মুসলিম কান্ট্রি ইন্দোনেশিয়া সনাতন সংস্কৃতির দেশ | Muslim Country Indonesia is a country of Sanatan Culture
![]() |
বুদ্ধ পার্ক নং খাই থাইল্যান্ডে অবস্থিত |
সারা পৃথিবীতে এখনো একটি মুসলিম দেশ অবশিষ্ট রয়েছে যারা সনাতন সংস্কৃতিকে নিজের দেশে রাষ্ট্রীয়ভাবে বলবৎ রেখেছে। আর সেই দেশটি হল পৃথিবীর বৃহত্তম মুসলিম রাষ্ট্র ইন্দোনেশিয়া। ভারতের স্যাকুলার মানুষ যখন ধর্ম নিরপেক্ষতার নামে সে দেশে সনাতন সংস্কৃতিকে অচ্যুত মনে করে তখন ইন্দোনেশিয়া মুসলিম দেশ হয়েও মনে করে সনাতন সংস্কৃতিই তাদের পথ চলার পাথেয়। ভারতের পশ্চিম বঙ্গে স্কুল কলেজে রামায়ণ মহাভারত নিষিদ্ধ আর ইন্দোনেশিয়ায় মুসলিম শিক্ষকরা রামায়ণ মহাভারত পড়েন ভালো মানুষ হওয়ার জন্য। এখানেই ইন্দোনেশিয়ার মুসলমানদের সাথে ভারতীয় উপমহাদেশের মুসলমানদের পার্থক্য।
ইন্দোনেশিয়া তাদের প্রাক্তন সভ্যতার ইতিহাস ভুলে যায়নি। সেখানে বেশির ভাগ ইউনিভার্সিটিতে রামায়ণ ও মহাভারত বাধ্যতামূলক বিষয়। তাছাড়া প্রাথমিক বিদ্যালয়ে হিন্দু ও বৌদ্ধ ধর্মের ইতিহাস পড়ানো হয়। ইন্দোনেশিয়া মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ হলেও তারা তাদের অতীত ইতিহাসের জন্য গর্বিত।
ভারতে এখনো সনাতন সংস্কৃতির কোন ধারাকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠিত করতে হলে প্রথমেই প্রশ্ন উত্থাপিত হয় দেশটি ধর্ম নিরপেক্ষ এখানে কোন ধর্মীয় ভাবধারা সম্বলিত কোন ধারা বা নাম করন করা যাবেনা আর ইন্দোনেশিয়ায় মিলিটারি ফোর্সের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ দপ্তরের অফিসিয়াল মাসকট হল হনুমান জির ছবি। মহাভারতের যুগে হনুমান জির কীর্তি নিয়ে অনেক ঐতিহাসিক ঘটনা রয়েছে যা নিয়ে ভারতে তুচ্ছতাচ্ছিল্যের শেষ নেই অথচ ইন্দোনেশিয়া রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় হনুমান জিকে মনে রেখেছে।
![]() |
কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধের একটি ভাস্কর্য |
ভারতে নৌবাহিনীর প্রধানকে বলা হয় এডমিরাল আর ইন্দোনেশিয়ায় এই পদটির নাম লক্ষ্মণ প্রভু রামচন্দ্রের ভাই। ইন্দোনেশিয়ায় নতুন রাজধানীর নাম হতে চলেছে নুসন্ত্রা। এটি হিন্দু ধর্মে বিশ্বাসী রাজা গজ মাদারের দেয়া একটি নাম যা ইন্দোনেশিয়া তাদের অতীত ঐতিহ্যকে ফিরিয়ে এনেছে। ভারতে যা কল্পনা করা যায়না তা ইন্দোনেশিয়ায় অক্লেশে ভাবা যায় সেখানে ইসলাম কোন প্রতিবন্ধকতা নয়। ইন্দোনেশিয়ায় ইসলাম তাদের ধর্ম আর রামায়ণ তাদের সংস্কৃতি। সেখানে হিন্দু সংস্কৃতির ধারা বজায় রেখে মুসলিম শিশুদের নাম কৃষ্ণ প্রিয়া রাধা বিষ্ণু বিদ্যা রাখা হয়।
এখনো কোন মুসলিম দেশে হিন্দু দেবদেবীর প্রতিমা রাস্তার পাশে দেখতে পাওয়া যায়না বিশেষ করে পাকিস্তান বা বাংলাদেশে কেউ কল্পনাই করতে পারেনা কিন্তু ইন্দোনেশিয়ায় কল্পনা করা যায়। বিশ্বের বৃহত্তম মুসলিম সংখ্যা দেশের দূতাবাসের সামনে সে দেশের জাতির জনক সুকর্নর মূর্তি না বসিয়ে বসিয়েছে বৈদিক যুগের শিক্ষার দেবী সরস্বতীর প্রতিমা। মহাভারতের যুগে ভীমের পুত্র ঘটোৎকচ যিনি কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে প্রধান ভূমিকা পালন করেছিলেন সেই ঘটোৎকচের মূর্তি জাকার্তায় নির্মিত হয়েছে।
![]() |
দেবী সরস্বতীর একটি ভাস্কর্য |
বাংলাদেশের আমজনতা একথা জানতে পারলে ইন্দোনেশিয়াকে কাফেরদের দেশ হিসাবে চিহ্নিত করবে। যে দেশে ৮৭% মানুষ মুসলিম সে দেশে মুক্তচিন্তা আর সুপ্রাচীণ হিন্দু ঐতিহ্যের প্রতি সম্মান ও ধর্মীয় সহিষ্ণুতা বুঝাতে এই একটি উদাহরণই যথেষ্ট।
ভারতের পশ্চিম বঙ্গে প্রভু রামের নামে জয় শ্রীরাম বল্লে এটা গালির সাথে তুলনা করা হয়। সেখানে জয় শ্রীরাম ধ্বনি দিয়ে অনেকে গ্রেফতারও হয়েছিলেন। আর ইন্দোনেশিয়ায় রামায়ণের প্রভাব এতটাই গভীরে যে সেখানকার সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য রামায়ণের সংস্কৃতির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ। সেখানে বিদেশি অতিথিদের সম্মানে আয়োজিত অনুষ্ঠানে রামলীলা প্রদর্শন করা হয়। সেখানে ২০ হাজার টাকার নোটে গনেশের প্রতিমা। গনেশ সেখানে শিক্ষা কলা ও বিজ্ঞানের দেবতা হিসাবে পূজিত হয়। ইন্দোনেশিয়ার জাতীয় এয়ার লাইন্সের নাম গরুড়া ইন্দোনেশিয়া। গরুড় হল হিন্দু পুরানের বিষ্ণুর বাহন।
![]() |
ইন্দোনেশিয়ার বিশ হাজার টাকার নোট |
ইন্দোনেশিয়া ৬ষষ্ঠ থেকে ৭ম শতাব্দী পর্যন্ত একটি হিন্দু সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ ছিল। বর্তমানে ইন্দোনেশিয়ার যে জনসংখ্যা তার মাত্র ২% হিন্দু। তারপরও সেখানে সব কিছুতেই হিন্দু সংস্কৃতির ছাপ চোখে পড়ে। ভারতের দাক্ষিনাত্যের পরাক্রমশালী রাজারা জাভার দ্বীপ সমূহ জয় করে ভারতীয় শাসন ব্যাবস্থা ও সংস্কৃতির প্রচলন করেছিলেন। শুধুমাত্র ইন্দোনেশিয়া নয় কম্বোডিয়া,থাইল্যান্ড,বার্মা,মালয়েশিয়া,লাওস,ভিয়েতনাম এই পুরো অঞ্চলটিই ভারতের রাজত্বের অংশ হয়ে গিয়েছিল।যারফলে এই সব দেশে এখনো রামায়ণ-মহাভারতের অতীত ঐতিহ্যের মঠ মন্দির প্রাচীন ভাস্কর্য এবং সনাতন সংস্কৃতির নানান প্রচলিত উপাখ্যান দেখতে পাওয়া যায়। পরবর্তীতে ইসলামের আগ্রাসনের সময় ইন্দোনেশিয়া মুসলিম জনগোষ্ঠীর দেশ হিসাবে আত্মপ্রকাশ করেছিল। তখন সেখানেও ধর্মান্তরের ঘটনা ঘটেছিল কিন্তু তারা তাদের অতীত ঐতিহ্য ভুলে যায়নি।
![]() |
ইন্দোনেশিয়ার বালি দ্বীপের উবুদে পুরা তামন কেমুদা সরস্বতী মন্দির |
অতীত ঐতিহ্য মনে রেখে গত বছর ইন্দোনেশিয়ার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি সুকর্নোর মেয়ে সুকমাবতী সুকর্নপুত্রী পুনরায় সনাতন ধর্মে ফিরে এসেছেন এবং স্বর্গের মতো সুন্দর বালিদ্বীপে হিন্দু সভ্যতার লীলাভূমির মন্দিরে নিজেকে সমর্পিত করেছেন।বালিতে বসবাসকারীদের মধ্যে ৮৪.৫% হিন্দু। এবং সেখানে মন্দিরের আধিক্যের কারনে বালিকে বলা হয় দেবতাদের দ্বীপ বা শান্তির দ্বীপ। পৃথিবীর ইতিহাসে এ এক বিরল দৃষ্টান্ত। সেখানে কোন মুসলিম গিয়ে মন্দির ভেঙে মসজিদ বানানোর সাহস দেখাতে পারেনা।
ইন্দোনেশিয়াও মুসলিম দেশ পাকিস্তান বাংলাদেশ আফগানিস্তানও মুসলিম দেশ। এই বৈপরীত্য ইসলামকে শুধু বিদ্ধই করছে না সারা দুনিয়ার মানুষকে বুঝিয়ে দিয়েছে সনাতন সংস্কৃতি কেন এত মানবিক এবং গ্রহণযোগ্য।
![]() |
সুকর্নোর মেয়ে নিজ ধর্মে ফিরে আসার ছবি Writter: Narayan Debnath ট্যাগগুলিঃ মুসলিম কান্ট্রি ইন্দোনেশিয়া সনাতন সংস্কৃতির দেশ Muslim Country Indonesia is a country of Sanatan Culture,ইন্দোনেশিয়া মুসলিম দেশ,Hinduism in Indonesia। |