Translate

আমি শ্রীমতী বরমালা রায় | I am Mrs. Barmala Roy | Noakhali massacre

আমি শ্রীমতী বরমালা রায় I am Mrs. Barmala Roy Noakhali massacre,গােবিন্দপুর থানা বেগমগঞ্জ, জিং নােয়াখালী,নোয়াখালী নোয়াখালী,শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়


❝ যে জাতির ইতিহাস নাই তাহার ভবিষ্যৎ নাই। ❞ 

শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায়

তাই বাঙ্গালী হি.ন্দুকে তার বিস্মৃত ইতিহাস স্মরণ করতে হবে। ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, যারা ইতিহাস থেকে শিক্ষা নেয় না, তাদেরকে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তির মাশুল গুনতে হয়।



আমি শ্রীমতী বরমালা রায়

পিতা মৃত মনােমােহন রায় 

সাং গােবিন্দপুর থানা বেগমগঞ্জ, জিং নােয়াখালী।


গত ১৪/১০/৪৬ ইং সােমবার সকাল বেলা বহু মুসলমান আমাদের বাড়ীতে হানা দেয়। ইহাদের অনেকের মুখ দেখিলে চিনি, নাম বলিতে পারি না, একজনের নাম জানি; তাহার নাম মুছা। ইহারা সকলেই মারাত্মক অস্ত্রশস্ত্রে সজ্জিত হইয়া আসিয়াছিল। ইহারা বাড়ীর উঠানে আসিতেই আমরা দালানের কপাট বন্ধ করিয়া ফেলি। তাহারা দালনের কপাট ভাঙ্গিয়া ভিতরে ঢুকিতে আরম্ভ করিলে আমরা ছাতে উঠি। এবং তখন দেখিতে পাই সমস্ত বাহিরের ঘরগুলিতে আগুন দেওয়া হইয়াছে। দেখিলাম কোন কোন দল ঘরে আগুন দিতেছে। 


দুর্বৃত্তরা দালানের ছাতে উঠিয়া আমাদিগকে টানিয়া নামাইতে থাকে এবং কাহাকে কাহাকেও নিচে ফেলিয়া দেয়। আমরা মেয়েরা যখন ছাতে উঠিয়াছিলাম তখনই দেখিয়াছিলাম বাড়ীর পুরুষ অনেককেই বাঁধিয়া ফেলা হইয়াছে এবং কোন কোন জনকে মারধর এবং ছুরি, বল্লমাদির দ্বারা আঘাত করা হইতেছে। আমাদিগকে অর্থাৎ বাড়ীর মেয়েদিগকে এবং শিশুদের অনেককে আমাদের বাড়ীর উত্তরদিকের পুকুরের ঘাটলার নিকট নিয়া যাওয়া হয়। আমার ভাসুর দীননাথ রায়কে পূর্বেই দুর্বৃত্তরা মাথায় আঘাত করিয়াছিল। তিনি আমাদের সংগেই ছিলেন এবং তাহার স্ত্রী তাহাকে শুশ্রষা করিতেছিলেন। 

ইতিহাস পড়তে ক্লিক করুন

দীননাথ রায়কে আমাদের নিকট হইতে ছিনাইয়া লইয়া নিয়া দুবৃত্তরা তাহাকে দুর্গামণ্ডপের দিকে লইয়া গিয়া আগুনে নিক্ষেপ করে। ঘাটলার নিকট হইতে দেখিলাম, আরও অনেককেই ঐরূপে হত্যা করা হইতেছে। আমার দেওর রমণীমােহন রায়কে দুবৃত্তরা আমাদের কাছ হইতে ডাকিয়া নিয়া লাঠি দিয়া আঘাত করিয়া পরে বাঁধিয়া জীবন্ত অবস্থাতেই আগুনে ফেলিয়া দেয়। যশােদা রায়ের ভগ্নীপতি বিনােদ মজুমদার মেয়েদের মধ্যে ছিল। তাহাকে সেখান হইতে নিয়া লাঠি বল্লম ইত্যাদির দ্বারা আঘাত করিয়া পরে আগুনে ফেলিয়া দেওয়া হয়। এইরূপ ভাবে আরও অনেককে হত্যা করা হইতেছিল। ঘাটলার নিকট হইতে দুর্গামণ্ডপের সামনের স্থান খুব ভাল করিয়া দেখা যায় না এবং সেখানে প্রকাণ্ড জনতা। আংশিকভাবে যাহা দেখা যাইতেছিল তাহাতেই দেখিতেছিলাম কাহাকে কাহাকেও জীবন্ত আগুনে ফেলিয়া দেওয়া হইতেছে; তাহারা অর্ধদগ্ধ অবস্থায় আগুন হইতে বাহির হইয়া আসিতেছে আবার দুর্বত্তরা তাহাদিগকে আগুনে ফেলিয়া ফেলিয়া দিতেছে। 


আমাদের পাশের বাড়ীর ভারত ভৌমিক প্রভৃতিকেও তাহাদের বাড়ী হইতে আনিয়া আমাদের দুর্গামণ্ডপের সম্মুখে হত্যা করা হয়। এই নিদারুণ দৃশ্য দেখিয়া মেয়েছেলের মধ্যে কেহ কেহ ফিট হইতে থাকে। এই সকল কারণে আমাদিগকে ভৌমিকবাড়ীতে নিয়া যাওয়া হয়। আমাদের ইতিপূর্বেই—আমাদের শরীরের অলংকারাদি ছিনাইয়া নেওয়া হইয়াছিল, এবং তাহাতে কাহারও নাক কান পর্যন্ত ইহাতে ছিড়িয়া গিয়াছিল; কাহাকেও উলংগ করিয়া পরণের কাপড় পর্যন্ত খুলিয়া নেওয়া হইয়াছিল। আমাদিগকে অতঃপর আমাদের পাটারী বাড়ীর লােকেরা ভৌমিকদের সুপারীবাগানে নিয়া রাখে, এবং পরে পাটারী বাড়ি নিয়া যায়। গতকল্য বিকালে আমরা পুলিশের সাহায্যে পাটারীবাড়ী হইতে উদ্ধার পাই এবং সেখান হইতে নােয়াখালী শহরে আসি। বাড়ীর অনেক স্ত্রীলোক কোথাও আশ্রয় পাইয়াছে কিনা এবং সেখান হইতে উদ্ধার পাইয়াছে কিনা বলিতে পারি না। পাটারী বাড়ি হইতে আমরা ১৭ জন উদ্ধার পাইয়াছি। এই বিবরণ আমাকে পড়িয়া শুনান হয়। এবং ইহার মর্মার্থ জানিয়াই ইহাতে নাম সহি করিলাম। 


ইতি 

শ্ৰীমতী বরমালা রায়

নোয়াখালী

১৭/১০/৪৬ ইং 

তথ্যসূত্রঃ~ সাতচল্লিশের ডায়রি :নির্মলকুমার বসু



আরও পড়ুনঃ 
  1. হিন্দুদের ওপরে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার ইতিহাস ও ভূমিকা | History and role of riots against Hindus
  2. লীলা রায় ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গায়, তিনি একাই ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার করেন
  3. দুই বাংলার তথাকথিত মুক্তমনা মানুষের কাছে সদা উপেক্ষিত এক বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ
  4. ভয়ঙ্কর লক্ষ্মীপূজো (নোয়াখালি দাঙ্গা ) ১৯৪৬ | Terrible Lakshmi Puja (Noakhali Riots) 1946
  5. ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে ১ মাসে ৫০ লক্ষ হিন্দু বিতাড়নের নৃশংস ইতিহাস | হিন্দু গণহত্যা | History | Hindu expulsion



●নোয়াখালী নোয়াখালী :সান্তনু সিংহ 

●সাতচল্লিসের ডায়রি :নির্মলকুমার বসু 

●১৯৫০ রক্তেরঞ্জিত ঢাকা বরিশাল :দীনেশচন্দ্র সিংহ 

●ইতিহাসের দিকে ফিরে ছেচল্লিশের দাঙ্গা :সন্দীপ বন্দ্যোপাধ্যায়

●বাঙ্গালীর মুক্তিযুদ্ধের অন্তরালে শেখ মুজিব :কালিদাস বৈদ্য 

বই গুলির PDF: https://t.me/byomkeshunofficial


শেয়ার করার অনুরোধ রইলো। এই প্রজন্ম ইতিহাস ভুলে গেছে। তাদের জানানো হোক।


ইতিহাস পড়তে ক্লিক করুন
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url