Translate

দূর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভেচ্ছা জানালো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি | News

দূর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভেচ্ছা জানালো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি


মানিকগঞ্জ জেলার হরিরামপুর উপজেলার, ভাদিয়াখোলা গ্রামের সার্বজনীন দূর্গা মন্দিরের নবনির্মিত প্রতিমা ভাঙচুর করেছে একদল ধর্মান্ধ উগ্রবাদী গোষ্ঠী।

মানিকগঞ্জের হরিরামপুর উপজেলায় একটি মন্দিরের প্রতিমা ভাঙচুর করেছে দুর্বৃত্তরা। গত বৃহস্পতিবার রাতে উপজেলার ভাদিয়াখোলা বাজার সর্বজনীন দুর্গামন্দিরে প্রতিমা ভাঙচুরের এ ঘটনা ঘটে।

ঐ এলাকার সনাতন ধর্মালম্বীদের থেকে জানা যায় যে আসন্ন শারদীয় উৎসবকে কেন্দ্র করে প্রতিমাগুলো তৈরি করা হচ্ছিলো। কিন্তু রাতের আঁধারে একদল উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী এসে সেগুলো ভেঙে দিয়ে চলে যায়।


গত বছর কুমিল্লার নান্নুয়ার দীঘির পাড়ে একটি দূর্গা পূজার মন্ডপে ইকবাল হোসেন নামের এক ব্যক্তি রাতের আঁধারে হনুমানের কোলের উপর কোরান শরীফ রাখেন, আর সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে বাংলাদেশের ২২টি জেলায় সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর বর্বরোচিত আক্রমণ চালায় বাংলাদেশের ধর্মান্ধ মুসলমানরা৷ হনুমানের কোলে কোরান রাখার ঘটনা সারা বাংলাদেশে ছড়িয়ে পড়লে দেশের বিভিন্ন জায়গায় হিন্দুদের বাড়িঘর, মঠ, মন্দির ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে ভাঙচুর, হামলা ও অগ্নিসংযোগ চালায় বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের মধ্যে থাকা উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠী। গত বছরের সেই সাম্প্রদায়িক হামলায় নোয়াখালী জেলার চৌমুহনী এলাকায় ইসকন মন্দিরে ঢুকে ব্যপক তান্ডব চালায় ধর্মান্ধ সন্ত্রাসীরা। 


মন্দির থেকে টাকা, পয়সা, স্বর্ণালংকার এমনকি চালের বস্তা পর্যন্ত লুট করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা। 

এই উগ্রবাদী ধর্মান্ধ গোষ্ঠীর হাতে সেদিন মন্দির প্রাঙ্গণেই খুন হোন সেখানকার দু'জন ইসকন ভক্ত। তাদের নৃশংসভাবে কুপিয়ে মন্দিরের পুকুরে লাশ ফেলে দিয়ে পালিয়ে গিয়েছিলো উগ্রবাদীরা।


গত বছরের সাম্প্রদায়িক ঘটনাকে কেন্দ্র করে অনেক হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষকেই মিথ্যা তথ্য ছড়ানোর অভিযোগ তুলে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা দিয়ে জেলে ঢুকিয়ে দেয় দেশের সরকার।

গোটা দেশে সাম্প্রদায়িক বিষবাষ্প ছড়িয়ে দেয়ার পিছনের মূল হোতা ইকবাল হোসনকে পরবর্তীতে পুলিশ কক্সবাজার থেকে গ্রেফতার করেছিলেন। গ্রেফতারের পর পরিবারের তরফ থেকে ইকবালকে পাগল বলে দাবী করা হয়।


গত কয়েক বছর ধরেই দেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের উপর নানান অজুহাতে হামলা করে আসছেন দেশের সংখ্যা গরিষ্ঠ মুসলমান সম্প্রদায়ের মানুষ।

দেশের মুক্তবুদ্ধি চর্চার কিছু মানুষের সাথে বিষয়টা নিয়ে কথা বললে তারা বলেন যে আগে দূর্গা পূজার খবর পাওয়া যেত ঢাক, ঢোলের আওয়াজ শুনে, আর এখন ফেসবুকে মূর্তি ভাঙার কোনো ছবি দেখলেই বুঝতে পারি যে সামনে হিন্দুদের দূর্গা পূজা আসছে। হয়তবা এরই ধারাবাহিকতায় তারা মূর্তি ভেঙে জানান দিচ্ছে যে উগ্রবাদী মুসলমানরা বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বড় উৎসব শারদীয় দূর্গা পূজা হতে দিতে চান না।

দূর্গা প্রতিমা ভাঙচুরের মধ্য দিয়ে শারদীয় উৎসবের শুভেচ্ছা জানালো সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠি | News

প্রতি বছরই বাংলাদেশে হিন্দুদের দূর্গা পূজা আসলেই মূর্তি ভাঙার এক উৎসব শুরু করেন কিছু ধর্মান্ধ উগ্রবাদী মুসলমান। গত বছর সাম্প্রদায়িক হামলার আতঙ্কের রেশ কাটিয়ে উঠতে পারে নি বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষজন৷ তারা বলছে তারা এই বছরেও আতঙ্কে আছে যে তারা তাদের উৎসব শান্তিতে পালণ করতে পারবে কিনা।


সাম্প্রদায়িক হামলার ঘটনায় বাংলাদেশের সরকারের নিরব ভূমিকার কারণেই এধরনের হামলা বারবার ঘটছে বলে মনে করেন দেশের বিশিষ্ট মহল। এমনকি দেশের প্রধান বিরোধী দল বিএনপি সরাসরি অভিযোগ করছে যে এসব হামলার পিছনে ক্ষমতাসীন দলের কর্মীরা জড়িত। তারা বলেন বর্তমান সরকার দেশের সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা দিতে ব্যর্থ।


হরিরামপুর থানা-পুলিশ ও মন্দির পরিচালনা কমিটির সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, উপজেলার বাল্লা ইউনিয়নের ভাতিয়াখোলা বাজারে প্রায় ১৪ বছর আগে সর্বজনীন দুর্গামন্দিরটি স্থাপন করা হয়। এর পর থেকে ওই মন্দিরে দুর্গাপূজা পালন করে আসছেন স্থানীয় হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন। এবার দুর্গাপূজা উপলক্ষে ওই মন্দিরে দুর্গা, লক্ষ্মী, সরস্বতী, কার্তিক, গণেশ ও অসুরের প্রতিমা তৈরি করেন কারিগরেরা। বৃহস্পতিবার রাতের কোনো একসময় দুর্বৃত্তরা ওই মন্দিরে ঢুকে সরস্বতী, লক্ষ্মী, গণেশ ও অসুরের হাত ভাঙচুর করে। পরদিন শুক্রবার সকালে স্থানীয় ব্যক্তিরা মন্দিরে গিয়ে বিষয়টি জানতে পারেন। খবর পেয়ে সকালেই ঘটনাস্থলে যায় হরিরামপুর থানা–পুলিশ। এরপর দুপুর ১২টার দিকে সেখানে যান পুলিশ সুপার মোহাম্মদ গোলাম আজাদ খান।


জেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক তাপস রাজবংশী বলেন, প্রতিমা ভাঙচুরের ঘটনা নিন্দনীয়। এ ঘটনায় জড়িত ব্যক্তিদের গ্রেপ্তার ও শাস্তির দাবি জানান তিনি।


হরিরামপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সৈয়দ মিজানুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, গতকাল তাঁদের উপস্থিতিতে প্রতিমাগুলোর ভাঙা অংশ মেরামত করা হয়। ভাঙচুরের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের শনাক্ত করতে কাজ করছে পুলিশ। তদন্ত শেষে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url