Translate

Real History: ভারতীয় উপমহাদেশে অমুসলিমদের উপর মুসলিম শাসকদের অত্যাচার

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি

কৃত্তিবাস কাশীরামঃ 

পাঠ্যপুস্তক থেকে মুঘলদের ইতিহাস মুছে ফেলেছে, উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথ সরকার। এছাড়াও বাদ দেওয়া হয়েছে ‘সেন্ট্রাল ইসলামিক ল্যান্ডস’, ‘কনফ্রন্টেশন অফ কালচারস’, ‘ইন্ডাস্ট্রিয়াল রেভলিউশন’ অধ্যায়গুলি। দ্বাদশ শ্রেণির নাগরিক বিজ্ঞানের বই থেকে বাদ দেওয়া হয়েছে 'স্নায়ুযুদ্ধ ও আমেরিকার উত্থান' পর্ব। তবে তুর্কি ও পাঠানদের ইতিহাস বহাল তবিয়তে রেখে দেওয়া হয়েছে।

ইসলামের ইতিহাস থেকে আমরা জানতে পারি যে,

বহিরাগত মুঘল দখলদাররা, ভারতীয় হিন্দুদের উপর যে অমানবিক অত্যাচার-নির্যাতন চালিয়েছে - সেই ইতিহাস ছাত্র-ছাত্রীদের জানা উচিত। এজন্য আমি মনে করি, মুছে ফেলা কোন সমাধান নয়। 


মুঘল সাম্রাজ্যের প্রতিষ্ঠাতা জহিরউদ্দিন মোহাম্মদ বাবরকে উজবেকিস্তান থেকে তাড়িয়ে দিয়ে ছিলেন তার এক চাচা। বাবরের আরেক চাচা ছিলেন কাবুলের শাসনকর্তা, তিনি বাবরকে আশ্রয় দিয়েছিলেন। বিশ্বাসঘাতক বাবর, তার আশ্রয়দাতা চাচাকে হত্যা করে, রাজত্ব ছিনিয়ে নিয়েছিলেন।


মহারানা প্রতাপ সিংহের পিতামহ রানা সংগ্রাম সিংহ, পাঠানদের অত‍্যাচারে অতিষ্ট হয়ে - বাবরের কাছে চিঠি লিখেছিলেন- ভারত আক্রমণ করার জন্য। সংগ্রাম সিংহ 'রানাসঙ্ঘ' নামে অধিক পরিচিত। রানাসঙ্ঘ তার একটি হাত ও চোখ হারিয়েছিলেন - বড় ভাইয়ের অতর্কিত আক্রমণে। পরবর্তী সময়ে রানাসঙ্ঘ যুদ্ধের ময়দানে তার একটি পা হারিয়েছিলেন। তা সত্ত্বেও রানাসঙ্ঘ ছিলেন ভারতভূমির অন্যতম শ্রেষ্ঠ যোদ্ধা। একটিমাত্র হাত ছিল তার সম্বল। ঢাল ধরার সুযোগ তার ছিল না। তবুও রানাসঙ্ঘ এক হাতে তরবারি চালিয়ে, একসাথে একাধিক সৈনিকের মোকাবেলা করতে পারতেন; আবার সেই সঙ্গে তীর-বৃষ্টিও ঠেকাতে পারতেন। কিংবদন্তী বৈষ্ণব সাধিকা মীরাবাঈ ছিলেন রানাসঙ্ঘের পুত্রবধূ।


রানাসঙ্ঘের প্রধান স্ত্রী মহারানী কর্ণবতী ছিলেন অপূর্ব সুন্দরী। তিনি রাখী পরিয়েছিলেন বাবর ও তার পুত্র হুমায়ুনের হাতে। বাবর ও তার সাঙ্গোপাঙ্গদের যৌ*ন-লালসার হাত থেকে নিস্তার পেতে - মহারানী কর্ণবতী পুরনারীদের নিয়ে আগুনে ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেছিলেন; ইতিহাসে যেটা 'জহরব্রত' নামে পরিচিত।

মুঘল সাম্রাজ্যের ইতিহাস

মুঘল সাম্রাজ্যের সর্বশেষ বাদশাহ ঔরঙ্গজেবের অনুগত শাসক ছিলেন রায়গড়ের শাসক ছাত্রপতি শিবাজী। প্রতিবেশী বিজাপুরের আদিলশাহী সালতানাতের বিরুদ্ধে শিবাজীর সাংঘাতিক যুদ্ধবিগ্রহ চলছিল। ঔরঙ্গজেব, খর্বাকৃতির শিবাজীকে রাজ দরবারে সভাসদদের পিছনে দাঁড়া করিয়ে অপমান করেছিলেন। শিবাজী এই অপমানের প্রতিবাদ করায়, গ্রেপ্তার হয়ে যান। পরে রাজপুতদের মধ্যস্থতায়, ঝামেলা মিটে যায়। 


ছত্রপতি শিবাজীর মৃত্যুর পর আর জ্যেষ্ঠ পুত্র ছত্রপতি শম্ভুজীর সঙ্গে ঔরঙ্গজেবের যথেষ্ট ভালো সম্পর্ক চলছিল। হঠাৎ করে ঔরঙ্গজেব একদিন শম্ভুজীকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করতে বলেন। শম্ভুজী ইস*লাম ধর্ম গ্রহণ করতে অপারগতা প্রকাশ করেন। এরপর ঔরঙ্গজেব জীবন্ত অবস্থায় শম্ভুজীর শরীর থেকে চামড়া তুলে নেন; দু'চোখ উপড়ে ফেলেন এবং বর্ণনাতীত কষ্ট দিয়ে শম্ভুজীকে হত্যা করেন।


শম্ভুজীর নির্মম হত্যাকাণ্ডের বদলা নিতে, তার ছোট ভাই রাজারাম মুঘলদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করেন। রাজারামের অকালমৃত্যুর পর, তার ১৭ বছর বয়স্কা স্ত্রী মহারানী তারাবাঈ - ছত্রভঙ্গ মারাঠাদের একত্রিত করেন এবং তরবারি হাতে যুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়ে মুঘলদের মাজা ভেঙ্গে দিয়েছিলেন। ধূর্ত ঔরঙ্গজেব তারাবাঈকে একান্তে আলোচনার নামে ডেকে, ছদ্মবেশী কমান্ডোদের দিয়ে তারাবাঈকে ঘিরে ফেলেছিলেন। কুশলী যোদ্ধা তারাবাঈ, তরবারি ছিনিয়ে নিয়ে - ঔরঙ্গজেবের গলায় ঠেকিয়ে, উল্টো তাকে জিম্মি করে ফেলেছিলেন।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url