ভারতীয় উপমহাদেশের মানুষেরা জন্ম জন্ম ধরে কিছু কুসংস্কারকেই সত্য বলে আঁকড়ে ধরেছেন | superstition
ভারতবর্ষের সাধারণ মানুষের কাছ থেকে আধ্যাত্ম সত্য হারিয়ে গিয়ে কতকগুলি কুসংস্কারই বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে এবং জন্ম জন্ম ধরে তারা এই কুসংস্কারকেই সত্য বলে আঁকড়ে ধরেছেন। রক্ষণশীল মানুসিকতার জন্য কিছুতেই এর বাইরে যেতে চান না। এমনি করেই মানুষে মানুষে ভেদাভেদের প্রশ্নটাও বড়ো হয়ে দেখা দিয়েছে ভারতবাসীর মনে। নইলে স্থির মস্তিষ্কে বিচার করলে পুরানের বহু গল্পই আপাত অর্থে গ্রহণযোগ্য হতে পারে না।
যেমন পরশুরামের কথাই ধরা যাক। পরশুরাম দশ অবতারের এক অবতার। অবতার বলতে আমরা বুঝি দেহ ধারণ করে জগতে ঈশ্বরের আবির্ভাব। জৈবিক দেহ ধারণ করলেও প্রাণীকুলের কাছে তিনি নমস্য।এই নমস্য হওয়ার জন্য এমন কতকগুলি গুন তার মধ্যে প্রকটিত হয় যা শ্রদ্ধা যোগ্য। যেমন পিতামাতাকে শ্রদ্ধা, সদা সত্যভাষণ,অহিংস মনোভাব, জীবে প্রেম ইত্যাদি। কিন্তু পরশুরামের কাহিনী যদি বিচার করি তবে তার মধ্যে শ্রদ্ধা করার মতো কোনো গুনই নেই।
তিনি মাতৃ হত্যা করেছিলেন হিংসার বশবর্তী হয়ে একুশবার পৃথিবী নিঃক্ষত্রিয় করেছিলেন। একটি মানুষ যে গুনে দৈবীসত্তা প্রাপ্ত হয় সেই গুনও তার ছিলো না। যেমন বশিষ্ট তার বিপরীত মেরুর লোক। শত পুত্র নিহত হলেও তিনি বিশ্বামিত্রের উপরে ক্রোধ প্রকাশ করেননি। এজন্যই তিনি ব্রাহ্মণশ্রেষ্ঠ অর্থাৎ আত্মবশ বশিষ্ট শব্দের অর্থই হলো আত্মবশ।সেই বৈশিষ্টর উদাহরণের পাশে কিরূপে পরশুরাম অবতার বলে চিহ্নিত হতে পারেন?
~আসলে এই গল্পটির একটি প্রতিকার্থ আছে।
প্রতিকার্থ এইরকম:
মাতা মানে এনার্জি, জগৎ। শুন্যতার বুকে সুপ্ত এইএনার্জি বা শক্তি স্বভাব গুনে ফুটে উঠে গোলাকার জগৎ তৈরী করে। এই জগৎকে হনন করে অর্থাৎ জয় করে, নিষ্ক্রিয় করে সেইশুন্যতায় ফিরে যিনি যেতে পারেন তিনিই ঈশ্বররূপে গ্রাহ্য হন। পরশুরাম এই জগৎকে জয় করেনির্গুণ শুন্যতায় স্থিত হতে পারতেন। সুতরাং তিনি ছিলেন ঈশ্বরতুল্য। জগৎ অর্থৎ শক্তিজয়ী হিসাবে তিনি মাতৃঘাতী|কারণ শক্তিকে স্ত্রীলিঙ্গ বা মাতৃরূপে কল্পনা করা হয়। যেমন বিজ্ঞান অনেক বিষয়ে কল্পনা করে এগোয়। ক্ষত্রিয় হলেন তিনিই যার মধ্যে রজও তম গুনের প্রাধান্য বেশী থাকে।
কোনো সাধক একুশদিন সমাধিস্থ থাকলে এই রজও তম গুন সম্পূর্ণ রূপে নাশ হয়ে ঈশ্বরের নির্ভিজাল সত্ব গুন তার মাঝে ফুটে উঠে। পরশুরাম একুশদিন সমাধিস্থ থেকে এই জড়প্রধান ২গুন নাশ করতে পেরেছিলেন বলেই তাঁকে একুশবার ক্ষত্রিয় নাশকারী বলা হয়েছে। তিনি কুঠারধারী। এই কুঠার নরহত্যা র কুঠার নয়। এ হলো জ্ঞানকুঠার যার দ্বারা অজ্ঞান রূপ অন্ধকারকে ছেদন করা যায়। সেইজন্য অদ্যাবধি শৈব সাধকরা কুঠার চিহ্ন ধারণ করেন। গল্পের এই প্রতিকার্থ খুঁজে পেলে পরশুরামের অবতার তত্ত্বের যুক্তিযুক্ততা প্রকাশ পায়। কিন্তু এই প্রতিকার্থ ধরা নাগেলে তা কুসংস্কার ও অজ্ঞানতাতুল্য।