Translate

রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ধর্ম সম্পর্কে মনোভাব কেমন ছিল? | ব্রহ্ম সমাজ | Rabindranath Tagore and Religion

Rabindranath Tagore
Rabindranath Tagore
তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর
তুমি তাই এসেছ নীচে।
আমায় নইলে ত্রিভুবনেশ্বর,
তোমার প্রেম হত যে মিছে।
লেখকঃ Shreyashi Bhattacharjee

দেখবেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের পূজা পর্যায় গানগুলোতে কোনও নির্দিষ্ট দেব দেবীর নাম আপনি পাবেন না। কারণ তিনি ছিলেন একেশ্বরবাদে বিশ্বাসী। তিনি ও তাঁর পরিবার ব্রাহ্ম ধর্ম মানতেন। এই ব্রাহ্ম ধর্ম(ব্রহ্মসমাজ) প্রবর্তন করেছিলেন রাজা রামমোহন রায়। যুক্তিবাদের প্রয়োগের উপর গুরুত্ব আরোপ করে তিনি হিন্দু ধর্ম ও সামাজিক রীতিনীতিগুলি সংস্কারে উদ্যোগী হয়েছিলেন। তিনি ভেবেছিলেন হিন্দুধর্ম পরিত্যাগ করে অন্য কোনো ধর্ম গ্রহণ করার আবশ্যকতা নেই। তিনি প্রতিটি ধর্মের বিশ্বজনীন নীতিশিক্ষাগুলি সংশ্লিষ্ট ধর্মের গোঁড়ামি, আনুষ্ঠানিকতা ও কুসংস্কারগুলি বাদ দিয়ে গ্রহণ করেন। ব্রাহ্মরা মূর্তি পুজো করতেন না, তাঁদের উপাস্য ছিল "নিরাকার ব্রহ্ম"। রামহোমন রায় মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথকে পৌত্তলিকতা বর্জনে অনুপ্রাণিত করেন। তারপর থেকেই তারা ব্রাহ্ম ধর্মে বিশ্বাসী।


কিন্তু পরবর্তীকালে দেশ বিদেশ ভ্রমণ করে হেগেল, ফ্রয়েড, এঙ্গেলস, কার্লমার্কস প্রমুখ আধুনিক চিন্তানায়ক ও দার্শনিকদের যুগান্তকারী চিন্তা-চেতনার দ্বারা প্রভাবিত রবীন্দ্রনাথ নতুন করে নিজেকে আবিষ্কার করার চেষ্টা করেন। দেখা যায়, রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর পরবর্তীকালে নিজেকে একজন খাঁটি হিন্দু বলে পরিচয় দিতে গৌরববোধ করেছেন কিন্তু একই সাথে তার ব্রাহ্ম ধর্ম বিশ্বাসকেও বর্জন করেননি। হিন্দুধর্ম ও ব্রাহ্মধর্ম যে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত অথবা সনাতন হিন্দুধর্মের আধুনিক সংস্করণ হলো ব্রাহ্মধর্ম প্রকারান্তরে এটাই যেন তিনি বলতে চেয়েছেন।


১৩৪১ সালের আশ্বিন সংখ্যা ‘প্রবাসী’ পত্রিকায় তিনি লেখেনঃ 
“আমি বলছি, যা কিছু মানুষের শ্রেষ্ঠ আদর্শের সঙ্গে মেলে তাই হিন্দুধর্ম। কেননা, হিন্দুধর্মে জ্ঞান, ভক্তি, কর্ম তিন পন্থাকেই ঈশ্বরের সঙ্গে যোগের পন্থা বলেছেন। খ্রিষ্টান ধর্মের চেয়ে হিন্দুধর্মের একটা জায়গায় শ্রেষ্ঠত্ব এই দেখি, হিন্দুধর্ম সন্ন্যাসবাদ ধর্ম নয়। হিন্দুধর্মকে বাইরের দিকে যে সব স্থূল আবরণে আবৃত করেছে, তাকে বাদ দিয়ে যে জিনিষটাকে পাই সেতো কোনো ধর্মের চেয়ে কোনো অংশে নিকৃষ্ট নয়। কেননা, এতে মানুষের হৃদয়, মন, আত্মা এবং কর্মচেষ্টা সমস্তকেই ভূমার দিকে আহ্বান করেছে। আমি এই জন্যেই হিন্দু নাম ছাড়তে পারিনে, ব্রাহ্মধর্মকে হিন্দুধর্ম থেকে পৃথক করতে পারিনে।”


কবিগুরুর ধর্ম সম্পর্কে মনোভাব বলতে গেলে আরও অনেক কিছু আসবে। সবকিছু লেখার মত জ্ঞান আর যোগ্যতা আমার নেই। কিছু ভুল হলে ধরিয়ে দেবেন দয়া করে।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url