হিন্দু গণহত্যার ইতিহাস (গোয়ায় হিন্দু নির্যাতন ২) | Hindu persecution in Goa 2
হিন্দু গণহত্যার ইতিহাস (গোয়ায় হিন্দু নির্যাতন ২)
আগের পর্বে আমি গোয়ার ইতিহাস, এবং গোয়ায় মুসলিম শাসনের ইতিহাস এবং স্থানীয় হিন্দুদের প্রতি তাদের আচরণ, হিন্দু মন্দির ধ্বংসের ঘটনা তুলে ধরেছি। ২য় বাহামনি সালতানাতের বিজাপুরের শেষ মুসলিম শাসক ছিল সুলতান ইউসুফ আদিল শাহ খান।
আরও পড়ুনঃ
অন্যদিকে, পর্তুগীজ নাবিক ভাস্কো ডা গামা পর্তুগীজ রাজানুকুল্যে ১৪৯৮ খ্রিস্টাব্দের ২০ মে ইউরোপ হইতে ভারতে আসিবার পথ আবিষ্কার করে। প্রথমে সে কেরালার কালিকট বন্দরে পৌঁছায়। বলা যায় তারপর থেকেই দক্ষিণ ভারত পর্তুগীজদের মূল আখড়ায় পরিণত হয়। আর পর্তুগীজরা যে দুর্ধর্ষ জলদস্যু ছিল তা হয়তো আপনাদের সকলেরই অল্পবিস্তর জানা আছে। ১৫০৯ সালে আফোনসো ডি আলবুকার্ক গোয়ার গভর্নর নিযুক্ত হয়, আর তার পরের বছরেই ১৫১০ সালে আরেক বহিরাগত মুসলিম শাসক আদিল শাহকে পরাজিত করে গোয়া দখল করে। এরপর থেকেই গোয়া ছিল পর্তুগীজদের মূল প্রশাসনিক ও বাণিজ্যিক কেন্দ্র।
এতো গেল এক বহিঃশত্রুর হাত থেকে ভারত ভূমি আরেক বহিঃশত্রুর দখলের ইতিহাস। ক্ষমতার পালা বদল। আমার লেখার মূল উপজীব্যই হইতেছে হিন্দু ধর্ম এবং সমাজ। সুতরাং গোয়ার মতন এমন সুন্দর পরিচ্ছন্ন সমুদ্র সৈকতেও আমি যে মৃত হিন্দুদের অস্থি সন্ধান করিব তাহাতে আর বিস্ময়ের কী আছে! পুনরায় ৪৫০ বছরের বহিরাগত পর্তুগীজ শাসনামলে নিজেদের মাটিতে হিন্দুরা যে কি অবর্ননীয় অত্যাচারের শিকার হয়েছিল আমি তাহাই বর্ননা করিব।
স্পেন যেমন দক্ষিণ আমেরিকা দখলের পরপরই তাদের খ্রিস্টান মিশনারীদের ওই সব অঞ্চলে পাঠিয়েছিল, পর্তুগালও গোয়াই সেই একই কাজ করলো। আপনি খেয়াল করলেই দেখতে পাবেন, মুসলিমদের একের পর এক দেশ দখলের পরে সূফীদের আগমনও একই উদ্দেশ্যে হয়েছিল। কারণ, নিজেদের শাসনকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা। ধর্মের মাদকতার মধ্যদিয়ে সিংহাসনের মাটি শক্ত করা। তাই আজও পৃথিবীতে মুসলিম এবং খ্রিস্টান দেশের সংখ্যা অত্যাধিক।
১ নভেম্বর ১৪৭৮ সালে স্প্যানিশ ইনকুইজিশন (Spanish Inquisition) প্রতিষ্ঠিত হয়। এই ইনকুইজেশন কী? এক কথায়, এরা ছিল ধর্মীয় পুলিশ। আজকের আরব, ইরানের মতো মুসলিম দেশে এদের দেখতে পাওয়া যায়। এদের মূল কাজ ছিল,
- খ্রিস্টান নয় এমন মতাদর্শকে ধ্বংস করে দেয়া,
- এদের ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান কে ধ্বংস করা,
- অ-খ্রিস্টান মানুষদের খ্রিস্টানে ধর্মান্তরিত করা, এমনকি কেউ গোপনে অন্য ধর্ম পালন করছে কিনা তা খুঁজে দেখা এবং শাস্তির ব্যবস্থা করা।
ঠিক আজকের দিনে মুসলিম হুজুর, মৌলভী, জিহাদিরা যা করছে সেই সময়ে খ্রিষ্টানরাও তাই করতো চার্চ আর মিশনারীদের মাধ্যমে।
- স্প্যানিশ ইনকুইজিশনের প্রায় ১০০ বছর পরে, ১৫৬০ সালে সেই একই মডেলে পর্তুগিজ মিশনারিদের দ্বারা গোয়া ইনকুইজেশন (Goa Inquisition) প্রতিষ্ঠিত হয়েছিল।
- সংক্ষিপ্তভাবে ১৭৭৪ থেকে ১৭৭৮ সাল পর্যন্ত এটি অবৈধ ঘোষিত হয়
- ১৮১২ সালে পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।
গোয়া ইনকুইজেশনের প্রতিষ্ঠতা ছিল ফ্রান্সিস জেভিয়ার্স, যাকে আজকের দিনে মানুষ সেন্ট (সাধু) বলে ডাকে, Saint Francis Xavier. গোয়া সহ ভারতবর্ষের বিভিন্ন স্থানে আজকের দিনে তার চার্চ আছে। মানুষ সেখানে যায় শ্রদ্ধা ভরে, অনেকে প্রার্থনা করে। ঠিক সূফী এবং মাজার মানতের মতনই (আরও পড়ুন, সূফী ১, সূফী ২)। কিন্তু তার অপকর্মের ইতিহাস পরের পর্বে তুলে ধরব, তারপর আপনি নিজেই বিবেচনা করবেন।
লিখেছেনঃ Dolon Chapa
ফুটনোট