Translate

কৃষ্ণা রানী সরকারের জীবনী | Football player Krishna Rani Sarkar

Football player Krishna Rani Sarkar,কৃষ্ণা রানী সরকারের জীবনী,History of krishna Rani Sarkar,Football player,Player,Letest sports news
Krishna Rani Sarkar

পোস্টের শুরুতেই লিখেন, "হরেকৃষ্ণ" চ্যাম্পিয়ন। কে এই Krishna Rani Sarkar

নামঃ   কৃষ্ণা রানী সরকার

মাতাঃ শ্রী নমিতা রানী সরকার

পিতাঃ শ্রী বাসুদেব সরকার

গ্রামঃ  উত্তর পাথালিয়া, ইউনিয়ন - নগদা শিমলা, গোপালপুর, টাংগাইলের মেয়ে।


বাবার অভাবের সংসারে খেয়ে না খেয়ে বেড়ে উঠতে লাগল "কৃষ্ণা"। সাধারণত ছোটকাল থেকেই মেয়ে শিশুরা পুতুল, হাঁড়ি-পাতিল, কুলা এসব নিয়ে খেলা করে থাকে। কিন্তু কৃষ্ণা ব্যস্ত থাকতো ভাইদের সাথে সারাদিন সাইকেল, ডাংগুলি আর ফুটবল নিয়ে। 


কৃষ্ণার এসব কাণ্ড দেখে গ্রামের লোকেরা নানা ধরণের কথা বলতে লাগল। কৃষ্ণার মা নীরবে হজম করতেন সে সব কথা। মেয়ের ইচ্ছেকে প্রাধান্য দিয়ে তাকে উৎসাহ যোগাতেন তিনি। কিন্তু স্বপ্নেও ভাবেননি মেয়ে তার এতদূর যাবে।

Football player Krishna Rani Sarkar,কৃষ্ণা রানী সরকারের জীবনী,History of krishna Rani Sarkar,Football player,Player,Letest sports news

কৃষ্ণা আজ স্থানীয়, জাতীয় এবং আন্তর্জাতিক অঙ্গনে নেতৃত্ব দিচ্ছে। কিন্তু এই অবস্থানে আসতে কত কাঠ-খড় তাকে পোড়াতে হয়েছে সে হিসেব পর্দার আড়ালেই রয়ে গেছে। সে যখন নিজ গ্রামে খেলতো তখন প্রতিবেশীরা বাড়ির উপরে এসে অকথ্য ভাষায় গালমন্দ করতো। তারা ভাবতো কৃষ্ণার সাথে মিশলে অন্য মেয়েরা নষ্ট হয়ে যাবে। (মূলত সমস্যা হচ্ছে মৌলবাদীদের ধারনা 'মেয়েরা ছোট পোশাক পড়ে খেলাধুলা করলে গুনহা হবে'।)


কৃষ্ণার মা যখন সফল জননী হিসেবে উপজেলায় শ্রেষ্ঠ পদক পাওয়ার পর জেলায় যাচ্ছিলেন তখন কৃষ্ণার মায়ের কাছে জানতে চাওয়া হয় 'কৃষ্ণার সাথে ঘটে যাওয়া আপনার সাথে সবচেয়ে আনন্দ দায়ক ও বেদনা দায়ক ঘটনাটি কী?'


মূহুর্তেই তাঁর চোখ থেকে টপটপ করে জল গড়িয়ে পড়তে লাগল। তিনি কান্না বিজড়িত কণ্ঠে বলতে লাগলেন, 

'একদিন প্রতিবেশীরা প্রচণ্ড বকেছিল অকথ্য ভাষায়। আমি সেদিন কিছুতেই সহ্য করতে পারছিলাম না। আমি রাগে, ক্ষোভে দৌঁড়ে গিয়ে বটি নিয়ে বসি। এরপর কৃষ্ণার বলটাকে কুটিকুটি করে কেটে ফেলি। কাটার পর যখন ওর কান্না দেখি তখন মনে হলো আমি আমার হৃৎপিণ্ড কেটে কুটিকুটি করেছি। ততক্ষণে মেয়ের চোখ থেকে এক নদী অশ্রু গড়িয়েছে। মা-মেয়ে জড়াজড়ি করে প্রচণ্ড কাঁদলাম। চোখের জল মুছে কাল-বিলম্ব না করে সেদিনই তাকে বল কিনে এনে দিলাম। বল হাতে পেয়ে মেয়ে আমার কী যে খুশি হলো তা ভাষায় অবর্ণনীয়'

Football player Krishna Rani Sarkar,কৃষ্ণা রানী সরকারের জীবনী,History of krishna Rani Sarkar,Football player,Player,Letest sports news

এই ঘটনার কিছুদিন পর শুরু হলো বঙ্গমাতা ফুটবল টুর্নামেন্ট। কৃষ্ণা খেলতে এলো উত্তর পাথালিয়া প্রাইমারি স্কুলের ছাত্রী হিসেবে সূতী ভি এম সরকারি মডেল পাইলট উচ্চ বিদ্যালয় মাঠে। বিদ্যালয়ের ক্রীড়া শিক্ষক জনাব গোলাম রায়হান বাপন-এর চোখে কৃষ্ণার নৈপুণ্যতা ধরা পড়ে। ততক্ষণে সারা গোপালপুরে কৃষ্ণা কৃষ্ণা জয়ধ্বনী উঠে গেছে। অত্র বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জনাব আব্দুল লতিফ কৃষ্ণার বাড়িতে যান। তারপর পরিবারের সাথে কথা বলে কৃষ্ণাকে সূতি ভি এম স্কুলে ভর্তি এবং খেলাধুলার অনুশীলনের দায়িত্ব নেন।


শুরু হলো কৃষ্ণার জীবনের নতুন অধ্যায়। দিনগুলো একদিকে যেমন ছিল আনন্দঘন অন্য দিকে তেমন চরম সংকটাপন্ন। কৃষ্ণার বাড়ি থেকে বিদ্যালয়ের দূরত্ব প্রায় ০৯ কিলোমিটার। ভোর পাঁচটা ৩০ মিনিটে উঠে খেয়ে না খেয়ে কৃষ্ণাকে যেতে হতো অনুশীলনের মাঠে। 

        

Football player Krishna Rani Sarkar,কৃষ্ণা রানী সরকারের জীবনী,History of krishna Rani Sarkar,Football player,Player,Letest sports news

দেশ আজ গর্বিত কৃষ্ণাদের মতো সন্তান পেয়ে। শুধু উনি নন স্বপ্না রানী, ইতি রানী, সাথী বিশ্বাসের মতো সনাতনী মেয়েরাও আছেন জাতীয় দলে। এছাড়া শুধুমাত্র একই স্কুলে পড়ুয়া ৬ থেকে ৮ জন মেয়েরাই জাতীয় দলে খেলছে। একই স্কুলের ৬ থেকে ৮ জন। 


যাদের মূল চালিকাশক্তি  ছিলেন তাদের উক্ত স্কুলেরই একজন শিক্ষক যিনি সবার বাড়িতে গিয়ে অনেক বুঝিয়ে এতদূর এনেছেন। এরপর রয়েছে চট্টগ্রামের চাকমা বা পাহাড়ি মেয়েরা। এই হলো দেশের মূল নারী ফুটবল দল। এদের নিয়েই এই অপরাজিত অর্জন। এই প্রত্যেকটি মেয়েদেরকেই সমাজের রক্তচক্ষু উপেক্ষা করতে হয়েছে, তাদের পরিবারকে উগ্র মৌলবাদী হুমকি, সমাজিক বহু কটুক্তি শুনতে হয়েছে। এসবের যোগ্য জবাব দিয়েছে এই মেয়েরা। সেই কটুক্তিকারীরাই এখন প্রশংসায় ভাসাচ্ছে তাদের।  এই সোনার মেয়েরা আমাদের গর্ব। এরা যেন হারিয়ে না যায়। 


এদের বেশিরভাগই দরিদ্র, এদের প্রেত্যকের জন্য বড় অংকের আর্থিক সাহায্য এবং উন্নত ফ্ল্যাট বরাদ্দ করে দেওয়া হোক। সারা বাংলার সম্মান এই মেয়েরা আজ দেশে ফিরছে, তাদের দেওয়া হবে রাজসিক সংবর্ধনা। স্যালুট রইলো সবার প্রতি। 


আমাদের ফেসবুক পেইজ

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url