়ী। একই মত রাহুল ঘনিষ্ঠ কংগ্রেসের আর এক বিরাট মাপের দিগজ নেতা দিগ্বিজয় সিং এবং আরও অনেকের। চারদিক থেকে যখন প্রতিবাদ উঠল এই মন্তব্যের বিরুদ্ধে এবং কংগ্রেসের অনেকে দেখল একটু বাড়াবাড়ি করে ফেলেছে শাকিল,
তখন এক লাইনের একটি ছােট্ট ঘােষণা হল – শাকিলের বক্তব্যের সঙ্গে কংগ্রেস দল বা ভারত সরকার সহমত পােষণ করে না। তারা মনে করে আইএমের জন্ম পাকিস্তানের মদতে, তাদের কাজকর্মও ঘটে পাকিস্তানের মদতে। কিন্তু প্রশ্নটা হল, যে আইএম ভারত জুড়ে গত কয়েক বছর ধরে সন্ত্রাস চালাচ্ছে, হত্যা করেছে শতাধিক মানুষ, তৈরি করেছে এক ভয়ের বাতাবরণ তাদের উদ্ভবের জন্য মােদীকে দায়ী করে কাদের স্বার্থ রক্ষা করতে চাইছে কংগ্রেস?
দিল্লীর বাটলা হাউসের সংঘর্ষে যুক্ত সন্ত্রাসবাদীদের সােনার ছেলে’বলে সার্টিফিকেট দিয়ে কাদের দালালি করছেন দিগ্বিজয়? মৃত সন্ত্রাসীদের ছবি দেখে কেঁদে ভাসিয়েছিলেন শ্রীমতী সােনিয়া, আজমগড়ে তাদের বাড়ি গিয়ে সমবেদনা জানিয়ে এসেছিলেন রাজপুত্র রাহুল। অথচ কারও সময় হয়নি ওই সংঘর্ষে নিহত পুলিশের হাবিলদার মােহনাদ শর্মার বাড়িতে গিয়ে একটু শােকজ্ঞাপন করার। বরং রাজা দিগ্বিজয় দুনিয়ার শ্রেষ্ঠতম গােয়েন্দা কুকুরও হার মানে এমন দক্ষতায় গন্ধ না শুকেই অর্থাৎ ঘটনাস্থলে না গিয়েই এবং কোনও তদন্ত না করেই বলেছিলেন, পুলিশ মরেছে পুলিশের গুলিতে। তাঁর দল কংগ্রেস এবং সমাজবাদী পার্টি-বহুজন পার্টি ও কমুনিস্টদের দাবিতে ঘটনার সিবিআই তদন্তের নির্দেশ দেওয়া হয়েছিল।
কয়েকদিন আগে সিবিআই আদালত সেই মামলার রায় দিয়েছে। বলেছে –
‘সােনার ছেলে নয়, ওরা সবাই হার্ডকোর টেররিস্ট'। তবুদিগ্বিজয় গোঁছাড়েন নি। বলেছে মন্তব্য প্রত্যাহার করবেন না। স্বভাবতই প্রশ্ন জাগে, দেশের সিকিউরিটি নিয়ে, সন্ত্রাসবাদের মত স্পর্শকাতর বিষয়ে এরকম পাতলা কথা বলা এবং বলার দায়ে বক্তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নিয়ে বরং তাদের প্রমােশন দিয়ে কোন বার্তা দিতে চাইছে কংগ্রেস ও তার সেকুলার সাঙ্গপাঙ্গরা? বাতাটা কি এই নয় যে, মুসলিম ভােটের জন্য আমরা সবকিছু করতে পারি? বাতাটা কি এই নয় যে, ভারত যায় যাক, সিংহাসনটা থাক! আপনারাই বলুন, এরা কার দালাল?
শেষের খবর এবং শুরুর খবরঃ
নরেন্দ্র মােদীর বিরুদ্ধে দাঙ্গায় পরােক্ষভাবে যুক্ত থাকার শেষ অভিযােগও খারিজ হয়েগেছে আদালতে। আমেরিকা-ব্রিটেনসহ বহির্বিশ্বের দেশগুলিও বুঝতে পেরেছে মােদীবিরােধী তথা হিন্দুত্ব বিরােধী তথাকথিত সেকুলারদের গেমপ্ল্যানের পিছনের আসল রহস্য। তথাপি মিথ্যাচারীদের ‘হেট মােদী’ ক্যাম্পেন অব্যাহত। কিন্তু আজকের ভারতবাসী,বিশেষ করে আজকের যুবসম্প্রদায় আক্ষরিক অর্থে ‘মােদী সেনা’ হয়ে উঠেছে। তারা বুঝতে পেরেছে – ভীমরুলের চাকে ঘা মেরেছেন মােদী, তাই তাকে কামড়াতে এগিয়ে এসেছে স্বার্থান্বেষী, কুটিল, ছদ্ম-ধর্মনিরপেক্ষতার মুখােশের আড়ালে লুকিয়ে থাকা চরম সাম্প্রদায়িক শক্তিরা। নিজেদের শক্তিতে কুলােবে না বলে এরা এগিয়ে দিচ্ছে বিখ্যাত মানুষদেরও। আর এই বিখ্যাতদের এক-আধজন আহাম্মকের মত নিজের অধিকারের সীমাটপকে গিয়ে উল্টোপাল্টাবকতে শুরু করেছেন –‘আমি নরেন্দ্র মােদীকে প্রধানমন্ত্রী হিসেবে চাই না’ (অমর্ত্য সেন)। যদিও, সব ব্যাপারে ওস্তাদি করার ঝোকওয়ালা এই মানুষটির অনাহূত ভাষণে কান দেবার লােক বড় কম। আজকের যুবশ্রেণি জানে সরকারি ডােল (Government Spending) বাড়িয়ে দিয়ে গরীবকে গরীব হিসেবে বাঁচিয়ে রাখার অমতনিীতির চেয়ে শিল্প আর সার্বিক উন্নয়নের মাধ্যমে দেশের উন্নতির মােদী-মন্ত্র অনেক বেশী সমর্থনযােগ্য। এই মন্ত্রই ভারতের জীয়নকাঠি। মােদীর হাতে সেই ভারতের যাত্রা শুরুর অপেক্ষায় আছে ভারতের যুবশ্রেণি, ভারতের মানুষ।
আর এজন্যেই নতুন দিনের বজ্রনির্ঘোষ: “মিথ্যাচারীরা দূর হটো। ধান্ধাবাজরা নিপাত যাও। নরেন্দ্র মােদি স্বাগতম। ভারতীয় জনতা পার্টির সরকার স্বাগতম।”
Book: Gujrat riot Bangla Book
আরও পড়ুনঃ
- হিন্দুদের ওপরে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার ইতিহাস ও ভূমিকা | History and role of riots against Hindus
- লীলা রায় ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গায়, তিনি একাই ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার করেন
- দুই বাংলার তথাকথিত মুক্তমনা মানুষের কাছে সদা উপেক্ষিত এক বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ
- ভয়ঙ্কর লক্ষ্মীপূজো (নোয়াখালি দাঙ্গা ) ১৯৪৬ | Terrible Lakshmi Puja (Noakhali Riots) 1946
- ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে ১ মাসে ৫০ লক্ষ হিন্দু বিতাড়নের নৃশংস ইতিহাস | হিন্দু গণহত্যা | History | Hindu expulsion
- নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী