Translate

সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে কি যাওয়া যায়: হাইকোর্ট

সভ্য দেশে এমন পোশাক পরে রেলস্টেশনে কি যাওয়া যায়: হাইকোর্ট


উনিশ শতকের শেষ দিকের আগে বাঙালি নারীর পোশাক ছিলো একটি লম্বা থান কাপড়। এটিই শরীরে জড়িয়ে রাখা হতো। শীতকালে পরত চাদর। রবীন্দ্রনাথের বড় বৌদি জ্ঞানদানন্দিনী পারসি মেয়েদের শাড়ি পরার স্টাইলকে ফলো করে শাড়ির সঙ্গে ব্লাউজ ও নিচে সায়া পরার চল শুরু করেন উনিশ শতকের শেষদিকে। এখন সেই শাড়ি ব্লাউজ সায়া হয়ে গেছে আমাদের দেশীয় সংস্কৃতি। সংস্কৃতি তাই এরকমই পরিবর্তনশীল।

এখনকার যুগে টপস জিন্স হচ্ছে মেয়েদের চলাফেরার জন্য সবচেয়ে কার্যকরী পোশাক। সেই পোশাককে নিজেদের সংস্কৃতির সঙ্গে বেমানান বলাটা ইতিহাস সম্পর্কে মূর্খতা ছাড়া আর কিছু না। দেশে ওহাবী ইসলামের আমদানি হাজি শরীয়তুল্লাহ তিতুমীরের হাত ধরে এলেও এটি বর্তমানে পূর্ণতা পেয়েছে। ফলে হাইকোর্টে বিচারপতিরা আসলে শালিন অশালিনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করছে ইসলামিক সেন্টিমেন্ট দিয়ে।

নরসিংদীতে একটি মেয়েকে টপস জিন্স পরার কারণে আরবের তাহরুশ (আরবের জনপ্রিয় একটি সংস্কৃতি যেখানে অনেক পুরুষ মিলে একটি মেয়েকে ধরে তার গায়ের পোশাক খুলে ফেলে) স্টাইলে আক্রমন করার পর অপরাধীদের দোষ না ধরে আদালত যেভাবে মেয়েটিকে দোষারোপ করলো, এবং ওয়েস্টান পোশাক পরে অন্য মেয়েরা যে প্রতিবাদ করেছিলো তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার যে হুমকি দিয়েছে তাতে সমাজে পোশাকের জন্য কাউকে এভাবে তাহরুশ আক্রমন করাটাকে আদালত প্রায় ম্যান্ডেট দিয়ে দিলো!

এই রায় বা মন্তব্যের প্রতি সাধারণ জনগণের প্রতিবাদে কিছু হবে না। এই প্রসঙ্গে আদালত থেকেই প্রতিবাদ আসতে হবে। বিচারপতিরা নিজেদের ব্যক্তিগত বিশ্বাস থেকে কেন রায় দিবেন? তাদেরকে আদেশ নিষেধ দিতে হবে আধুনিক মানবিক অবস্থান থেকে। প্রধান বিচারপতির উচিত এই ধরণের অরুচিকর, অসাংবিধানিক সর্বপরি ব্যক্তি স্বাধীনতা পরিপন্থি রায়ের বিরুদ্ধে দ্রুত বক্তব্য প্রদান করা।


নরসিংদী রেল স্টেশনে পোশাকের কারণে মারধোর ও হেনস্থার শিকার হওয়া নারীর পোশাক নিয়ে হাইকোর্টই এবার প্রশ্ন তুলেছে! বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও একেএম জহিরুল হক আদালতে বলেন, কোন সভ্যদেশে এরকম পোশাক কেউ পরে? আদালত আরো বলেন, কৃষ্টি সংস্কৃতি সংরক্ষণের অধিকার আছে কিনা? পোশাক সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে না?... (সূত্র দৈনিক প্রথম আলো)।

আমাদের সংস্কৃতিতে তো বোরখা নেই! তাহলে বোরখাঅলিদেরও ধরে ধরে এভাবে পেটাতে হবে নাকি সংস্কৃতি রক্ষার্থে? নরসিংদীতে যেভাবে একটি মেয়ে ও তার সঙ্গে থাকা ছেলেটির উপর হামলা করেছে, ভয়ে যেভাবে মেয়েটি স্টেশন মাস্টারের রুমে গিয়ে নিজেকে রক্ষা করেছে আদালত সস্কৃতি সংরক্ষণের কথা বলে সেই এটিচুড তো সমর্থন করলেন! প্রধান অভিযুক্ত মার্জিনা আক্তার শিলাকে ছয়মাসের জামিন দিয়ে আদালত এই ম্যাসেজই দিলেন দেশের গ্রামে গঞ্জে এইরকম ‘সংস্কৃতি আর সভ্যতা’ রক্ষাকারীই দরকার?


আদালতের কাছে কাঙ্খিত ছিলো পোশাকের স্বাধীনতার কথাই বলা হবে। এদেশে লঞ্চ ডুবিতে মৃতদের মধ্যে নারীদের সংখ্যা বেশি হবার একটি কারণই হচ্ছে তাদের পোশাক! বোরখা ওড়না নিয়ে সাঁতার কাটা সম্ভব হয় না। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে রিকশা ভ্যান দুর্ঘটনার পরও মেয়েদের বুক ঢেকে চলাটাকে নিজেদের সংস্কৃতি বলাটা স্রেফ পুরুষতান্ত্রিক ও ইসলামিক সাংস্কৃতিক ধারকবাহক হওয়া। নরসিংদীতে পোশাকের জন্য নারী হেনস্থার পর হাইকোর্টে যে মন্তব্য হলো সেটিকে এখন পুঁজি করে এই দেশে ‘শালিন পোশাক’ ‘সভ্য পোশাক’ ‘পর্দা’ এই হাতিয়ারগুলি শক্তিশালী হয়ে নারীকে একটি মধ্যযুগীয় কাল্ট কালচারের দিকে নিয়ে যাবে। ঘরে বাইরে নারী আরো বেশি করে অনিরাপদ হলো। কিন্তু এরকম একটি মন্তব্য করার পরও বাংলাদেশের নারী সংগঠন, সুশীল সমাজ এক্কেবারে চুপ!

Follow করুন সুষুপ্ত পাঠক কে
Next Post Previous Post
1 Comments
  • Journalist
    Journalist ২:৩৬ PM

    নরসিংদী রেলস্টেশনে এক তরুণীকে হেনস্তার অভিযোগে করা মামলায় মার্জিয়া আক্তার ওরফে শিলা (৬০) জামিন পেয়েছেন। মঙ্গলবার (১৬ আগস্ট) বিচারপতি শেখ মো. জাকির হোসেন ও বিচারপতি একেএম জহিরুল হকের বেঞ্চ ছয় মাসের জামিন দেন তাকে।
    আদালতে জামিনের জন্য শুনানি করেন আইনজীবী মো. কামাল হোসেন।

    ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল আবুল হাশেম ছিলেন রাষ্ট্রপক্ষে। হোসেন বলেন, ‘আদালত পর্যবেক্ষণে বলেছেন, গুলশান–বনানীর মতো এলাকায়ও কোনো মেয়ে এমন পোশাক পরে রাস্তায় বের হয় না। সেখানে গ্রামের মতো একটি জায়গায় পাবলিক প্লেসে এমন পোশাক পরা স্বাধীনতা হতে পারে না।’তিনি আরও বলেন, ‘আদালত বলেছেন, যেমন খুশি তেমন পোশাকের নামে সোসাইটির কালচারকে ধ্বংস করতে পারে না। ওই মেয়ে যে ধরনের পোশাক পরিহিত ছিল সেটা দেশের সামাজিক অবস্থার সঙ্গে বেমানান। যে কারণেই প্রতিবাদের শিকার হয়েছিলেন।’কামাল হোসেন আরও বলেন, ‘মায়ের বয়সী নারী যে প্রতিবাদ করেছেন, এটা নারী ও শিশু নির্যাতন আইনের ১০ ধারায় যায় না। কেননা এতে বলা আছে, যৌন স্বার্থ চরিতার্থ করার উদ্দেশ্যে যদি কোনো নারীকে হেনস্তা করা হয়। ৬০ বছর বয়সী নারীর পক্ষে কীভাবে ২২ বছর বয়সী মেয়েকে যৌন হেনস্তা করা হয়েছে, এটা বোধগ…

Add Comment
comment url