ইরানে নারীদের হিজাব বিরোধী আন্দোলনে বিশ্ব ইসলামোফোবিয়ার শিকার | সুষুপ্ত পাঠক
সালমান রুশদির উপর হামলার পর যেসব স্বঘোষিত প্রথম শ্রেণীর লেখকরা রুশদিকে পশ্চিমা ইসলামোফোবিয়াবাদীদের টাকা খেয়ে স্যাটানিক ভার্সেস লেখার দাবী করেছিলো এবং রুশদির উপর হামলার জন্য তিনি নিজেই যে দায়ী বলেছিলো, তার মাস খানেক পরই ইরানে ‘ঠিকঠাক মত হিজাব না পরার কারণে’ মাহসা আমিনি নামের এক তরুণীকে ইসলামিক ইরানের ‘নৈতিক পুলিশ’ হত্যা করে ফেলে।
আসুন জেনে নেই 'ফোবিয়া' অর্থ কি?
ফোবিয়া অর্থ অহেতুক বা অমূলক ভয় যার কোন বাস্তবতা নেই। যেমন ধরেন কেউ মনে করে (তর্কের খাতিরে বলছি, বাস্তবে নয়), বাঙালিদের হিংস্র পশুদের মত দুপাশে লম্বা দুটো ছেদন দন্ত আছে যা দিয়ে তারা সামনে গেলেই কামড়ে দেয়। এটাকেই বলতে পারেন ‘বাঙালিফোবিয়া’। এর তো কোন বাস্তবতা নেই। এটা সত্য নয়। কিন্তু এটা বিশ্বাস করে আপনি একটা জাতিকে অপমান করছেন। বাঙালি হিসেবে সে নিজে অপমানিতবোধ করছে। এটি খুব খারাপ। এটাই ফোবিয়া।
ঠিক এই রকম দাবী মুসলমানরা করছে যে তারা ‘ইসলামোফোবির’ শিকার। অর্থ্যাত ইসলামকে দৈত্য দানব হিসেবে দেখিয়ে মুসলমানদের হেয় করা হয়, অহেতুক ভয় পাওয়া হয়। কিন্তু ইরান, ইন্দোনেশিয়ার আচেহ প্রদেশের শরীয়া পুলিশ, মালোয়েশিরার শরীয়া পুলিশ যারা জনগণ ঠিকঠাক পর্দা করছে কিনা, হালাল খাচ্ছে কিনা, রোজা রাখছে কিনা, বিধর্মীদের মত চলছে কিনা নজরদারী করে এবং এরকম কিছু দেখলেই হামলে পড়ে- এসব দেখে কি যে কারোর ‘ইসলামোফোবিয়া’ হতে পারে না?
৫৭টি মুসলিম দেশের কোথাও ইরানের নারীদের উপর বর্বরতার প্রতিবাদ হয়নি।
ওআইসি থেকে কোন নিন্দা জানানো হয়নি। ইরানের শরীয়া পুলিশ যা করেছে তা যে ইসলাম সম্মত নয় এমন কোন দাবী পৃথিবীর কোন আলেম ইসলামী স্কলার দেখাতে পারবে না। আবু বকর খিলাফতের সময় যাকাত অস্বীকারকারীদের উপর তরোয়াল হাতে অভিযান চালিয়ে তাদের দমন করেছিলো। অর্থাত ইসলামী অনুশাসন পালনের ব্যক্তি স্বাধীনতায় ইসলাম যে বিশ্বাস করে না সেটা আবু বককের এই অভিযান প্রমাণ করে।
More post: তাজ মহল নাকি তেজ মহালয়? Taj Mahal Story
এই যে ৫৭টি স্বঘোষিত মুসলিম দেশ নৈতিক পুলিশ ব্যবস্থার বিরোধীতা করল না, কেন করল না?
তার মানে এগুলি যে ইসলামী ব্যবস্থা এটা সবাই জানে। ইসলামের খিলাফতকালীন খলিফারা এরকম বাহিনী নিয়োজিত রাখত যাদের কাজই ছিলো কেউ ইসলাম অমান্য করছে কিনা দেখে রাখা। কোন মুসলমান নামাজ না পড়লে তাকে কৈফিয়ত দিতে হবে। যাকাত না দিলে কৈফিয়ত দিতে হবে। পর্দা না করলে শাস্তি পেতে হবে। এখানে ব্যক্তি স্বাধীনতার কোন বলাই নেই। এবার বলুন তো ‘ইসলামোফোবিয়া’ বলতে কি কিছু থাকতে পারে?
খোদ উদারমনা মুসলমানরাই ইসলামী শাসন ব্যবস্থাকে ভয় পায়! মুল্লাদের প্রতি বিদ্বেষ পোষণ করে। শরীয়া আইনের দাবীতে আতংকিত হয়। তাহলে ভারতের দেওবন্দে ‘গজওয়াতুল হিন্দ’ পড়ানো হলে কেউ যদি কথিত ‘ইসলামোফোবিয়াতে’ আক্রন্ত হয় তো সেটি কি অমূলক?
অস্ট্রিয়াতে হালাল শপ বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। তারা বলছে এগুলো সমাজে বিভাজন তৈরি করে। তাদেরকে নাম দেয়া হয়েছে ‘উগ্র ডানপন্থি’! যারা বিভাজনের বিরুদ্ধে কথা বলছে তারাই ‘উগ্র’! যারা হিজাবের বিরুদ্ধে কথা বলে কোপ খাচ্ছে তারা নিজেরাই নাকি কুপাকুপিকে নিজেদের দিকে ডেকে এনেছে! ইসলাম ধর্ম নিয়ে সমালোচনা মানেই ইসলাম বিদ্বেষ!
এদিকে শুধু বাংলা ভাষাতেই হিন্দু ধর্মকে নিয়ে চাঁছাছোলা ভাষায় সমালোচনা করা লেখা বইয়ের সংখ্যা হাজারখানেক হবে। এমনকি যে হিন্দু ব্যাকগ্রাউন্ডের কমিউনিস্ট বুদ্ধিজীবী লেখকরা রোজ ইসলাম বিদ্বেষে দেখে বুকে ব্যথা পান তারা নিজেরাও হিন্দু শাস্ত্র ঘেঁটে নারী বিদ্বেষী ও শ্রেণী বিদ্বেষ, অনার্যদের উপর আর্যদের আগ্রসান নিয়ে মোটা মোটা বই লিখেছেন। জাতিসংঘে ’ আছে, ‘হিজাব দিবস’ আছে কিন্তু নেই ‘হিজাব বিরোধী দিবস’। নেই ‘অমুসলিম ঘৃণা বিরোধী’ দিবস। নেই ‘শরীয়া শাসন বিরোধী’ দিবস। এমনকি মন্দিরে বলির বিরুদ্ধে পশু অধিকার রক্ষাকারী সংগঠনগুলির প্রকাশ্য প্রচারণা থাকলেও কুরবানীর সময় সংগঠনগুলি মুখ বুজে থাকে। সম্ভবত তারাও ‘ইসলাম বিদ্বেষী’ ট্যাগ খেতে ভয় পায়!
Written by: সুষুপ্ত পাঠক