ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ | Bharatkeshari Shyamaprasad
ভারতকেশরী শ্যামাপ্রসাদ | Bharatkeshari Shyamaprasad
"শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যুতে ভারতের কি ক্ষতি হয়েছে জানিনা ; বোধহয় বিশেষ কিছুই নয়। ভারতীয় রাজনীতি আজকাল যেমন দেখছি তাতে মনে হয় শ্যামাপ্রসাদ কোন ছার চল্লিশ কোটি ভারতবাসী নিকেশ হয়ে এক জহরলাল বেঁচে থাকলেই সে রাজনীতি কৃতার্থ হয়ে যাবে। তবে আমাদের, মানে পাকিস্থানী হিন্দুদের মধ্যে যারা ভারতে গেছেন বা যাবার প্রতীক্ষায় দিন গুনছেন, তাদের কাছে শ্যামাপ্রসাদের মৃত্যু এক অপূরণীয় ক্ষতি হিসাবেই দেখা দিয়েছে। দেশ স্বাধীন হবার পর থেকে পাকিস্থানী হিন্দুদের জন্য যতটুকু দরদ ভারত দেখিয়েছে তা ঐ এক শ্যামাপ্রসাদের জন্যই। পাকিস্থানী হিন্দুদের নিশ্চয়ই ভারত বা শ্যামাপ্রসাদের দিকে তাকিয়ে থাকা উচিত নয়। কিন্তু ভিটেমাটি যখন ছেড়ে যেতে হচ্ছে তখন তাকিয়ে না থেকেইবা উপায় কি? আর ভারতের কংগ্রেসী সরকারের পক্ষে শ্যামাপ্রসাদের মুত্যু তো লটারীতে টাকা পাওয়ার মতই এক লাভের কারণ হয়েছে। পার্লামেন্ট এবং বাইরে বিরোধিতা দুর্বল হয়েছে, উদ্বাস্তদের নিয়ে ছিনিমিনি খেলবার অবাধ সুযোগ হয়েছে। আজ মাইগ্রেশন সার্টিফিকেট বন্ধ করে দিয়ে পূর্ববঙ্গ থেকে উদ্বান্ত আসা বন্ধ করে দিলেও বাধা দেবার কেউ নেই। জহরলাল বা তার সাগরেদরা চুপে চাপে হরির লুট দিয়েছিলেন কিনা তা অবশ্য জানা যায় নি, তবে স্বস্তির নিশ্বাস যে ছেড়েছিলেন তাতে কোন ভুল নেই। এক শ্যামাপ্রসাদ অতবড় খানদানী কংগ্রেসী সরকারকে যতখানি কাবু রাখতেন, সে অতি অদ্ভুত ব্যাপার। পৃথিবীর অন্য কোন দেশে এ ধরণের নজির আছে কিনা, জানা নেই। এ ব্যাপারটি অবশ্য সম্ভব হ'ত এই জন্যেই যে ঐ কংগ্রেস এবং জহরলালের খানদানী ব্যাপারটা ছিল একেবারেই ফাঁপাবস্তু।
তাই, তাদের শায়েস্তা রাখতে এক শ্যামাপ্রসাদই ছিলেন যথেষ্ট। শ্যামাপ্রসাদের জনপ্রিয়তাই ছিল জহরলালের জন অপ্রিয়তার মাপকাঠি।"
স্বাধীনতার পর কয়েক বছর অতিক্রান্ত হয়েছে। লোকসভা অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তান থেকে আগত উদ্বাস্তু হিন্দুদের দুঃখ দুর্দশা নিতে আবেগ ঘন বক্তৃতা রাখলেন সার ও রসায়ন মন্ত্রকের ভারপ্রাপ্ত মন্ত্রী ড. শ্যামাপ্রসাদ মুখোপাধ্যায়। জবাবী ভাষণে কটাক্ষ ছুঁড়ে সর্দার প্যাটেল বলেন,''বাঙ্গালী শুধু কাঁদতেই জানে।" যেন,৮০% হায়েনা কবলিত জনপদে ২০% মানুষকে ছেড়ে এলে,তাদের হো হো করে হাসা উচিত!! এই ক্রন্দনরত উদ্বাস্তু বাঙ্গালীর জন্য যতটুকু দরদ ছিল, তা একা ওই শ্যামাপ্রসাদের। রংপুর নিবাসী সুনীল বাবুর মত পূর্ব বঙ্গীয়দের অনেকেই সেসব বৃত্তান্ত জানতেন। 'আপনি সব চাকরী বাঙ্গালীদের দিয়ে দিচ্ছেন,' নেহেরুর প্রশ্নের জবাবে শ্যামাপ্রসাদ শান্ত অথচ দৃঢ়কণ্ঠে বলেছিলেন,'যোগ্য মনে করেছি। তাই দিয়েছি।' শ্যামাপ্রসাদ বাঙ্গালীকে যোগ্য মনে করেছিলেন। কিছু তাকে তার যোগ্য সন্মান আমরা দিতে পেরেছি? সন্মান তো দূরঅস্ত, কতটুকুই বা চিনি তাকে? রাজনৈতিক বাইনারীর উর্দ্ধে উঠে বাঙ্গালী কবে তার পরিত্রাতাকে নিয়ে বিস্তারিত চর্চা করবে? উত্তর অজানা।
যেসব বৃহৎ বাঙ্গালী 'বাঙ্গালী বঞ্চিত' মর্মে প্রায়শই দিল্লির দিকে চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দেওয়ার কথা বলেন, নেহেরু সাম্রাজ্যকে একা হাতে কাঁপিয়ে দেওয়া বঙ্গসন্তান শ্যামাপ্রসাদ তাদের কাছে অচ্ছুৎ। বেনাপোল বর্ডারের ওপারের লবিকে নাখোশ করার সৎ সাহস তাদের নেই। তথাকথিত, অসাম্প্রদায়িক হওয়ার মোহ বড়ই ভয়ানক। কখনো কখনো তা নিজ সম্প্রদায়ের অস্তিত্বকেই মুছে ফেলে। বাঙ্গালী আজ আত্মবিস্মৃত। ক্ষমা করো হে, ভারতকেশরী......
- ১.শ্যামাপ্রসাদের ব্যর্থ বলিদান,শান্তনু সিংহ
- ২.কালীচরণ ঘোষের কনিষ্ঠ পুত্র শিবশংকর ঘোষের রচনা,"বাবাকে যেমন দেখেছি,"-দেশভক্তের চিঠি,কার্তিক অগ্রহায়ণ,১৪২১
- ৩. স্বাধীনতার আবোল তাবোল, সুনীল কুমার গুহ
- 1. Unsuccessful sacrifice of Shyamaprasad, Shantanu Singh
- 2. Kalischaran Ghosh's youngest son Shivshankar Ghosh's essay, "As I saw my father," - Patriot's letter, Kartik Agrahayan, 1421
- 3. Abol Tabol of freedom, Sunil Kumar Guha
