ভারতীয় উপমহাদেশে আজও হিন্দুরা নির্যাতিত কিন্তু কেনো | সুষুপ্ত পাঠক এর কলাম
কমরেডরা তো নিপীড়িত সংখ্যালঘুদের পক্ষে, তা কাশ্মীরী পন্ডিতদের পক্ষে এখন কথা বলছেন না কেন? ৩৭০ ধারা উঠিয়ে দেয়ার পর হিন্দু কাশ্মীরী পন্ডিত সম্প্রদায় যখন কাশ্মীরে ফিরতে শুরু করছিলো তখন তাদের টার্গেট করে জঙ্গি হামলাগুলির বিরুদ্ধে অরুন্ধতী রায় চুপ কেন?
৩৭০ ধারা তুলে দেয়ার পর তিনিই সবচেয়ে বেশি সোচ্চার ছিলেন। এমনকি ‘কাশ্মীর ফাইলস’ সিনেমা মুক্তির পর সেই সিনেমাকে ‘ইসলামফোবিয়া’ ‘মুসলিম বিদ্বেষ’ বলে তিনি সরব ছিলেন। শুধু কাশ্মীরী পন্ডিতদের উপর জঙ্গি হামলাগুলি বিষয়ে তিনি নিশ্চুপ! হয়ত এটা ভেবে যে ২০ বছর পর যখন পন্ডিত কিলিং নিয়ে কেউ সিনেমা বানাবে তখন যেন দাবী করা যায় এরকম কোন কিছুই ঘটেনি দুই একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা ছাড়া। হিন্দুত্ববাদীরা সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করতে এসব ছড়াচ্ছে।
কাশ্মীরকে ‘দারুল ইসলাম’ করতে হলে হিন্দু পন্ডিতদের বিতাড়ন করতেই হবে। ৬৪-৬৫ সালে এনিমি হিসেবে বাংলাদেশ থেকে খেদানো হিন্দুদেরও মুক্তিযুদ্ধের সরকার নিতে চায়নি স্বাধীন বাংলাদেশে। তাদের ভয় ছিলো হিন্দু জনসংখ্যা যদি একটি উল্লেখযোগ্য পরিমাণে গিয়ে দাঁড়ায় তাহলে দ্বিজাতিতত্ত্বের ফল কিছুতে ফলবে না। মুসলমানদের রাজনৈতিক অর্থনৈতিক সামাজিক নিরুঙ্কুশতা অক্ষুণ্ন রাখতে একই সঙ্গে অসাম্প্রদায়িক দেখাতে সংখ্যাটা ৪-৫ শতাংশ থাকাই বাঞ্ছণীয়। কাশ্মীরেও লিবারাল মুসলমানরা সেটাই চায়। জঙ্গিরা চায় একশো ভাগ মুসলমানের দেশ। এখানেই তাদের মধ্যে তফাত।
ভারত এমন একটি দেশ যে দেশে হিন্দুরাই ‘হোম ল্যান্ডের’ দাবীতে আন্দোলন করে! সংবাদ সংস্থা পিটিআই’র একটি ছবিতে দেখলাম কাশ্মীরী একটি শিশু ব্যানার ধরে রেখেছে “We Went Homeland”! এটা কি কোন ‘মুসলিম রাষ্ট্রে’ কল্পনা করা যাবে যেখানে মুসলমানরা বিতাড়িত অমুসলিমদের কাছে? ইজরাইলের মত ঘোষিত ‘ইহুদী রাষ্ট্রে’ মুসলিমদের সংখ্যা ২৫ শতাংশ! তাদের আছে ইহুদীদের মত সমান অধিকার! কিন্তু ‘হিন্দুত্ববাদী ভারত’ থেকে কাশ্মীরী পন্ডিতরা এখন পালাচ্ছে কাশ্মীর ছেড়ে! নতুন করে কাশ্মীরের পন্ডিতদের উপর জঙ্গি হামলা শুরু হলো দেশটির ৭৫ তম স্বাধীনতা দিবসের প্রাক্কালে। স্বাধীনতার ৭৫ তম দিবসে তাই নতুন করে বিতর্কও উঠল যদি পুরো বাংলা দেশ পাকিস্তানে যোগ দিতো তাহলে কি হতো?
নেতাজী সুভাষচন্দ্র বসু পরিবারের সদস্য সুগত বসু বলেছেন, স্বাধীনতাকামী হিসেবে সাভারকর ও শ্যামাপ্রসাদের নাম মোদি উল্লেখ করে ইতিহাস বিকৃত করেছেন। শ্যামাপ্রসাদের কারণেই নেতাজির ভাই শরতবসুর চেষ্টার ফলেও বাংলাদেশ অখন্ড থাকতে পারেনি।
সাভারকর যদি স্বাধীনতাকামী হয়ে না খাকেন তাহলে তিতুমীর কি করে স্বাধীনতাকামী হয়? ওহাবী আন্দোলনকে কি করে স্বাধীনতাকামীদের আন্দোলন বলেন? সিপাহী বিদ্রোহকে কি করে স্বাধীনতা আন্দোলন বলেন? ‘দারুল ইসলাম’ কায়েমের আন্দোলন কি করে ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলন হয়?
৭৫ বছর পর কাশ্মীরের হিন্দু পন্ডিতদের নিজেদের হোমল্যান্ড চাওয়ার দা্বী দেখে এই প্রশ্ন উঠা স্বাভাবিক যে বাংলা যদি অখন্ডভাবে পাকিস্তানে যোগ দিতো বা আলাদা স্বাধীন হতো তাহলে কি হতো? অখন্ড বাংলায় সরওয়ার্দি প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তাতে দাঙ্গা লাগতে আগুনে ঘৃতাহুতি ঘটেছিলো। বাংলায় মুসলমানরাই হতো সংখ্যাগরিষ্ঠ। যে কারণে পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা বাংলার ভাগ চায়নি। কারণ বাংলা পাকিস্তানে যাক বা আলাদাভাবে স্বাধীন হোক সেখানে মুসলমানরাই থাকবে সংখ্যাগরিষ্ঠ। যে কারণে ভারতের অন্যত্র মুসলমানরা পাকিস্তানের বিরোধীতা করলেও পূর্ববঙ্গে মুসলমানরা পাকিস্তান চেয়েছিলো। অন্যত্র মুসলমানরা নিজেদের সংখ্যালঘু ঠেকাতে পাকিস্তানের বিরোধীতা করেছিলো। আর পূর্ববঙ্গের মুসলমানরা নিজেদের খন্ডিত ভারতে সংখ্যাগুরু বানাতে পাকিস্তান চেয়েছিলেন। যদি অখন্ড বাংলা দেশ স্বাধীন হতো তাহলে এই বসু পরিবারের সদস্যটিও যদি ভারতের দিল্লি মুম্বাইতে ‘দেশহীন’ হয়ে বাস করতেন সেটা আশ্চর্যের কিছু নয়।
খুলনাতে সংখ্যাগরিষ্ঠ হিন্দু থাকার পরও সবুর খানের সঙ্গে হিন্দুরা পারেনি। বাংলা ভাগের মত দুঃখজনক আর কিছু নেই। পুরো ভারতবর্ষ ভাগটাই দুঃখজনক। কিন্তু যখন ইতিহাস নিয়ে আলোচনা হবে সেই সময়ের প্রেক্ষিতে তখন বলতেই হবে, বাংলার সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমানদের হাতে দৌড়ানি খেয়ে বাঙালি হিন্দু তখন কোথায় যেতো? ৬৪-৬৫ সালের এনিমি প্রোপার্টি ও হিন্দুদের দেশের শত্রু ভারতের স্পাই বলে যেভাবে তাদের ধাওয়া দেয়া হয়েছিলো সরকারীভাবে যদি তখন অখন্ড বাংলা পাকিস্তানে যোগ দিতো তথন সেই হিন্দুরা কোথায় পালাত?
ভারতেই পালাত নিশ্চিত করেই। কিন্তু তাদের কোন দেশ থাকত কি? এই প্রশ্নটা রেখে গেলাম। গালাগালি না করে কেউ সঠিক উত্তরটি দিয়ে সবাইকে উপকৃত করুন।
ঘুমাও হিন্দু জাতি
লেখাগুলো প্রচারনা করুন সবাই মিলে। প্রচারেই মানুষের মাইন্ড চেঞ্জ হবে।