যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা মাহাত্ম্য | Shri Kushal Baran Chakraborty
![]() |
ভাইফোঁটা মাহাত্ম্য |
যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটা সম্পর্কে ভবিষ্যপুরাণে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ধর্মরাজ যুধিষ্ঠিরকে বলেন:
কার্তিকে শুক্লপক্ষস্য দ্বিতীয়ায়াং যুধিষ্ঠির।
যমো যমুনয়া পূর্বং ভোজিতঃ স্বগৃহে তদা ।।
(ভবিষ্যপুরাণ: উত্তরপর্ব, যমদ্বিতীয়াব্রত, ১১.১৮)
"হে যুধিষ্ঠির, কার্ত্তিক মাসের শুক্ল পক্ষের দ্বিতীয়া তিথিতে যমরাজ যমুনা ভগিনীর দ্বারা প্রথমে ভোজন করেছিলেন তাই এই তিথির নাম যমা।"
দ্বিতীয়ায়াং মহোৎসর্গে নারকীয়াশ্চ তপির্তাঃ।
পাপেভ্যো বিপ্রমুক্তাস্তে মুক্তা সর্বে বিবন্ধনা।
ভ্রামিতা নর্তিতা স্বষ্টাঃ স্থিতা সর্বে যদৃচ্ছয়া।।
তেষাং মহোৎসবো বৃত্তো যমরাষ্ট্রে সুখাবহঃ।
ততো যমদ্বিতীয়া সা প্রোক্তালোকে যুধিষ্ঠির।।
(ভবিষ্যপুরাণ: উত্তরপর্ব, যমদ্বিতীয়াব্রত, ১১.১৯-২০)
"দ্বিতীয়া তিথির মহোৎসর্গে সে সকল নারকীয় প্রাণী ছিল তারা তৃপ্ত হত এবং পাপ বিমুক্ত হয়ে সকল বন্ধন রহিত হয়ে মুক্তিলাভ করত। তারা সকলে স্বচ্ছন্দে ভ্রমণ ও নৃত্য করত। তাদের যমরাজ্যে এক বড় মহোৎসব হয়েছিল। হে যুধিষ্ঠির তখন থেকে সেই তিথি যমদ্বিতীয়া নামে পরিচিত। "
আরও পড়ুনঃ ভাইফোঁটা বাঙালির জীবনের অন্যতম বড় উৎসবমুখর আবেগঘন পার্বণ
যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটায় স্নেহের সঙ্গে নিজ ভগিনীর হাতে অথবা ভগিনী বিবাহিতা হলে তার গৃহে ভোজন করতে হয়।
অস্যাং নিজগৃহে পার্থন ভোক্তব্যমতো বুধৈঃ।
স্নেহেন ভগিনীহস্তাদ্ ভোক্তব্যং পুষ্টিবৰ্দ্ধনম্ ।।
(ভবিষ্যপুরাণ: উত্তরপর্ব, যমদ্বিতীয়াব্রত, ১১.২১)
"হে পার্থ, বুদ্ধিমান পুরুষ এই তিথিতে নিজ গৃহে ভোজন করেন না। স্নেহের সঙ্গে নিজ ভগিনীর হাতে পুষ্টিকর খাদ্য গ্রহণ করেন।"
ভাইফোঁটায় ভগিনীকে বিধিপূর্বক সুবর্ণাদি অলংকার, বস্ত্র ইত্যাদি প্রদান করতে হয়। ভগিনী যেমন ভাইকে উত্তম পুষ্টিকর ভোজন দ্বারা তৃপ্ত করবে, তেমনি ভ্রাতাও উত্তম বিবিধ প্রকারের ভোজনাদি দ্বারা ভগিনীকে সৎকার করবে।
দানানি চ প্রদেয়ানি ভগিনীভ্যো বিধানতঃ।
স্বর্ণালংকারবস্ত্রাদ্যৈঃ পূজাসৎকারভোজ নৈঃ।।
(ভবিষ্যপুরাণ: উত্তরপর্ব, যমদ্বিতীয়াব্রত, ১১.২২)
"পুনরায় ভগিনীর জন্য বিধিপূর্বক দান প্রদান করতে হয়। তাকে সুবর্ণাদি অলংকার, বস্ত্র তথা উত্তম ভোজন দ্বারা পূজন এবং সৎকার করতে হয়।"
যমদ্বিতীয়া বা ভাইফোঁটায় সকল ভগিনীগণকে শ্রদ্ধা, ভালোবাসা, আদর এবং স্নেহ জানাতে হয়। যদি নিজের আপন ভগিনী না থাকে, তবে তাহলে কাকা-জেঠার কন্যার কাছ থেকে দ্বিতীয়া বা প্রথমা তিথিতে ভাইফোঁটা নিয়ে ভাইফোঁটা পরবর্তীতে সন্তুষ্টচিত্তে ভোজন করতে হয়। মামার কন্যার কাছ থেকেও দ্বিতীয়া তিথিতে ভাইফোঁটা গ্রহণ করে তার হাতে ভোজন করা যায়। যদি পিসি বা মাসীর কন্যার কাছ থেকে ভাইফোঁটা নিয়ে, পরবর্তীতে ভোজন করতে হয় তবে তা দ্বিতীয়াতে নয় তৃতীয়াতে নিতে হয়। ভগিনীর হাতের বিবিধ প্রকারের অন্নব্যঞ্জন ভাইয়ের জন্য আয়ু এবং যশবৃদ্ধিকারী। যেদিন যমরাজ তাঁর ভগিনী যমুনার কাছে ভাইফোঁটা নিয়ে, ভাইফোঁটা পরবর্তীতে যমুনার হাতে অন্নব্যঞ্জন ভোজন করেছিলেন, সেদিন থেকেই জগতে ভাইবোনের সম্পর্কে সৌহার্দের বৃদ্ধি ঘটে। তাই সে দিনটি ভগিনীর হাতে ভোজন ধন ও সুখপ্রদানকারী।
সর্বা ভগিন্যঃ সংপূজ্যা অভাবে প্রত্তিপত্তিগাঃ।
পিতৃব্য ভগিনী হস্তাৎ প্রথমায়াং যুধিষ্ঠিরা।।
মাতুলস্য সুতাহস্তাদ্ দ্বিতীয়ায়াং পুনৰূপ ।
পিতৃমাতৃস্বসারৌ মে তৃতীয়ায়াং তয়োঃ করাৎ।।
ভোক্তব্যং সহজায়াশ্চ ভগিন্যা হস্ততঃ পরম্।
সর্বাসু ভগিনীহস্তাদ্ ভোক্তব্যং বলবর্ধনম্ ।।
ধন্যং যশস্যামায়ুষ্যং ধর্মকামার্থবৰ্দ্ধনম্।
ব্যাখ্যাতং সকলং স্নেহাৎ সরহস্য ময়া তব৷৷
যস্যাং তিথৌ যমুনয়া যমরাজদেবঃ।
সম্ভোজিতো জগতি সত্ত্বরসৌহৃদেন।
তস্যাং স্বসুঃ করতলাদিহ যো ভুনক্তি ।
প্রাপ্নোতি বিওমথ ভোজ্যমনুত্তমং সঃ।।
(ভবিষ্যপুরাণ: উত্তরপর্ব, যমদ্বিতীয়াব্রত, ১১.২৩-২৭)
"সকল ভগিনীগণকে পূজন করতে হয়। যদি নিজ ভগিনী না থাকে তাহলে পিতৃব্য কন্যার কাছ থেকে দ্বিতীয়া বা প্রথমা তিথিতে ভোজন গ্রহণ করতে হয়। মাতুল কন্যার কাছ থেকেও দ্বিতীয়া ভোজন গ্রহণ করা যেতে পারে। পিসি বা মাসীর কন্যার কাছ থেকে তৃতীয়াতে ভোজন করা যেতে পারে। সেই খাদ্য আয়ু, যশবৃদ্ধিকারী পরম ধন্য। আমি এই গুপ্তকথা স্নেহ বশতঃ বললাম বা ব্যাখ্যা করলাম। যেদিন যমরাজ তাঁর ভগিনী যমুনার কাছে ভোজন করেছিলেন সেদিন থেকে জগতে সৌহার্দের বৃদ্ধি ঘটে। সেদিন ভগিনীর হস্তে ভোজন ধন ও সুখপ্রদানকারী।"