Translate

লাভ জিহাদ এর ইতিহাস, লাভ জিহাদ কি? | প্রেম জিহাদ Love Jihad Romeo Jihad History

লাভ জিহাদ এর ইতিহাস  লাভ জিহাদ কি? প্রেম জিহাদ Love Jihad Romeo Jihad,ইসলাম, হিন্দুদের ধর্মান্তর, বাংলাদেশে লাভজিহাদ, লাভ জিহাদের ইতিহাস,জিহাদ
লাভ জিহাদ

প্রেমের মাধ্যমে অমুসলিম নারীকে ইসলামে ধর্মান্তরিত করার যে নীরব আন্দোলন বিশ্বজুড়ে পরিচালিত হচ্ছে এরই নাম ‘লাভ জিহাদ’।


বর্তমানে ভারতবর্ষে ইসলাম বিস্তারের প্রধান হাতিয়ার হিন্দু মেয়ে বিয়ে ও বেশি সন্তান জন্মদানছলে-বলে-কৌশলে মুসলমানের সংখ্যা বৃদ্ধি করা তাদের উদ্দেশ্য। অতীতে রাজ্যহারা পরাধীন হিন্দুগণ অস্তিত্ব, সম্ভ্রম ও জীবন রক্ষার্থে ইসলাম গ্রহণ করতে বাধ্য হতো অথবা নির্যাতন, ধর্ষণ, লুণ্ঠন, দেশান্তর বা মৃত্যুকে স্বীকার করে নিত তবু ইসলাম গ্রহণ করত না। এই বীর, সাহসী, ধর্মপ্রাণ হিন্দুদেরই বংশধর আজকের বাংলাদেশের হিন্দুরা। কিন্তু অবাক হতে হয়, হিন্দু ছেলেমেয়েরা নিজেদের ইতিহাস, ধর্ম বা ইসলাম সম্পর্কে সুস্পষ্ট না জেনেই স্বেচ্ছায় ধর্মান্তরিত হচ্ছে।


প্রেম জিহাদ, রোমিও জিহাদ বা লাভ জিহাদ নামেও পরিচিত, হচ্ছে একটি প্রেম ঘটিত ধর্মান্তর অভিযান যাতে মুসলিম পুরুষরা প্রেমের ছল করে অমুসলিম মহিলাদের ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত করে। অনেক প্রতিবেদক বারংবার "প্রেম জিহাদ" কে একটি অলীক-কল্পনা ও নির্বাচনকালীন আবিষ্কার, এমনকি এটিকে ধর্মীয় ঘৃণা ও ভুল ধর্মীয় তথ্য ছড়ানোর একটি অভিযান বলে অস্বীকার করেছে। এই শব্দটি অনেকের কাছেই পরিচিত। এ ধরনের অনেক প্রমাণ আছে। এটি ২০০৯ সালে ভারতের জাতীয় নজরে আসে যখন কেরালা ও কর্ণাটকে ধর্মান্তরের ঘটনা সামনে আসে। ২০১০ সালে কেরলের তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও প্রবীণ বাম নেতা ভি. এস. অচ্যুতানন্দন প্রথম লাভ জিহাদের বিষয়টি উত্থাপন করেছিলেন।



নভেম্বর ২০০৯ সালে ডিজিপি জ্যাকব পুন্নজ জানান যে, এমন কোনো দলের ধর্মান্তরের জন্য মেয়েদের প্রেমের ধোঁকা দেয়ার যথাযথ প্রমাণের অভাব আছে। তিনি কেরালা হাইকোর্টকে জানান তার কাছে আসা ১৮টি ঘটনার ৭ টিই সন্দেহযুক্ত। শক্ত প্রমাণ না থাকলেও তদন্ত তখনও চলছিল। ডিসেম্বর ২০০৯ সালে, বিচারপতি কে.টি. সঙ্করণ পুন্নজের কথার উত্তরে তিনি একটি ঘটনার ডায়রি থেকে নিষ্পত্তি করেন যে এই বিষয়ে কিছু শক্ত তথ্য রয়েছে। তিনি বলেন এটা পরিষ্কার যে পুলিশের রিপোর্ট থেকে পাওয়া যায় মহিলাদের ধর্মান্তরের জন্য কিছু সংযুক্ত দল রয়েছে। প্রেম জিহাদে অভিযুক্ত দুজনের মামলা চলার সময় জানানো হয় গত ৪ বছরে ৩০০০-৪০০০ এমন ধর্মান্তর ঘটেছে। ডিসেম্বর ২০০৯ সালে কেরালা হাইকোর্ট দুজন অভিযুক্তকে মুক্তি দিয়ে উক্ত অনুসন্ধান চালিয়ে যেতে থাকে যদিও এতে পুলিশের অনুসন্ধান সমালোচিত হয়। বিচারপতি এম.শশীধরন নম্বিয়া কর্তৃক অনুসন্ধান কাজ বন্ধ হয়ে যায়, যেহেতু পুন্নজ প্রেম জিহাদের যথাযথ প্রমাণ পায় নি।


কর্ণাটক সরকার ২০১০ সালে জানায় অনেক বড় অংশে মহিলা ইসলাম ধর্মে ধর্মান্তরিত হয়েছে। ২০১২ সালে প্রেম জিহাদ অনুসন্ধানের ২ বছর পর কেরালা পুলিশ যথাযথ প্রমাণের অভাবে এটিকে অস্তিত্বহীন অভিযান হিসেবে ঘোষণা করে। পরবর্তীতে আরেকটি কেস চালু হয় একটি ওয়েবসাইটের বিষয়ে যেখানে মুসলিমদের সংগঠন মেয়েদের ধোঁকা দেওয়ার জন্য মুসলিম যুবকদের টাকা দিত। সেপ্টেম্বর ২০০৪ সালে, তিন মাসের মধ্যে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে উত্তর প্রদেশ পুলিশ এর কাছে ৬টি এমন ঘটনার আসে। কিন্ত যথাযথ প্রমাণ না মেলায় পুলিশ জানায় এসব মামলায় এই ঘটনার কোনো প্রমাণ নেই।


২০১৭ সালে, কেরালা হাইকোর্ট প্রেম জিহাদ বন্ধে আইন করে যে, হিন্দু মেয়েদের মুসলিম ছেলেদের বিয়ে করা অবৈধ। একজন মুসলিম স্বামী এটি পুনর্বিবেচনার জন্য ভারতের সর্বোচ্চ আদালতে আবেদন করেন যেখানে কোর্ট রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা(এনআইএ) এর কাছ থেকে নিরপেক্ষ প্রমাণ চায় এবং এনআইকে প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত সকল ঘটনা অনুসন্ধানের নির্দেশ দেয়। এতে এনআইএ বিভিন্ন সন্দেহজনক ঘটনা অনুসন্ধান করে যার মাধ্যমে তারা খোঁজ করে কোন নিষিদ্ধ সংস্থা যেমন সিমি হিন্দু মেয়েদের ধর্মান্তর করে মুসলিম সন্ত্রাসী হিসেবে তৈরি করছে কিনা। এনআইএ পূর্বে আদালতকে জানায় এই মামলা শুধুমাত্র একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা নয়, রাজ্যের মধ্যে এ ধরনের অনেক ঘটনা ঘটে চলেছে। তারা আরো বলে যে, সেই মামলার একই ব্যক্তি যে প্ররোচক হিসেবে কাজ করেছিল তার বিরুদ্ধে আরেকটি মামলা রয়েছে।


এই বিষয়টি জাতীয় নজরে আসে প্রথম ২০০৯ সালে যখন কর্ণাটক ও কেরালায় ব্যাপক হারে ধর্মান্তর ঘটে। ধীরে ধীরে এটি ভারতের বাইরে পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যেও ছড়িয়ে পড়ে। ২০০৯, ২০১০, ২০১১ ও ২০১৪ সালের ব্যাপক প্রচারণার জন্য প্রেম জিহাদ বিভিন্ন হিন্দু, শিখ ও খ্রিস্টান সংস্থার মাঝে উদ্বেগের সৃষ্টি করে যদিও মুসলিম সংস্থা অভিযোগটিকে অস্বীকার করে। রয়টার্সের ভাষ্যমতে, বিষয়টি অনেকের কাছে একটি সামাজিক উদ্বেগের কারণ হিসেবে বিবেচিত হলেও অনেক ভারতীয় প্রধানদের মতে এটি একটি ষড়যন্ত্রমূলক ঘটনা বৈ কিছু নয়। আগস্ট ২০১৭-তে, রাষ্ট্ৰীয় অনুসন্ধান সংস্থা(এনআইএ) জানায় যে তারা প্রেম জিহাদ সম্পর্কে মামলাগুলোতে কিছু সাধারণ প্রমাণ পেয়েছে।


আবেগের মাধ্যমে ধর্মান্তর

দ্য অক্সফোর্ড হ্যান্ডবুক অফ রিলিজিয়াস কনভার্সন উল্লেখ করেছে যে মানুষের এক ধর্মবিশ্বাস থেকে অন্য ধর্মবিশ্বাসে ধর্মা‌ন্তরের জন্য আবেগের ব্যবহার খুবই জনপ্রিয় এবং মাঝে মাঝেই ধর্মীয় নেতারা এর ব্যবহার করে। অধিক সংখ্যক মানুষকে আকৃষ্ট করার জন্য ধর্মীয় দলগুলোর কিছু পদ্ধতি রয়েছে; যেমন:লাভ বোম্বিং, ফ্লার্টি ফিশিং। প্রেম জিহাদ হলো এমন কাজ যেখানে মুসলিম যুবকরা আবেগ ও চাকচিক্যের সাহায্যে প্রেমে ধোঁকা দিয়ে মেয়েদের ধর্মান্তর করে থাকে– অনেক সময় এগুলো বিভিন্ন সংস্থার দ্বারা বা অর্থ দিয়েও করানো হয়।


ধর্মীয় ঐতিহাসিক ঘটনা

শিকাগো ট্রিবিউন, ফোরেইন পলিসি সাংবাদিক সিদ্ধার্থ মহন্ত প্রতিবেদন করেন যে বর্তমান প্রেম জিহাদের মূল ভিত্তি সূচিত হয় ১৯৪৭ সালের ভারত বিভাগের ঘটনায়। এই বিভক্তির কারণে পাকিস্তান অধিরাজ্য থেকে (যেটি পরবর্তীতে ইসলাম প্রজাতন্ত্রী পাকিস্তান ও গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশে ভাগ হয়) বিভিন্ন সার্বভৌম রাষ্ট্রের তৈরি হয় এবং ভারত অধিরাজ্যের (পরবর্তীতে ভারত প্রজাতন্ত্র) সৃষ্টি হয়। দুটি দেশের সৃষ্টি ও দেশে বিভিন্ন ধর্মের মানুষ থাকার কারণে বৃহৎ আকারে দেশান্তরিতা দেখা দেয় যেখানে লাখ লাখ মানুষ এক দেশ থেকে অন্য দেশে গমন করে ও ভিন্ন ধর্মের নারীরা ইসলাম ধর্মের পুরুষদের দ্বারা জোরপূর্বক ধর্মান্তর ও ধর্ষণের শিকার হয়। উভয় দেশের নারীরা এই ঘটনায় আক্রান্ত হয়। ভারতীয় সরকার কর্তৃক পুনরুদ্ধার অপারেশন করে ১৯৪৭-১৯৫৬ সালের মধ্যে ২০০০০ মুসলিম এবং ৯০০০ অমুসলিম নারীকে পুনরুদ্ধার করা হয়। মহন্তের মতে, উভয় ধর্মাবলম্বীদের মধ্যে আন্তঃবিবাহ একটি সাংস্কৃতিক চাপ হিসেবে সংকটপূর্ণ ইতিহাস হয়ে দুই ধর্মালম্বীদের ভেতর বিভিন্ন দশকে সংঘর্ষে রূপ নেয়, যা পরবর্তীতেও চলতে থাকে। ২০১৪ সাল অনুসারে,ভারতে হিন্দু রয়েছে ৮১% যা ভারতের প্রধান ধর্ম ও মুসলিম রয়েছে ১৩%।


বিয়ের সংস্কৃতি ও প্রথা

ভারতে আনুষ্ঠানিক বিয়ে সংস্কৃতি বিদ্যমান, যেখানে বর ও কনে তার জীবনসঙ্গী বেছে নেয়। ২০০০-এর দশক ও ২০১০-এর দশক জুড়ে ভারতে ভালোবেসে বিয়ের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় যদিও দুটি ধর্মের মাঝে বিয়ে করা তখনও ভয়ের বিষয় ছিল। ২০১২ সালে,দ্য হিন্দু জানায় আন্তঃধর্মীয় বিয়েতে দম্পতিদের অবৈধভাবে ভয় দেখানোর পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একই বছর, উত্তর প্রদেশে যারা সমাজের কাছ থেকে তাদের আন্তঃধর্মীয় বিয়ে লুকিয়ে রাখছিল, তাদের উৎসাহিত করতে বিয়ের নীতি অনুসারে, ধর্ম জানার প্রয়োজনীয়তাকে সংশোধনের প্রস্তাব করা হয়।


আন্তঃধর্মীয় বিয়ের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ছিল যে এটি জোরপূর্বক ধর্মান্তর এবং বৈবাহিক ধর্মান্তরের সাথে সম্পর্কিত। কিছু রীতিনীতি সাপেক্ষে ইসলামে এ ধরনের বিয়ে বৈধ। যেখানে মুসলিম নারীরা শুধুমাত্র মুসলিম পুরুষকে বিয়ে করার জন্য অনুমতিপ্রাপ্ত, পক্ষান্তরে মুসলিম পুরুষরা "আহলে কিতাব", বর্ণনানুসারে ইহুদী ও খ্রিষ্টানদের এবং হিন্দুদের ধর্মান্তরের মাধ্যমে বিয়ে করতে পারে। ২০১৪ সালে মুম্বাই মিরর একটি প্রবন্ধে জানায়, সামান্য সংখ্যক অমুসলিম কনেরা বিয়ের জন্য মুসলিম-হিন্দু ধর্মান্তর প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যায়, যেখানে অন্যরা ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট অনুসারে আইনসংগত বিয়ে করে থাকে। ১৯৫৪ সালের স্পেশাল ম্যারেজ এক্ট অনুযায়ী মুসলিম মেয়েদের ও ছেলেদের কোনো হিন্দু পুরুষ বা নারী (শিখ ও বৌদ্ধসহ)কে বিয়ে করা বৈধ।


প্রসার এবং ইতিহাস

প্রেম জিহাদ প্রথম জাতীয় আলোচনার বিষয় হয় সেপ্টেম্বর ২০০৯-এ। প্রেম জিহাদের শিকার হতে দেখা যায় কেরালা ও কর্ণাটক অঞ্চলের মাঙ্গালোরে। কেরালা ক্যাথোলিক বিশপ্‌স কাউন্সিলের অনুসারে, কেরালার ৪৫০০ মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে যেখানে হিন্দু জনজাগ্রুতি সমিতি বলে শুধু কর্ণাটকেই ৩০,০০০ মেয়েকে ধর্মান্তরিত করা হয়েছে। শ্রী নারায়ণা ধর্ম পরিপালনা এর জেনারেল সেক্রেটারি ভেল্লাপল্লি নাতেসান বলেন তাদের কাছে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে রিপোর্ট রয়েছে। পাকিস্তান ও যুক্তরাজ্যেও একই ধরনের কাজের রিপোর্ট রয়েছে। একজন অসাম্প্রদায়িক রাজনৈতিক ব্লগার সানি হুন্দালের মতে-নব্বই এর দশকে একটি নামবিহীন পত্রিকা (অনুমান করা হয় হিজবুত তাহরির অনুসারীরা) প্রচার করে যে মুসলিম পুরুষরা শিখ মেয়েদের ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করার জন্য তাদের প্রলুব্ধ করে। ২০১৪ সালে, বিভিন্ন অঞ্চল থেকে এই কাজের তথ্য পাওয়া যায় যার মধ্যে রয়েছে- বিহার, কানপুর, গওয়ালিয়র এবং ইংল্যান্ড।


দ্য শিখ কাউন্সিলের ২০১৪ সালের একটি প্রতিবেদন থেকে জানা যায় যে ব্রিটিশ শিখ পরিবারের মেয়েরা প্রেম জিহাদের শিকার হচ্ছে। এই প্রতিবেদনে আরও বলা হয় যে, এই মেয়েদেরকে তাদের স্বামী কাজে লাগায় যাদের মধ্যে অনেককে পরবর্তীতে পাকিস্তানে রেখে দেয়া হয়। তাখ্‌ত জাতেদারের মতে, শিখ কাউন্সিল কিছু মেয়ে উদ্ধার করে ও তাদেরকে তাদের পিতা-মাতার কাছে ফেরত পাঠায়।


মৌলবাদী মুসলিম সংস্থা, পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া ও 'দ্য ক্যাম্পাস ফ্রন্টকে এই কাজ করে থাকে। কেরালাতে কিছু সিনেমায় প্রেম জিহাদ তুলে ধরা হয় । যে দায়টি চলচ্চিত্রনির্মাতারা মেনে নেয় না।


২০০৯ সালের পর ২০১০, ২০১১ ও ২০১৪ সালে এটি পুনরায় আলোচনার কেন্দ্র হয়ে ওঠে। ২৫জুন ২০১১সালে, কেরালার মন্ত্রী উম্মেন চান্দি রাজ্যের আইনসভায় জানান যে ২০০৬ সালের মধ্যে সে রাজ্যে ২৬৬৭ যুবক মেয়েদেরকে ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত করেছে। কিন্তু যথাযথ প্রমাণ পাওয়া যায়নি । দিল্লীর একটি মামলার সাথে সম্পর্কিত ঘটনায়, ইন্ডিয়া টিভি সেপ্টেম্বর ২০১৪-তে প্রকাশ করে যে প্রেম জিহাদের মামলার পরিমাণ ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পাচ্ছে ও মুসলিম ছেলে ও হিন্দু মেয়েদের সম্পর্কে ঝামেলা তৈরি হয়েছে।


২০১৪ সালে ভারতের জাতীয় শুটার তারা শাহদেও বলেন যে তার স্বামী ইসলাম ধর্মে রূপান্তরিত হওয়ার জন্য তাকে জোর করে কিন্তু তারা সে দাবি না মানায় তাকে নির্যাতন করেছে। পরবর্তীতে তার স্বামীকে গ্রেফতার হয়।


একজন ভারতীয় তাওয়েকোন্দো খেলোয়াড় ২০১৪ সালে জানায় যে তিনি প্রেম জিহাদের শিকার হন যখন তিনি অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলেন। তার স্বামীকে পরে অপহরণ করার জন্য এবং অপ্রাপ্তবয়স্ককে বিয়ে করতে জোর করার জন্য গ্রেফতার করা হয়।


জনসাধারণের প্রতিক্রিয়া

২০০৯

এই হৃদয় বিদারক বিষয়টির জন্য বিভিন্ন সংগঠন একত্রিত হয়। খ্রিষ্টান দলগুলো যেমন ক্রিসচিয়ান এসোসিয়েশন ফর সোশিয়াল একশন এবং বিশ্ব হিন্দু পরিষদ (ভিএইচপি) এটি বন্ধের জন্য বিরোধিতা করে, আর ভিএইচপি একটি হিন্দু হেল্পলাইন তৈরি করে যেটি ৩ মাসে প্রেম জিহাদ সম্পর্কে ১৫০০ কলের উত্তর দেয়। দ্য ইউনিয়ন অফ ক্যাথলিক এশিয়ান নিউজ (ইউসিএএন) প্রতিবেদনে জানায় যে ক্যাথলিক চার্চ এই ঘটনার জন্য উদ্বেগ প্রকাশ করেছে। কেরালা ক্যাথলিক বিশপস কাউন্সিল (কেসিবিসি) ক্যাথলিক সম্প্রদায়কে এই বিষয়ে সতর্ক করে। সেপ্টেম্বরে, কেরালার তিরুবনন্তপুরমে শ্রী রাম সেনা নামে একটি দল প্রেম জিহাদ সম্পর্কে একটি পোস্টার প্রকাশ করে। ডিসেম্বরে দলটি ঘোষণা করে যে তারা দেশব্যাপী প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত একটি প্রচরণা চালাবে যার নাম সেভ আওয়ার ডটারস, সেভ ইন্ডিয়া।

কেরালার মুসলিম সংগঠন এটিকে আক্রোশপূর্ণ ও ভুল তথ্য সংবলিত প্রচারণা বলে অভিহিত করে। পপুলার ফ্রন্ট অফ ইন্ডিয়া (পিএফআই) কমিটির সদস্য নাসিরউদ্দিন ইলামারাম অস্বীকার করেন যে পিএফআই প্রেম জিহাদের সাথে যুক্ত ছিল , তিনি বলেন মানুষ হিন্দু ও খ্রিষ্টান ধর্মেও ধর্মান্তরিত হয় আর সেটি কোনো অপরাধ নয়। দক্ষিণ কর্ণাটকের উদুপি জেলার মুসলিম সেন্ট্রাল কমিটির সদস্যরা বলেন, মুসলিম বিশ্বাস ও সম্প্রদায়কে গোপনে ক্ষতিসাধন করার জন্যই হিন্দু ও খ্রিস্টানরা এই ষড়যন্ত্র করছে।



২০১০

জুলাই ২০১০ সালে, প্রেম জিহাদ বিষয়টি পুনরায় সংবাদে আসে যখন কেরালার মন্ত্রী ভি.এইচ. অচুটন্ডন উদাহরণ হিসেবে বলেন, কেরালাকে মুসলিম প্রধান রাজ্য তৈরি করতেই অমুসলিম মেয়েদের ধর্মান্তর করা হচ্ছে। কেরালায় বিষয়টি তদন্তের জন্য পিএফআই তার বক্তব্যটি অগ্রাহ্য করে, কিন্তু বিজেপি মহিলা মোর্চা প্রধান ও ভারতীয় জনতা পার্টি এনআইএ এর কাছে অনুসন্ধানের আবেদন জানায়। কেরালাতে কংগ্রেস পার্টি সেই মন্ত্রীর মন্তব্যের কঠোর প্রতিবাদ জানায় এবং এটিকে বর্ণনা করে খুবই খারাপ ও বিপজ্জনক বিষয় হিসেবে।



২০১১

২০১১ সালে, আলোচনাটি পুনরায় কর্ণাটক আইনসভাতে উত্থাপিত হয় যখন ভারতীয় জনতা পার্টির মল্লিকা প্রসাদ বলেন যে প্রেম জিহাদ গোপনে চলছে। ৮৪জন মেয়ের ৬৯জন যারা সে বছরের জানুয়ারি ও নভেম্বরে নিখোঁজ হয়েছিল, উদ্ধারের পর জানায় তারা মুসলিম যুবকদের প্রেমে পড়ে প্রতারিত হয়েছে। দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া জানায়, এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রতিক্রিয়া ছিল, ডেপুটি স্পিকার এন.যোগিস ভাট এবং এস.সুরেশ কুমার সরকারের পক্ষ সমর্থন করেন, যেখানে কংগ্রেস সদস্য বি.রামানথ রায় এবং অভয় চন্দ্র জাইন বিরোধিতা করে বলে যে সমাজের একতা নষ্ট করার জন্যই বিষয়টি তোলা হয়েছে।


একই মাসে, হিন্দু হিতরক্ষণা ভেদির ১৫ জন লোককে অ্যারেস্টের প্রতিবাদ করে রাষ্ট্রীয় স্বয়ংসেবক সঙ্ঘের নেতা এই বিষয়টি তুলে ধরেন, যেখানে সংঘ বলে যে পুলিশ মুসলিম যুবকদের ধরতে ভয় পায় যারা প্রেম জিহাদ করে এবং হিন্দু মেয়েদের ফোন ব্যবহার করায় সাবধান হতে বলেন, আরো বলেন যে এগুলো অনেক বড় ভূমিকা রাখবে। চলচ্চিত্রনির্মাতা পরমিতা ভোহরাও বিষয়টি তোলে সে বিষয়টিকে বিশ্ব হিন্দু পরিষদ(ভিএইচপি) এর ষড়যন্ত্র তত্ত্ব হিসেবে আখ্যায়িত করে।


২০১২

২৫জুন ২০১২ সালে, তৎকালীন কেরালার মন্ত্রী উম্মেন চান্দি রাজ্যের আইন সভায় প্রেম জিহাদ নিয়ে কিছু পরিসংখ্যান তুলে ধরেন।


২০১৪

২০১৪ সালে, প্রেম জিহাদের জন্য সংঘর্ষমূলক প্রতিবাদ শুরু হয়। যদিও রয়টার্স' এটিকে ভারতীয় প্রধান ও বুদ্ধিজীবীদের একটি ষড়যন্ত্র বলে। বিজেপি এমপি যোগী আদিত্যনাথ বলেন যে, প্রেম জিহাদ হলো ভারতকে লক্ষ্য করে একটি ষড়যন্ত্র। তিনি একটি টেলিভিশনে ঘোষণা করেন, মুসলিমরা জোরপূর্বক যা চায় তা ভারতে করতে পারে না, তাই তারা এখানে প্রেম জিহাদ পদ্ধতি ব্যবহার করছে। হিন্দু কর্মীরা উত্তর প্রদেশের মেয়েদের সাবধান করে যে তারা যেন মুসলিমদের কাছ থেকে দূরে থাকে ও তাদের সাথে যেন বন্ধুত্ব না করে। উত্তর প্রদেশের একটি কমিটি অখিল ভারতীয় বাইশ্য একতা পরিষদ বলে এই সমস্যায় কেউ যাতে আক্রান্ত না হয় সেজন্য যুবতী মেয়েদের ফোনের ব্যবহার হ্রাস করা উচিত।


এই ঘোষণার পর, টাইমস অফ ইন্ডিয়া প্রতিবেদন করে যে পুলিশের নিয়ন্ত্রক শালাব মাথুর বলেছে প্রেম জিহাদ শব্দটি শুধু ভয় ও সমাজে বিভক্তি সৃষ্টি করার জন্য তৈরি করা হয়েছে। মুসলিম নেতারা বলেন ২০১৪ সালের এই বিষয়টির প্রচার করা একটি ঘৃণ্য কাজ।অনেক নারী প্রবক্তারা উদ্বেগ প্রকাশ করেন যে এই ধরনের কাজ নারীদের মুক্ত পছন্দ বন্ধ করে নারীদের অধিকারে নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে।


ভারতীয় জনতা পার্টির নেত্রী ও পানি মন্ত্রী উমা ভারতী, যুবক মেয়ে ও ছেলেদের প্রেম জিহাদ থেকে বাঁচাতে বিভিন্ন সমাজের নেতাদের নিয়ে একটি সামাজিক আলোচনার ডাক দেন।


সেপ্টেম্বর ২০১৪-এ, বিজেপি এমপি সাক্ষী মহারাজ বলেন মাদ্রাসার মুসলিম ছেলেদের বিভিন্ন অর্থের লোভ দেখিয়ে (শিখ মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন ১১ লক্ষ, হিন্দু মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন্য ১০ লক্ষ এবং জাইন মেয়ের সাথে সম্পর্কের জন্য ৭লক্ষ টাকা) প্রেম জিহাদে উৎসাহিত করা হয়। তিনি বলেন তিনি এগুলো কিছু মুসলিমদের কাছ থেকে জানতে পেরেছেন। জামিয়া উলামা হিন্দ এর সহ-সভাপতি আব্দুল রাজ্জাক খান এসব কাজ অস্বীকার করে ও মন্তব্য করে দেশের শান্তি বিনষ্টে এটি ষড়যন্ত্রের অংশ। উত্তর প্রদেশের তৎকালীন মন্ত্রী মোঃ আজম খান উক্ত মন্তব্যকে নির্দেশ করে বলেন, দেশকে ভাঙার চেষ্টা করা হচ্ছে।

১৩ অক্টোবর, ইন্ডিয়া টুডে প্রতিবেদনে জানায়, যে নারী তাকে গণধর্ষণ ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরিত করার অভিযোগ করেছিল, সে তার বক্তব্য পরিবর্তন করেছে ও পুলিশকে জানিয়েছে তাকে গোপনে চাপ দেওয়া হয়েছে।

২০১৫

জানুয়ারিতে, বিশ্ব হিন্দু পরিষদের নারী দল দুর্গা বাহিনী তাদের ম্যাগাজিনে প্রেম জিহাদ নিয়ে বোরকায় ঢাকা কারিনা কাপুরের ছবি প্রকাশ করে। চিত্রের নিচে শিরোনাম ছিল:কনভার্সন অফ ন্যাশনালিটি থ্রো রেলিজিয়াস কনভার্সন।

২০১৬-১৮

মে ২০১৭, কেরালা হাই কোর্ট একজন ধর্মান্তরিত মেয়ে অখিলার (ধর্মান্তরের পরে হাদিয়া) সাথে একজন মুসলিম ছেলে শাফিন জাহানের বিয়েকে নাকচ করে দেয় কারণ ধর্মান্তরের সময় কনের পিতামাতা সেখানে উপস্থিত ছিলেন না। তার বাবা বলেন আইএসআইএসের নির্দেশে এই বিয়ে ও ধর্মান্তর হয়েছে। তারপর কেরালার ডিজিপিকে প্রেম জিহাদ সম্পর্কিত কেস অনুসন্ধান করার জন্য ও জোরপূর্বক ধর্মান্তরের ঘটনা খোঁজ করার আদেশ দেয়া হয় যেটা এই ধরনের সংগঠনের অস্তিত্ব প্রমাণ করবে ও এদের কাজ করার পেছনের ঘটনার ধারণা দিবে। কেরালার অধিকাংশ যুবক আইএসআইএস এর সাথে যুক্ত হওয়ার কারণে এই সিদ্ধান্ত নেয়া হয়। এটা আরো নজরে আনবে যদি বৃহৎ কোন সংস্থা এর সাথে যুক্ত থাকে। কিন্তু পরিতাপের বিষয় এই প্রশ্নের কোনো উত্তর পাওয়া যায়নি। মেয়ের বাবা বলেন মেয়েকে একটি সংস্থা মুসলিম ছেলেকে বিয়ে করতে প্রলুব্ধ করে যার কারণে মেয়েটি পিতামাতার কথা শোনে না।


মেয়ের বাবা অশোকান মণি জানান ২০১৬ সালে, যখন তার মেয়ে যেখানে পড়ত সেই ক্যাম্পাস থেকে নিখোঁজ হয়ে যায় তখন তিনি একটি হ্যাবিয়াস কর্পাস আবেদন লেখেন। তিনি জানান তার মেয়েকে জোর করে ধর্মান্তর করা হয়েছে ও তার মেয়ে অনেক সময়ই পরিবারকে জানাতো যে তাকে তার সহপাঠী জসীনা আবুবকর ও ফসীনা তার ইচ্ছার বাইরে কাজ করতে বাধ্য করত। যদিও অখিলাকে যখন পাওয়া যায় তখন সে জানায়, সে ২০১২ সাল থেকে ইসলাম ধর্ম অনুসরণ করছে ও সে নিজ ইচ্ছায় বাড়ি ছেড়েছে। সে আরও জানায় যে, তার ইচ্ছার বিরুদ্ধে কেউ ছিল না। সে বলে সে তার রুমমেটদের কাছ থেকে এই ধর্মের শিক্ষা সম্পর্কে জানার পর এ ধর্মে আগ্রহী হয়েছে। সে জানায় সে ইসলাম ধর্ম জানার জন্য থারিভাথুল ইসলাম সভা কর্তৃক আয়োজিত একটি কোর্সে যোগ দেয়।


সে আরো জানায় সে ব্রিফের সময় আবুবকরের সাথে ছিল ও মঞ্জেরীর সত্যসরণি হোস্টেলে চলে যায়, যেই প্রতিষ্ঠানটি ইসলামে ধর্মান্তর করছিল এবং এটি পিএফআই এর সাথে গভীরভাবে সম্পর্কযুক্ত। সেখানে ইরনাকুলামে সে সৈনাবার সাথে পরিচিত হয় যার সাথে সে তার বাবার আবেদন করার পর থাকে। জুনে সে সত্যসারণীতে ভর্তি হওয়ার প্রমাণ দিলে কোর্ট সৈনাবার সাথে তার থাকা বৈধ করে ও তার বাবার আবেদন খারিজ করে। দুই মাস পর তার বাবা আবার আবেদন করেন ও বলেন তার মেয়ে আইএসআইএস এর নির্দেশে ধর্মান্তরিত হয়েছে ও তার শঙ্কা সে আফগানিস্তানে উক্ত দলে যোগ দিবে, তিনি উদ্ধৃত করেন কেরালার দুই নারীর কথা যারা মুসলিম পুরুষদের দ্বারা ধর্মান্তরিত হয়েছে ও উক্ত দলে যোগ দিয়েছে। ডিসেম্বরে, অখিলা শাফিনকে বিয়ে করে ও আশোকানের আবেদন মন্জুর করা হয় জানুয়ারি ২০১৭ সালে। আখিলা বিয়ের সার্টিফিকেট কোর্টকে দেখায় কিন্তু এটা নাকচ করা হয়।


জুলাই ২০১৭ সালে,শাফিন জাহান কোর্টের সিদ্ধান্তকে ভারতের সুপ্রিমকোর্টে চ্যালেঞ্জ করে। শাফিন তার পরিবারের সাথে প্রথম মেয়েকে দেখে আগস্ট ২০১৬-তে একটি বৈবাহিক ওয়েবসাইটের বিজ্ঞাপনে। সুপ্রিমকোর্টে কেসের কাজ শুরু হয় ৪ আগস্ট ২০১৭-এ। মেয়ের বাবা বলেন তার মেয়েকে মানসিকভাবে বিপর্যস্ত করা হয়েছে। সুপ্রিমকোর্ট একইসাথে কেরালা সরকার ও এনআইএ-এর কাছ থেকে তথ্য গ্রহণ করে। প্রাক্তন বিচারক আর.বি. রবীন্দ্রন এনআইএ'কে ১৬আগস্ট বিষয়টি অনুসন্ধান করার নির্দেশ দেন যখন এনআইএ প্রকাশ করে যে, মেয়েটির বিয়ে করা ও ধর্মান্তরের ঘটনা ভিন্ন নয় এবং রাজ্যে এমন ঘটনা দেখা দিয়েছে, আরো বলেন তারা একই লোকের আরো একটি কেস পেয়েছেন। এনআইএ জানায় কেসে মেয়েটির স্বামী ইসলামী জঙ্গি সংগঠন ইসলামিক স্টেট অব ইরাক অ্যান্ড দ্য লেভান্ট-এর সাথে যুক্ত। যারা হয়তো এই বিয়ে সম্পাদন করেছে।


২০১৮ সালের ৮ মার্চে সুপ্রিম কোর্ট কেরালা উচ্চ আদালত থেকে হাদিয়ার বিবাহ বাতিল সম্পর্কিত রায়টি তুলে নেয় এবং সেখান থেকে জানানো হয় তিনি তার নিজের স্বাধীন ইচ্ছায় বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়েছেন। অবশ্য জঙ্গি সংশ্লিষ্টতার অভিযোগের জন্য সুপ্রিম কোর্ট এনআইএকে তাদের তদন্ত অব্যাহত রাখতে নির্দেশ দান করেছে।


তথ্যসূত্রঃ উইকিপিডিয়া

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url