জাকির নায়েকের অতিরঞ্জিত তথ্যগুলোর পোস্টমর্টেম - Zakir Naik exposed
জাকির নায়েক এর একটি যুক্তির জবাব এক বাক্যে এবং জাকিরের দেয়া সব তথ্য যে অতিরঞ্জিত তার প্রমান :
জাকিরের পিস টিভি যদিও এখন বন্ধ, কিন্তু এই লোক যেসব মল-মূত্র মুসলমানদের জন্য ত্যাগ করে গেছে, সেগুলোর দুর্গন্ধ বহু দিন পর্যন্ত ছড়াবে, যেমন মুহম্মদের মল-মূত্রের দুর্গন্ধ এই ১৪০০ বছর পর এখনও পৃথিবীবাসীকে সহ্য করতে হচ্ছে, এজন্য জাকিরের কুযুক্তিগুলোর জবাব দেওয়ার প্রয়োজন বোধ করলাম। জাকিরের এই কুযুক্তিটি তার কোনো এক ভক্ত, আমার এক পোস্ট এ কমেন্ট হিসেবে পোস্ট করেছে, সেটাই কপি পেস্ট করে এখানে তুলে দিলাম, সেটা আগে পড়ে নিন, তারপর শেষে গিয়ে দেখবেন মাত্র একটা বাক্য দিয়ে এই বালির প্রাসাদকে আমি কিভাবে ধুলিস্যাত করে দিই :
জাকিররের বক্তব্য শুরু-
“জঙ্গিরা কখনো প্রকৃত মুসলিম না আর প্রকৃত মুসলিম কখনো জঙ্গি হতে পারে না। বিশ্বের বড় কোন হামলার সাথে মুসলিম জড়িত ছিলো না। দেখে নিন পরিসংখ্যান আর বুজে নিন প্রমান।
১। হিটলার, একজন অমুসলিম, ৬০ লক্ষ ইহুদি হত্যা করেছিলো। মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে খৃষ্টান সন্ত্রাসী!
২। জোসেফ স্ট্যালিন, একজন অমুসলিম, সে ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে, এবং ১৪.৫ মিলিয়ন মানুষ অসুস্থ হয়ে ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে । মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে খৃষ্টান সন্ত্রাসী!
৩। মাও সে তুং একজন অমুসলিম, ১৪ থেকে ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে। মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে বৌদ্ধ সন্ত্রাসী!
৪ । মুসলিনী (ইটালী) ৪ লাখ মানুষ হত্যা করেছে। সে কি মুসলিম ছিল? অন্ধ মিডিয়া একবারো বলে নাই খৃষ্টান সন্ত্রাসী!
৫ । অশোকা (কালিঙ্গা বেটল) ১লক্ষ মানুষ হত্যা করেছে! মিডিয়া একবারও তাকে বলেনি সে হিন্দু সন্ত্রাসী!
৬ । আর জজ বুশ ইরাকে, আফগানিস্থানে প্রায় ১.৫ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে! মিডিয়া তো বলে নাই, খৃষ্টান সন্ত্রাসী!
৭ । এখনো মায়ানমারে প্রতিদিন মুসলিম রোহিঙ্গাদের খুন, ধর্ষন, লুটপাট, উচ্ছেদ করছে! তবু ও কোনো মিডিয়া বলে না বৌদ্ধরা সন্ত্রাসী !
৮। বর্তমান আই এস ও মুসলিম নয় বরং ইহুদিদের সৃস্টি। ইতিহাস সাক্ষী পৃথিবীর বুকে সবচেয়ে বড় বড় গনহত্যা করেছে অমুসলিমরা। আর এরাই দিন রাত গণতন্ত্র জপে মুখে ফেনা তুলে ! অথচ এদের দ্বারাই মানবতা লুন্ঠিত ! এবার আসুন একটু হিসাব মিলাই------
ক। যারা প্রথম বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
খ। যারা দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ শুরু করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
গ। যারা অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর নিজেদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ২০ মিলিয়ন অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল?
ঘ। যারা হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে পরমাণু বোমা নিক্ষেপ করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল ?
ঙ। যারা আমেরিকা আবিষ্কারের পর নিজেদের প্রভাব বিস্তারের জন্য, উত্তর আমেরিকাতে ১০০ মিলিয়নএবং দক্ষিন আমেরিকাতে ৫০ মিলিয়ন রেড ইন্ডিয়ানকে হত্যা করেছিল, তারা কি মুসলিম ছিল?
চ। যারা ১৮০ মিলিয়ন আফ্রিকান কালো মানুষকে কৃতদাস বানিয়ে আমেরিকা নিয়ে গিয়েছিল । যাদের ৮৮ ভাগ সমুদ্রেই মারা গিয়েছিল এবং তাদের মৃত দেহকে আটলান্টিক মহাসাগরে নিক্ষেপ করা হয়েছিল, তারা কি মুসলিম ছিল?
উত্তর হবে, এসব মহাসন্ত্রাসী ও অমানবিক কার্যকলাপের সাথে মুসলমানরা কখনো জড়িত ছিল না। আপনাকে সন্ত্রাসের সংজ্ঞা সঠিকভাবে করতে হবে। যখন কোন অমুসলিম কোন খারাপ কাজ করে, তখন এটাকে বলা হয় অপরাধ! আর যখন কোন মুসলিম একই খারাপ কাজ করে, তখন এটাকে বলা হয় ইসলামী জঙ্গীবাদ। সবচেয়ে বড় কথা রইলো ইসলামের প্রধান শত্রু হলো মিডিয়া।”
জাকিরের বক্তব্য শেষ।
এখন দেখুন আমার বাঁশ।
এই লেকচারে জাকির অনেক তথ্য হাজির করেছে, যার অধিকাংশই অতিরঞ্জিত এবং অনেক প্রশ্ন করেছে, এই সকল তথ্য এবং প্রশ্নের উত্তরে আমি শুধু একটি প্রশ্ন করছি,
“উপরে যাদের কথা বলা হয়েছে, তারা কি কেউ নিজ ধর্মের নামের ঈশ্বরের নামে খুন করেছে ?”
উত্তর হলো, না। তাহলে কেনো তাদেরকে খ্রিষ্টান, বৌদ্ধ বা হিন্দু সন্ত্রাসী বলা হবে ? পার্থিব লাভের জন্য কাউকে হত্যা করা আর বেহেশত নামক পতিতালয়ে গিয়ে হুরের সাথে ফুর্তি করার উদ্দেশ্যে কাউকে হত্যা করা কি এক ?
যেহেতু মুসলমান ছাড়া পৃথিবীর কেউ কাউকে বিনা কারণে হত্যা করে নি বা করে না, সেহেতু তাদের হত্যাকাণ্ডের জন্য তাদের ধর্মের কোনো দোষ থাকতে পারে না। কিন্তু মুসলমানরা বিনা কারণে, শুধু কাফের হত্যা করে বেহেশত পাওয়ার উদ্দেশ্যেই পৃথিবীতে বহু হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে এবং এখনও ঘটাচ্ছে, তাহলে মুসলমানদের এইসব হত্যাকাণ্ডের জন্য কেনো তাদের ধর্ম ইসলামের দোষ হবে না এবং কেনো মুসলমানদেরকে ইসলামি জঙ্গী বলা হবে না ?
এবার অতিরঞ্জিত তথ্যগুলোর পোস্টমর্টেম করি।
প্রথমে যদি আপনি বক্তৃতার শুরুতে সাধারণভাবে জানা দু্ একটি সত্য তথ্য দেন এবং এরপর এমন কিছু তথ্য দেন যেগুলো সাধারণ মানুষের অজানা এবং সেই তথ্যগুলো সাধারণ মানুষের পক্ষে প্রমান করাও সম্ভব নয়, তাহলে ঐ সত্য তথ্যের জোরে পরবর্তী মিথ্যা তথ্যগুলোও সাধারণ লোজকন সত্য বলে মনে করতে শুরু করবে। জাকিরের প্রতিটা লেকচারের বৈশিষ্ট্যই হলো এইরকম।
বক্তৃতার শুরুতেই সে বলেছে, হিটলার ৬০ লক্ষ ইহুদিকে হত্যা করেছে, এটা মোটামুটি সবার জানা সত্য তথ্য।এরপর সে বলেছে যোসেফ স্ট্যালিনের কথা, সে নাকি ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে, আর তার কারণে ১৪.৫ মিলিয়ন মানুষ ধুঁকে ধুঁকে মারা গেছে, এভাবে জাকিরের হিসেবে স্ট্যালিনের কারণে মোট মৃত মানুষের সংখ্যা ৩৪.৫ মিলিয়ন। ১ মিলিয়নে হয় ১০ লক্ষ। তাহলে ৩৪.৫ মিলিয়ন = ৩ কোটি ৪৫ লক্ষ। কিন্তু স্ট্যালিন মাত্র ১৫ মিলিয়ন বা দেড় কোটি মানুষের মৃত্যুর জন্য দায়ী। এখানে অতিরঞ্জনের সংখ্যা প্রায় ২ কোটি।
জাকিরের মতে, চীনের মাও সেতুং ১৪ থেকে ২০ মিলিয়ন মানুষ হত্যা করেছে, অর্থাৎ প্রায় ২ কোটি। কিন্তু উইকিপিডিয়া সহ বিশ্বখ্যাত কোনো তথ্য ভান্ডারে মাওসেতুং কর্তৃক গণহত্যার কোনো তথ্য নেই। কিন্তু বাংলাদেশের জিয়ার মতো যেহেতু সে ১৯৪৯ সালে একটি বিপ্লবের মাধ্যমে ক্ষমতায় এসেছিলো এবং ক্ষমতায় আসার পর জিয়া যেমন প্রায় ১ হাজার সেনা সদস্যকে হত্যা করেছিলো, সেহেতু মাওসেতুং ও কিছু সংখ্যক বিরোধীকে হত্যা করে থাকতে পারে; এটা অসম্ভব কিছু নয়, কিন্তু এই সংখ্যা কয়েকশত পর্যন্ত হতে পারে, কয়েক হাজারে পৌঁছা অসম্ভব। জাকিরের দেয়া তথ্য সত্য হলে উইকিপিডিয়ায় তার কিছু নিদর্শন থাকতো। কিন্তু উইকিপিডিয়া খুলে দেখেন, সেখানে মাওসেতুং এর শুধু প্রশংসা ই করা হয়েছে।
এরপর জাকির বলেছে, ইটালির মুসোলিনি নাকি ৪ লক্ষ মানুষকে হত্যা করেছে। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে মুসোলিনি হিটলারের পক্ষ নেয় এবং হিটলারের মতো সেও ছিলো ইহুদি বিদ্বেষী। যুদ্বের ডামাডোলে সে ৭ হাজার ইহুদিকে ইটালি থেকে বের করে দেয়, এর মধ্যে ৬ হাজার মারা যায়, এই ৬ হাজার ইহুদির হিসাব, হিটলারের ৬০ লক্ষ এর অন্তর্ভূক্ত। সুতরাং এখানে মুসোলিনি কর্তৃক ৪ লক্ষা মানুষ হত্যার বিষয়টি পুরোপুরি ই অতিরঞ্জিত।
অশোকের কলিঙ্গ যুদ্ধে ১ লক্ষ ১০ হাজার লোক মারা যায়। এটি ছিলো দুই রাজ্যের মধ্যে ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ, যেরকম যুদ্ধ পৃথিবীতে কয়েক শত নয়, কয়েক হাজার হয়েছে, তো এই যুদ্ধে মৃত মানুষের দায় অশোকের উপর বর্তাবে কেনো ? তাছাড়া খ্রিষ্ট পূর্ব ২৬৫ সালের এই যুদ্ধে যারা মরেছে এবং যারা মেরেছে সবাই ছিলো হিন্দু, তাহলে অশোককে কেনো হিন্দু সন্ত্রাসী বলা হবে ? কোনো মুসলমান কি মুহম্মদ বা লাদেনকে কি সন্ত্রাসী মনে করে ? মুহম্মদও তার জীবদ্দশায় প্রায় ১ হাজার মানুষের মৃত্যুর কারণ এবং লাদেন টু্ইন শুধু টাওয়ার ঘটনায় ৪/৫ হাজার লোকের মৃত্যুর কারণ।
জর্জ বুশ ইরাক আফগানিস্তানে যুদ্ধ লাগিয়ে নাকি ১৫ মিলিয়ন মানে দেড় কোটি মানুষ মেরেছে। স্ট্যালিন, মুসোলিনির সময় আমরা ছিলাম না, তাই তাদের ঘটনা জানার জন্য ইতিহাসের বই আর উইকপিডিয়ার তথ্যই আমাদের ভরসা, আর মুসলমানদের ভরসা জাকির নায়েকের মিথ্যা তথ্য। কিন্ত ইরাক আফগানিস্তানের যুদ্ধ আমাদের চোখের সামনে ঘটেছে, জাকির নির্বোধ না হলে এই তথ্য বিকৃত করতো না। যা হোক, নেট ঘেঁটে ইরাক আফগানিস্তানের যুদ্ধে নিহত লোকের সংখ্যা যা পেলাম তা হলো, আফগানিস্তানে ২০০১ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত তালিবান মরেছে প্রায় ৩০ হাজার, এর সাথে কিছু সাধারণ লোক, সব মিলিয়ে ৪০ হাজারের বেশি নয়। ইরাকে ২০০৩ থেকে ২০১৩ পর্যন্ত লোক মরেছে ১ লক্ষ ৭৪ হাজার। কিন্তু এর ৭০ থেকে ৮০% মরেছে নিজেদের মধ্যে গৃহযুদ্ধে। কিন্তু আমেরকিান সৈন্য ইরাক ছেড়ে যাওয়ার পর বর্তমানে আইএস, যে হারে ইরাক সিরিয়ায় লোক মারছে বা মেরেছে তার হার ২০০৩-২০১৩ এর সময়ের চেয়ে অনেক বেশি।
এরপর জাকির বলেছে, এখনো মায়ানমারে প্রতিদিন মুসলিম রোহিঙ্গাদের খুন, ধর্ষন, লুটপাট, উচ্ছেদ করছে! তবু ও কোনো মিডিয়া বলে না বৌদ্ধরা সন্ত্রাসী !
কিন্তু মায়ানমারের পাশের দেশ, বাংলাদেশ থেকে যে ১৯৪৭ এর পর থেকে প্রায় ৫ কোটি হিন্দুকে বিতাড়িত করাহয়েছে এবং প্রায় ১ কোটি হিন্দুকে খুন করা হয়েছে, সেটা জাকিরের চোখে পড়ে না এবং তার কাছে মনে হয় না যে বাংলাদেশের মুসলমানরা সন্ত্রাসী।
এরপর জাকিরের প্রশ্নের ঝড় হলো, যারা ১ম এ ২য় বিশ্ব যুদ্ধ লাগিয়েছিলো, যারা জাপানে পারমানবিক বোমা মেরেছিলো, তারা কি মুসলিম ছিলো ?
১ম ও ২য় বিশ্ব যুদ্ধে কোনো মুসলিম দেশ জড়িত ছিলো না এবং কোনো মুসলমান মরেও নি, তাছাড়া ওসব যুদ্ধ মুহম্মদের যুদ্ধের মতো ভোরের বেলায় অপ্রস্তুত জনপদের উপরে অতর্কিতে আক্রমন ছিলো না, ছিলো ঘোষণা দিয়ে যুদ্ধ, সেই যুদ্ধে ধর্ম কোনো ফ্যাক্টর ছিলো না, তাহলে তারা মুসলিম ছিলো কি না, সেটা নিয়ে জাকিরের এত মাথা ব্যথা কেনো ? নাকি নিজেদের অপকর্মকে ঢাকার জন্য অন্যের অপকর্মকে বড় করে তুলে ধরতে হবে।
এরপর জাকির বলেছে অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কারের পর ইউরোপীয়রা নাকি ২০ মিলিয়ন মানে ২ কোটি আদিবাসীকে হত্যা করেছে।
২০১৫ সালের হিসাব অনুযায়ী অস্ট্রেলিয়ার মোট জনসংখ্যাই ২ কোটি ৩০ লক্ষ, এর মধ্যে আদিবাসীর সংখ্যাও রয়েছে। অস্ট্রেলিয়া আবিষ্কৃত হয় ১৭৭০ সালে, সেই সময় কত আদিবাসী সেখানে থাকতে পারে, সেটা একবার ভেবে দেখুন। আবিষ্কারের পর ব্রিটিশরা অস্ট্রেলিয়ায় উপনিবেশ স্থাপন করে এবং ব্রিটিশ কয়েদিদেরকে সেখানে থাকতে দেয়, এই কয়েদিরা স্থানীয় অস্ট্রেলিয়ান আদিবাসীদের সাথে সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং তীর ধনুক নিয়ে বৃটিশদের গুলি বন্দুকের সাথে টিকতে না পেরে সাড়ে ৭ লক্ষ আদিবাসী নিহত হয়। কিন্তু এই সাড়ে ৭ লক্ষ জাকিরের কাছে গিয়ে হয়েছে ২ কোটি, অবস্থাটা একবার ভাবুন। অস্ট্রেলিয়ায় যারা মেরেছে এবং মরেছে তারা কেউ ধর্মের জন্য মারে নি ও মরে নি, মেরেছে ও মরেছে ভূমি দখলের জন্য, তাহলে এখানে কেউ মুসলিম ছিলো কি না, সেই প্রশ্ন আসবে কেনো ? এই আধুনিক যুগে যারা সব ক্ষেত্রে ধর্মকে ডেকে আনে তাদেরকে ছোট লোক বলে বিবেচনা করা হয়।
এরপর জাকির বলেছে আমেরিকা আবিষ্কার করার পর ইউরোপীয়রা নাকি দুই আমেরিকা মিলে ১৫০ মিলিয়ন অর্থাত ১৫ কোটি রেড ইন্ডিয়ান নামের আদিবাসীকে হত্যা করেছে।
এই ২০১৬ সালেই দুই আমেরিকার মোট জনসংখ্যা প্রায় ৯২ কোটি, যেখানে সমগ্র পৃথিবীর জনসংখ্যা ৭০০ কোটির কিছু বেশি; তাহলে ৫০০ বছর আগে আমেরকিায় আর কতজন লোক ছিলো ? কলম্বাস আমেরিকা আবিষ্কার করে ১৪৯২ সালে- তারপর ইউরোপীয়রা আমেরিকায় গিয়ে বসতি স্থাপন করে, সেই সময় দুই আমেরিকা মিলে কি ১৫ কোটি লোক থাকা সম্ভব ? এখনও দুই আমেরিকার জনসংখ্যার ঘনত্ব মাত্র ২২ জন/ বর্গ কি.মি। ১৫০০/১৬০০ সালে আমেরিকায় আর কত জন রেড ইন্ডিয়ান ছিলো যে তাদেরকে হত্যা করে ইউরোপীয়দেরকে আমেরিকার ভূমি দখল করতে হবে ? এটা অস্বীকার করার উপায় নেই যে, ইউরোপীয়রা স্থানীয় লোকদের উপর প্রভাব খাটানোর জন্য এবং তাদেরকে ভয় দেখানোর জন্য কিছু লোককে হত্যা করে থাকতে পারে, সেই সংখ্যা কয়েক হাজার হতে পারে, কয়েক লাখ হওয়াও অসম্ভব।
এরপর জাকিপিডিয়ার তথ্য হচ্ছে, আমেরিকানরা ১৮০ মিলিয়ন বা ১ কোটি ৮০ লাখ আফ্রিকানকে ধরে নিয়ে আমেরিকায় যাওয়ার পথে এর ৮৮%, অর্থাৎ ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষ মারা যাওয়ায় তাদেরকে সমুদ্রে ফেলে দিয়েছে।
যখন সোনা নিয়ে কথা বলা হয়, তখন এটাও মনে রাখা জরুরী যে, সোনা কত দামী ? ইউরোপীয়রা, আমেরিকায় বসতি গড়ার পর তারা সেখানে বিভিন্ন রকম কৃষি ফার্ম গড়ে তোলে। এই ফার্মে কাজ করার জন্য তাদের লোকের প্রয়োজন ছিলো। স্থানীয়ভাবে সেই লোক তারা সংগ্রহ করতে না পেরে জাহাজ নিয়ে হাজার হাজার মাইলের বিপদসঙ্কুল সমুদ্র পাড়ি দিয়ে তারা যেতো আফ্রিকায়, তারপর আফ্রিকানদের সাথে লড়াই করে কিছু সংখ্যক মানুষকে বন্দী বানিয়ে নিয়ে যেতো আমেরিকায়। এই প্রত্যেকটি দাস, তাদের কাছে ছিলো অনেক মূল্যবান। আর সেই দাসকে নিয়ে যাওয়ার সময় তাদেরকে মরতে দিয়ে সমুদ্রে ফেলে দিয়ে খালি জাহাজ নিয়ে আমেরিকায় গিয়ে জাহাজ ভেড়াবে, এটা জাকিরের মতো কিছু বদ্ধ উন্মাদের পক্ষেই বিশ্বাস করা সম্ভব, কোনো সুস্থ মানুষ এটা বিশ্বাস করতে পারে না। সুতরাং জাকিরের দাবীর এই ১ কোটি ৫০ লক্ষ আফ্রিকান মানুষ হত্যার কাহিনী পুরোটাই অতিরঞ্জিত। এই প্রসঙ্গে আরেকটা বিষয় খেয়াল করুন, আমেরিকায় বসতি স্থাপনকারী ইউরোপীয়দের, কৃষি ফার্মে কাজ করার জন্য লোকের প্রয়োজন ছিলো, সেই লোক তারা স্থানীয়ভাবে না পেয়ে আফ্রিকায় আসছে লোক শিকার করতে, তাহলে তারা জাকিরের আগের দাবী অনুযায়ী স্থানীয় রেড ইন্ডিয়ানদের হত্যা করতে যাবে কেনো, যেখানে তাদের নিজেদেরই কাজের লোকের প্রয়োজন ? এ থেকে স্পষ্ট যে পাইকারী ভাবে ১ কোটি ৫০ লক্ষ রেড ইন্ডিয়ান হত্যার জাকিরিয় গল্প একটা আষাঢ়ে গল্প ছাড়া আর কিছুই নয়।
এইভাবে হিসেব নিকেশ করে দেখবেন জাকিরের দেয়া তথ্যের মধ্যে বেশিরভাগই তথ্য মিথ্যা বা অতিরঞ্জিত। এগুলো মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে, না হলে জাকিরের কথা শুনে অতীতে কিছু মানুষ যেমন বিভ্রান্ত হয়ে বিপথে চলে গেছে, তেমনি ভবিষ্যতেও যাবে, আর তার দায় এড়াতে পারবো না আমরাও।
-----------
আর্টিকেল ভালো লাগলে অবশ্যই সবার সাথে শেয়ার করবেন।
https://www.facebook.com/history990