Translate

কাশ্মীরের আর্য শাসক সম্রাট ললিতাদিত্য আর্য || The Aryan ruler of Kashmir was Emperor Lalitaditya Aryan

 

সম্রাট ললিতাদিত্য আর্য 


তিনি হলেন সম্রাট ললিতাদিত্য আর্য । তিনি ছিলেন বর্তমান কাশ্মীরের আর্য শাসক। ইনি সমগ্র আর্যাবর্তের সম্রাট হয়েছিলেন। ৪৭ সালে ভারতের স্বাধীনতা অর্জনের পর এসব ইতিহাস ভারতের বই পুস্ককে দেখা যায়নি। ভারতে আর্যদের গৌরব গাথার বিলীন হয়েছে মাত্র ১২০০ বছর পূর্বে।

সম্রাট ললিতাদিত্য মুক্তাপীড়, কর্কোট বংশের নৃপতি; ইনি সমগ্র আর্যাবর্তের সম্রাট হয়েছিলেন। খ্রিষ্টীয় অষ্টম শতাব্দীতে কাশ্মীরের এই ভারতীয় শাসক আফগানিস্তানের উত্তরভাগ থেকে শুরু ক’রে বঙ্গদেশ অব্দি ভারতবর্ষের বিস্তৃত অঞ্চল নিজের সাম্রাজ্যের পতাকাতলে আনতে সমর্থ হন। ইনি নিজের কয়েক দশকব্যাপী রাজত্বকালে সাফল্যের সঙ্গে দারদ, তুরস্ক প্রভৃতি বিদেশী বর্বর জাতিগুলির অনবরত আক্রমণের হাত থেকে ভারতবর্ষকে রক্ষা করেন এবং আদর্শ ক্ষত্রিয়োচিত শাসনব্যবস্থা প্রণয়ন ক’রে ধর্মকে সুরক্ষিত করেন। ইনিই কাশ্মীরের প্রখ্যাত মার্তণ্ড মন্দির নির্মাণ ও প্রতিষ্ঠা করবার কাজ শুরু করেন।

এই সম্রাটকে কেন্দ্র করেই কলহন নামের এক ঐতিহাসিক একটি অসামান্য পুস্তক রচনা করেছিলেন—রাজতরঙ্গিনী। রচনাকাল দ্বাদশ শতাব্দী। মোট ৭৮২৬টি শ্লোক, আট খণ্ডে বিভক্ত গ্রন্থটি নিছক ঐতিহাসিক সত্তাই নয়, সংস্কৃত ভাষার উপর কলহনের অনন্যসাধারণ দখলকেও নির্দেশ করে। ললিতাদিত্য নাম চীনের টাং(Tang) রাজবংশের রেকর্ড পাওয়া যায়, 'নিউ বুক অফ টাং (জিন তাং শু)' -তে একটি সংক্ষিপ্ত উল্লেখ খুঁজে পেয়েছেন ঐতিহাসিক রা।এই গ্ৰন্থে তাকে "Mu-to-pi" or "Mudubibi" (মুক্তাপির )হিসাবে উল্লেখ করা হয়েছে। একাদশ শতাব্দীতে, পার্সিয়ান কিংবদন্তি লেখক আল-বিরুনি , একজন কাশ্মীরি রাজার কথা বলেছিলেন, সম্ভবত ললিতাদিত্য ("মুতাই/Mutai " "pearl-feather /মুক্তো-পালক" )নামে অভিহিত করেছেন।


লালাদিত্য মুক্তিপিদার জন্ম হয় 699 খ্রিষ্টাব্দে। তৎকালীন কাশ্মীরের রাজা দুর্লভক প্রতাপাদিত্যের তৃতীয় পুত্র তিনি। কাশ্মীরের কর্কট কায়স্থ বংশের প্রতিনিধি। এই বংশটিই যুগ যুগ ধরে কাশ্মীরের রাজার সেনাবাহিনীতে যোগদান করে আসছিল। অর্থাৎ ক্ষত্রিয় বীরত্বের জন্য বিখ্যাত ছিল। কাশ্মীর নৃপতি তাঁদের শাক্যসেনা উপাধিতে ভূষিত করেছিলেন। কিন্তু এই বংশটি আদিতে কাশ্মীরের শাসন ক্ষমতাতে ছিলনা। লালাদিত্য মুক্তিপিদার এক পূর্বপুরুষ [যিনি সমসাময়িক রাজার সেনাপতি ছিলেন] দুর্লভ বর্ধন কাশ্মীর নৃপতির একমাত্র কন্যাকে বিয়ে করেন এবং কালক্রমে কর্কট বংশের প্রতিষ্ঠা করেন। লালাদিত্যের পিতা দুর্ভলক ওরফে প্রতাপাদিত্য এই দুর্লভ বর্ধনেরই নাতি ছিলেন। চন্দ্রপিদা (ওরফে বজ্রাদিত্য) এবং তারাপিদা (ওরফে উদয়াদিত্য), নামে তাঁর দুই সহোদরও ছিল। প্রথা অনুযায়ী জ্যেষ্ঠপুত্র চন্দ্রাপিদাই প্রথম সিংহাসনে বসেন। কিন্তু তাঁর আকস্মিক মৃত্যু হয়। তারপর ক্ষমতায় আসেন তারাপিদা। কিন্তু মাত্র দেড় বছরের মাথায় তাঁর হৃদরোগে মৃত্যু হয়। বলাই বাহুল্য এর পরেই সিংহাসনের বসেন লালাদিত্য।

কলহান এর বিবরণ অনুযায়ী ললিতাদিত্যের রাজত্বকাল 36 বছর, 7 মাস এবং 11 দিন অবধি ছিলো, তিনি বলেছেন যে ললিতাদিত্য শাসনকাল ছিলো 700-736 খ্রী: সময় পর্যন্ত তিনি শাসন করেছিলেন।তবে এটি সঠিক নয়, যেহেতু ললিতাদিত্যের পূর্বসূরি 720 খ্রিস্টাব্দে তাংয়ের রাজধানী চাং'আনে একজন দূত প্রেরণ করেছিলেন বলে জানা যায়। তাং রেকর্ড অনুযায়ী "তিয়ানমু" নামের উল্লেখ পাওয়া যায় উনি সম্ভবত তারাপিডা ছিলেন, যদিও কিছু পণ্ডিত তাকে চন্দ্রপীদা নামে চিহ্নিত করেছেন। তবে আধুনিক ঐতিহাসিক দের মতে ললিতাদিত্যের রাজত্বকালকে 724/25 থেকে 760 খ্রী: পর্যন্ত ছিলো বলে ধরা হয়ে থাকে।কলহনের মতে ললিতাদিত্য নিজেকে পৌরাণিক নাগ রাজা কর্কোট বংশের বংশধর বলে গর্ব করতেন।

পরিহসপুর, যা সাধারণত পরাশপুর নামে পরিচিত, এটি ভারতের জম্মু ও কাশ্মীর রাজ্যের বারামুল্লা জেলায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক স্থান। এটি প্রায় 700 খ্রিস্টাব্দে (কারো মতে 727 খ্রিস্টাব্দে) ঝিলাম নদীর ওপরে একটি মালভূমিতে ললিতাদিত্য মুক্তপেদী দ্বারা নির্মিত হয়েছিল। তিনি শ্রীনগর থেকে তাঁর রাজধানী স্থানান্তরিত করে পরীহসপুরে স্থানান্তরিত করেন।


কলহন ললিতাদিত্যকে বিশ্বজয়ী রাজা হিসাবে বর্ণনা করেছেন, যিনি তাঁর জীবনের বেশিরভাগ অংশ সামরিক অভিযানে ব্যয় করেছিলেন। তিনি ললিতাদিত্যের কর্মজীবনের নিম্নলিখিত বিবরণটি দিয়েছেন:
ললিতাদিত্য আবেদী (Antarvedi) দেশে আক্রমণ করেছিলেন, যার রাজধানী ছিল গাদিপুরায় (কন্যাকুব্জা/কনৌজ ), বিপ়ক্ষে রাজা যশোবর্মণ দীর্ঘ যুদ্ধের পরে তাঁর কাছে একটি শান্তি চুক্তির প্রস্তাব করেছিলেন। যশোবর্মণ এই চুক্তির শর্তাবলী তে সহ করেন ও একটি নথি আঁকেন, যার শিরোনাম ছিল "যশোবর্মণ ও ললিতাদিতির চুক্তি"। ললিতাদিত্যের মন্ত্রী মিত্রসরামণ শিরোনাম নিয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন এবং শিরোনামে যশোবর্মণের নামের আগে ললিতাদিত্যের নাম হওয়া উচিত বলে জোর দেন, দীর্ঘায়িত যুদ্ধ নিয়ে অসন্তুষ্ট ললিতাদিত্যের সেনাপতি মিত্রশারমনকে এই চুক্তি বিলম্বিত করার জন্য দোষ দিয়েছেন কিন্তু পরে ললিতাদিত্য নিজেই মিত্র শারমানের সাথে একমত ছিলেন । তিনি শান্তি আলোচনা ভেঙে যশোবর্মণকে "উৎখাত " করেন।এই পরাজয়ের ফলস্বরূপ, যক্ষোবর্মণ, যিনি ভকপতি এবং ভাবভূতির মতো শ্রেষ্ঠ দরবার কবিদের দ্বারা পরিবেষ্টিত হয়ে থাকতেন তারা এখন ললিতাদিত্যের সভাকবি হয়ে গেলেন। যমুনা নদী এবং কালিকা নদীর (সম্ভবত আধুনিক কালী নদী) মাঝখানে অবস্থিত কন্যাকুব্জের স্থান টি ললিতাদিত্যের নিয়ন্ত্রণে আসে।ললিতাদিত্য এখানে পাঁচটি নতুন অফিস প্রতিষ্ঠা করেছিলেন, যা শাহী ও অন্যান্য রাজকুমারদের দখলে দেন। কন্যাকুবজার দখল হবার পরে তিনি, গঙ্গা নদী অববাহিকা দিকে অগ্রসর হন, ললিতাদিত্য পূর্ব সমুদ্রের দিকে এগিয়ে যায়।

কনৌজ জয় করে ললিতাদিত্যের বাহিনী জয় করে নেয় কলিঙ্গ। তারপর ছুটে আসে গৌড়ের সীমানায়। ওই সময় গৌড়ের রাজা ছিলেন গোসাল নামের একজন। নানাবিধ আক্রমণে এমনিতেই পর্যুদস্ত তিনি। ললিতাদিত্যের বাহিনীর এই কঠিন আক্রমণ সামলানোর ক্ষমতা তাঁর ছিল না। একজন দুর্বল রাজার যা করণীয়, ঠিক তাই করেন তিনি। একপাল হস্তি ললিতাদিত্যের জন্য উপঢৌকন হিসাবে পাঠিয়ে সন্ধির প্রস্তাব পাঠান তিনি। ললিতাদিত্য এই সন্ধির প্রস্তাব মেনে নেন। গৌড়ের সীমানা থেকে ফিরে যান তিনি। এরপর তিনি মগধ ও আসাম জয় করেন। (গৌড় কাহিনী যেটা প্রচলিত আছে,ওই নিয়ে পরে আলোচনা করবো) পূর্ব সমুদ্র উপকূলে থেকে ললিতাদিত্য দক্ষিণাঞ্চলে চলে আসেন, সেখানে কর্ণাটকরা তাঁকে সাদরে আমন্ত্রণ করেন। দক্ষিণাঞ্চলের সার্বভৌম রাজ্যের এই সময়ে রত্ত নামে একজন কর্ণাটা রানী ছিলেন। তিনি বিন্ধ্য পর্বতমালার ললিতাদিত্য জন্য বাধা-মুক্ত রাস্তা তৈরি করে দেন, এবং তিন বিন্ধ্যবাসিনী (দুর্গা) দেবীর মতোই শক্তিশালী ছিলেন। এমনকি তাঁর মতো শক্তিশালী ব্যক্তিত্বও ললিতাদিত্যের কাছে মাথা নত করেছিলেন। দক্ষিণে, ললিতাদিত্যের সৈন্যরা তাদের ক্লান্তি ভুলে যায়, তারা নারকেল গাছের দ্রাক্ষারস পান করেন, কাবেরি নদীর তীরের মনোরম বাতাস উপভোগ করেন।কলহন এমনি তার গ্ৰন্থে উল্লেখ করেছেন।


এরপর ললিতাদিত্যের কোঙ্কন, দ্বারকা ও অবন্তীত হস্তসৈন্য দ্ধারা জয় করেন।রাত্রি বেলায় চাঁদের আলোআন্ধারিতে হাতি গুলো পাহাড়ের মত দেখাচ্ছিলো তাই দেখে অবন্তীত র সৈন্য বাহিনী ভয়ে যুদ্ধ ছেড়ে পালিয়ে যায়।দক্ষিণ রাজাদের পরাজিত করে ললিতাদিত্য অবন্তী থেকে উত্তরাপাঠ (উত্তর অঞ্চল) পর্যন্ত এলেন,যেখানে তিনি বেশ কয়েকজন শক্তিশালী রাজাদের সাথে যুদ্ধ করেছিলেন। তাঁর সেনাবাহিনী কম্বোজা রাজ্যে জয় করে, ওখানে র আস্তাবলে র ঘোড়াগুলি খালি করে দেয় (ভাল মানের ঘোড়াগুলির জন্য কম্বোজা দেশের সুনামের ছিলো)। তুহখাররা তাদের ঘোড়া ফেলে রেখে পালিয়ে যায়, পাহাড়ের পর্বতে আশ্রয় নিয়েছিলো। তিনি যুদ্ধে মুমমুনি (অনেক এর মতে আরবদের)তিনবার পরাজিত করেছিলেন। কলহনের বর্ননা অনুযায়ী গরুড়কে দেখার পর যেমন সাপ ছিদ্রে লুকিয়ে থাকে তেমনি ললিতাদিত্যে কে দেখার পর শত্রু পক্ষ্য ভয়ে আত্মগোপন করছে।


ললিতাদিত্য তাঁর বিজয় থেকে প্রাপ্ত প্রচুর সম্পদ নিয়ে কাশ্মীরে ফিরে আসেন। তিনি তাঁর পরিচারকদের জলধারা(জলন্ধর),লোহারা (লাহর)ও অন্যান্য দেশের রাজা হিসাবে নিযুক্ত করেন। কলহনের বর্ননা করেছেন ললিতাদিত্যের আদেশে তুর্কি ও সুলতান রা তাঁর প্রতি অনুগত দেখাবার জন্য ব্যাজ(তার ঈশান) প্রদর্শন করতে হয়েছিল । তুর্কি দের পিঠে বোঝা বা মোট বহন করতে বাধ্য করা হয়েছিল এবং তাদের দাসত্ব চিহ্নিত করে তার প্রতি অনুগত্য লাভ করার জন্য তাদের অর্ধেক মাথা নাড়া করে নতজানু করা হয়েছিল। মাটির মধ্য দিয়ে গমনকারী প্রাণীদের সাথে তাদের সাদৃশ্য বোঝাতে তাদের কে একটি লেজ পরিয়েছিলেন ললিতাদিত্যের। তিনি আক্রমণ করেছিলেন আরব দ্ধারা অধিকিত সিন্ধু রাজ্য এবং সিকাতা-সিন্ধুর রাজ্য জয় করেন তিনি।কলহন বলেছেন "বালির মহাসাগর" পেরিয়ে একটি বিশাল পতিত জমি (wasteland) পার করে কিছুদিন পরে, তিনি "উত্তরের সীমাহীন অঞ্চলগুলি" অভিমুখে যাত্রা করলেন, কারণ এই দেশগুলিতে (ভারতের) আগে কেউ পৌঁছায়নি, তার সেখানে ঘুরে দেখার আগ্রহ ছিল। এই অভিযানের সময়, তিনি তাঁর শক্তি পরীক্ষা করার জন্য দেবতা কুবেরের দ্বারা প্রেরিত অসুরদের সাথে লড়াই করে একাধিক দুঃসাহসিক কাজ করেছিলেন (কলহন মনে হয় আরবদের আফ্রিকান সৈন্য কথা বলছেন)।


এদিকে ললিতাদিত্যের মন্ত্রীরা যখন বেশ কয়েকদিন তাঁর সম্পর্কে কোনও খবর পেলেন না, তখন তারা তাঁকে খুঁজে বের করার জন্য একজন বার্তাবাহককে পাঠায়। এই বার্তাবাহক এই সংবাদটি দিয়ে ফিরে এলেন যে মহারাজ ফিরে আসতে চান না, তিনি তার মৃত্যুর পর্যন্ত সামরিক বিজয়ী হতে ব্যস্ত থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। তাঁর বার্তায় ললিতাদিত্য কীভাবে তার রাজ্য পরিচালনা করবেন সে সম্পর্কে রাজনৈতিক পরামর্শ দান করেছিলেন এবং তাঁর বড় পুত্র কুওয়ালাপিডাকে তাঁর উত্তরসূরী হিসাবে নিযুক্ত করার জন্য বলেছিলেন।পরে, ওনার অনুগামী রা জানিয়েছিলেন যে অতিরিক্ত -তু-তুষারপাতের ফলে অনার্য দেশে ললিতাদিত্য মারা গিয়েছিলেন। ওরা অনুগামী রা জানিয়েছেন যে তিনি যেকোনো মারাত্মক পরিস্থিতিতে নিজেকে স্থির রেখেছিলেন,কোনো কিছুই তাকে বিচলিত করতে পারেনি , কারণ তিনি একজন মহান রাজা থাকাকালীন সম্মানের সহিত এক রাজার মত মারা যেতে চেয়েছিলেন।

এম এ স্টেইন (১৯০০) যিনি প্রথম রাজরতঙ্গিনীকে ইংরেজিতে অনুবাদ করেছিলেন তিনি ললিতাদিত্যের যশোবর্মণের পরাজয় কে ঐতিহাসিক সত্য হিসাবে বর্ননা করেছিলেন। তবে তিনি রাজতরঙ্গনির ঐতিহাসিক বিবরণের কালহানা দ্বারা বর্ণিত পরবর্তী বিজয়গুলিকে "সুস্পষ্টভাবে কিংবদন্তী" হিসাবে আখ্যায়িত করেছিলেন। তাঁর মতে, ললিতাদিত্য রাজ্য জয়কে অতিরঞ্জিত করে বর্ননা করা হয়েছে। ঐতিহাসিক সি ভি ভি বৈদ্যের (1861-1938) মতে, যদিও কালহানার বিবরণ প্রথমে কাল্পনিক বলে মনে হতে পারে, কিন্তু ত্রয়োদশ শতাব্দীর 'চার্চ নামা' (Chach Nama) উল্লেখিত -মুহাম্মদ বিন কাসিমকে রাজা দহির সম্বোধন করে এই লেখার একটি চিঠিতে উল্লেখ করা হয়েছে,"কাশ্মীরে এমন এক আর্য রাজা আছেন,যার কাজে সবাই নতজানু হয়,তাকে বিদেশি রা পর্যন্ত সম্মান করে,তার সামনে মারকান,তুরানি শাসক রাও তার চরনবন্দনা করে"এই চিঠিটি 712 খ্রিস্টাব্দে লেখা হয়েছিল বলে কথিত আছে, তাই বৈদ্য তত্ত্ব দিয়েছিলেন যে ললিতাদিত্য বিজয় অবশ্যই 700-712 খ্রিস্টাব্দে হয়েছিল(বলাবাহুল্য এই সাল সম্বন্ধে অনেক একমত নয়)।গোটজ থিয়োরাইজ করেছেন যে ললিতাদিত্য মধ্য ভারতে দখল করার আগে পাঞ্জাব , আফগানিস্তান এবং মধ্য এশীয় উচ্চভূমির পশ্চিম অংশ দখল করেছিলেন। তিনি ললিতাদিত্যের আফগানিস্তান বিজয়ের তারিখ 730 খ্রিস্টাব্দে এবং তার সমর্থনে নিম্নলিখিত যুক্তি উপস্থাপন করেছেন: **পরিহাসাপুরায় ললিতাদিত্যের চৈত্রের পাশে রয়েছে বিশালাকার গিল্ট তামা বুদ্ধের মূর্তি। এটি বামিয়ান বুদ্ধ মূর্তি দ্বারা অনুপ্রাণিত বলে মনে হয়। **ললিতাদিত্যের আগে আফগানিস্তান তুর্কি শাহী "রাজপুত্র" দ্বারা নিয়ন্ত্রিত ছিল । ললিতাদিত্যের পরে আফগানিস্তান লালিয়ায় শাহী রাজবংশের নিয়ন্ত্রণে আসে। **এই সময়ের মধ্যে পশ্চিম থেকে মুসলমানরা পাঞ্জাবের মুলতান পেরিয়ে অগ্রসর হতে পারেনি। যদিও উমাইয়া খেলাফতের পতন এটির একটি কারণ ছিল, তবে এটিও প্রতীয়মান হয় যে খলিফা সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে প্রতিরোধের পক্ষে যথেষ্ট শক্তিশালী একটি ভারতীয় সাম্রাজ্য তখন ছিল।


(এত বড় এক মহান ব্যক্তি র জীবনি এক অধ্যায় লেখা অসম্ভব, তাই বিভিন্ন পর্বে লেখাটি পূর্ণ করার চেষ্টা করব,আমার লেখার মধ্যে বিভিন্ন ভুল ত্রুটি থাকতে ও পারে, ও বাংলা ভাষা কিছু অসম্পূর্ণতা বা খুঁত চোখে পড়বে এর জন্য সবার কাছে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি,কারন বাংলাতে ললিতাদিত্যের সম্বন্ধে সেই রকম কোনো লেখা নেই, আর যা আছে তা তাকে এক মাতাল, লম্পট, অত্যাচারী রাজা হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে। তাই আমাকে ইংরেজি, হিন্দি লেখার সাহায্য নিতে হয়েছে।আর সংস্কৃত ও আরবি লেখা কে গুগল ট্রান্সলেট এর মাধ্যমে অনুবাদ করা হয়েছে।আমি ললিতাদিত্যের কোনো ছবি পাইনি যা পেয়েছি ত্ব কাল্পনিক নেট থেকে নেওয়া। আপনাদের কারো কাছে যদি তার কোন ছবি থাকে তাহলে পোস্ট করতে পারেন।

মহান ভারতীয় সম্রাট যে বিদেশি আক্রমণ কারিদের ভারত থেকে বিতারিত করেছে তার কথা যখন বলছি তখন ধর্মকে দূরে সরিয়ে এক ভারতীয় হিসেবে বিচার করে উচিত আমাদের।

তথ্য সুত্রঃ


Hermann Goetz (1969). Studies in the History and Art of Kashmir and the Indian Himalaya. Wiesbaden: Otto Harrassowitz.

Tansen Sen (2004). Kaśmīr, Tang China, and Muktāpīḍa Lalitāditya's Ascendancy over the Southern Hindukush Region


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url