Translate

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী | Noakhali Hindu Massacre

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী Noakhali Hindu Massacre,নোয়াখালিতে হিন্দুদের সাথে কি হয়েছিলো,noakhali distric

Click on the translator above to read the news in your respective language

জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী,                                                   

৩১/১০/১৯৪৬

লক্ষ্মীপূজার দিন শুক্রবার বেলা ১০টার সময় প্রথমে বহুলােক টেটা, বল্লম, দুটো বন্দুক নিয়ে আসে, তখন আমরা মেয়েরা সকলেই ছাদের উপরে উঠি। তখন দুবৃত্তরা চারিদিকে আগুন লাগাইয়া দেয়। মণীন্দ্রবাবু, কানু রায় (প্যারী রায়ের ছেলে) দুজনে গিয়ে মাপ চাইতে যায় এবং মাপ চাইতে না চাইতেই মণিকে নিয়াই কাটিয়া ফেলে, কানুর বুকে বল্লম মারে। তারপর অনর্গল ইট-বর্ষণ হয় এবং বর্ণনাকারিণীর চোখের উপরেই ইট লাগে। তারপর ছাদের উপর হইতে পুরুষ ও মেয়েরা মাপ চাইতে থাকে। দুর্বত্তরা নীচু হইতে অস্ত্র শস্ত্র ছুড়িয়া মারিতে সকলেই ছাদের উপরে শুইয়া পড়ে। সকলেই অল্পবিস্তর আহত (হন) এবং উঠিয়া মার্জনা প্রার্থনা করে যে আমাদের মারবেন না, যা চান বলুন আমরা দিতেছি। তাহাতে জনতা বলে তােমরা আগে নামিয়া এসাে। তখন মেয়েরা বলেন যে চারিদিকে আগুন জ্বলিতেছে আমরা কেমনে নামিব। তখন নীচু হইতে নারিকেল গাছ কাটিয়া উপরে উঠিয়া বলে মুসলমান হবি কিনা? আমরা অনেকেই স্বীকার করি, এবং দাবি (করি) যেন আমাদের উপরে কোন অত্যাচার করা না হয়। তখন তাহারা বলে যে নির্ভয়ে নাম। তখন তাহারা আমাদিগকেই হাত ধরিয়া নামিতে সাহায্য করে। এবং নামাইবার সময় গা হইতে অলংকারগুলি টানিয়া খুলিয়া লওয়া হয়।

আরও পড়ুনঃ 

প্রথম অস্ত্রোপচারের জনক মহর্ষি সুশ্রুত | Maharishi Sushruta was the father of the first surgery

এর আগে পুরুষদিগকে পিটাইতে থাকে এবং রাজেনবাবুকে খোঁজ করিতে থাকে। রাজেন বাবুকে কলার পাতায় ঢাকিয়া রাখা হইয়াছিল। তারপর খোঁজ করিয়া ধরিয়া ফেলে। রাজেনবাবুর স্ত্রী বলেন যে আগে আমাকে হত্যা না করিয়া উহাকে মারিতে পারিবেন না কয়েকজন মিলিয়া রাজেনবাবুর স্ত্রীকে ধরিয়া রাখে এবং রাজেনবাবুকে হাত বাঁধিয়া নীচে নামান হয় এবং তিনি নামিবামাত্রই একজন টেটা ছুড়িয়া তার প্রতি নিক্ষেপ করে, তাহা আসিয়া রাজেনবাবুর পাছায় লাগে। তখন তিনি বলেন যে আমার মাথা ঘুরিতেছে, দাঁড়াইতে পারিতেছি না। 


তারপর রাজেনবাবুকে ধরিয়া আম গাছের তলায় গােলাম সারােয়ারের বিশ হাত তফাতে দাঁড় করান হয় এবং বিশ (হাত) তফাত থেকে গােলাম সারােয়ার তাহাকে গুলি করিয়া মারে, গুলি রাজেনবাবুর বুকে লাগে। তাহাকে একটু দূরে লইয়া গিয়া মাথা কাটা হয়। তারপর গােলাম সারােয়ার হুইসিল দেয় এবং সকলে থামে। যখন এই কাণ্ড চলিতেছিল তখন অন্যান্য পুরুষদিগকে ছাদ হইতে এক এক করিয়া নামাইয়া হত্যা করা হইতেছিল। নগেন রায়ের আট বছরের ছেলেকে ছাদের উপর থেকে আগুনে ফেলিয়া দেওয়া হইয়াছিল, কিন্তু তাহার মৃত্যু হয় নাই, বাঁচিয়া গেছে। তারপরেই গােলাম সরােয়ার যখন চলিয়া যাইতে থাকে তার পিছনে বাড়ীর সমস্ত মেয়েদের লইয়া চলিতে থাকে। যাইবার সময় আমি দুই পাশে তাকাইয়া দেখিতে পাই ভাতের ডেকচিতে নগেন রায়কে কাটিয়া রাখা হয় এবং ডালের ডেকচিতে সতীশবাবুর আধকাটা শরীর রহিয়াছে। 

দেখুনঃ 

গােলাম সায়েরের বাড়ীতে যখন পৌছান হইল তখন রাত্রি হইয়া গিয়াছিল। আমাদের দেখিয়া যাহারা আমাদের লইয়া গিয়াছিল তাহাদের ধমক দিয়া বলে যে কেন ইহাদের এখানে আনিয়াছ? ইহাদের বাড়ীতে ফিরাইয়া দাও। কিন্তু বাড়ী তখন পুড়িতেছিল। আমাদের তখন ভিন্ন ভিন্ন হিন্দু ও মুসলমান বাড়ীতে রাখা হয়। সকাল বেলায় আমরা বাড়ীতে ফিরি ও ছােট ঘরে আশ্রয় লই। সকাল ৮টার সময় কয়েকজন বড় বড় বেতের বড় ঝুরি ও দা লইয়া আসে এবং নিহত ব্যক্তিদের মাথা কাটিয়া ঝুড়ি ভরিয়া লইয়া যায়। একমাত্র কানুবাবু ভীষণভাবে আহত হইয়া একটি ঝোপের মধ্যে পড়িয়া ছিলেন। তাহাকে  ইহারা দেখিতে পায় নাই। রাত্রে তাহার আর্ত্নাদ শুনিয়া মজুমদার বাড়ীর লােকেরা তাহাকে লইয়া যায়। পরের সোমবার লাসগুলি সরাইয়া লইয়া যাওয়া হয়। কানুবাবু সেইদিন মারা যায়, কানুবাবুকে ওরা আসিয়া কবর দেয়। এরপর একদিন ডাফরান সাহেব আসিয়া রাজেনবুর স্ত্রী ও মেয়েদিগকে লইয়া যান; অন্য কাহাকেও লইতে অস্বীকার করেন।

সাতদিন পরে লামচর হইতে প্রথমে পুলিশ দেখা দেয়। এ হত্যাকাণ্ডের মধ্যে ছাদ ধ্বসিয়া মাত্র তিনজনের মৃত্যু হয়, বাকী সকলের অস্ত্রাঘাতে মৃত্যু হয়।

{ ইহার মধ্যে ছিনাইয়া লওয়া কালাচাদের রায়ের স্ত্রী } নমিতা, খুকু


নিহতদের তালিকা

(১) কালীকুমার রায় ও আর দুইজন ছাদ ধ্বসিয়া মৃত্যু হয়।

(৪) রাজেনবাবু

(৫) চিন্তাহরণবাবু

(৬) সতীশবাবু

(৭) মণীন্দ্রবাবু 

(৮) গােপাল 

(৯) নগেন্দ্রবাবু 

(১০) জয়চন্দ্র 

(১১) মনােমােহন 

(১২) হরেন্দ্র রায় 

(১৩) ব্রজনাথ দাস 

(১৪) যশােদ ধুপী 

(১৫) বারুই বাড়ীর দুটি ছেলে

(১৬) প্রসন্ন রায় 

(১৭) কালু রায় 

(১৮) অক্ষয় রায় 

(১৯) সুর্য্য রায় 

(২০) মােনা 

(২১) খােকা 

(২২) নেপু, সূর্যাযরায়ের ছেলে} 

(২৩) মজুমদার 

(২৪) কালীপদ রায়।


তথ্যসূত্রঃ~ সাতচল্লিশের ডায়রিঃ নির্মলকুমার বসু।

নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা জ্যোতির্ময়ী দাস, রমানাথ দাসের স্ত্রীর জবানবন্দী Noakhali Hindu Massacre,নোয়াখালিতে হিন্দুদের সাথে কি হয়েছিলো,noakhali distric


সাহিত্যিক শরদিন্দু বন্দ্যোপাধ্যায় বলেছিলেনঃ ❝ যে জাতির ইতিহাস নাই তাহার ভবিষ্যৎ নাই। ❞

তাই বাঙালিকে ইতিহাস থেকে শিক্ষা নিতে হবে, আর কতদিন বাঙ্গালী ইতিহাস থেকে মুখ ফিরিয়ে থাকবে তার ওপরেই নির্ভর করছে বাঙ্গালী হিন্দুর ভবিষ্যত। কী হবে তা সময়ই বলবে। 

আরও পড়ুনঃ 

প্রথম অস্ত্রোপচারের জনক মহর্ষি সুশ্রুত | Maharishi Sushruta was the father of the first surgery


আরও পড়ুনঃ 

  1. হিন্দুদের ওপরে ঘটে যাওয়া দাঙ্গার ইতিহাস ও ভূমিকা | History and role of riots against Hindus
  2. লীলা রায় ১৯৪৬ সালে নোয়াখালী দাঙ্গায়, তিনি একাই ১৩০৭ জন হিন্দু মেয়েকে উদ্ধার করেন
  3. দুই বাংলার তথাকথিত মুক্তমনা মানুষের কাছে সদা উপেক্ষিত এক বৃহৎ হত্যাযজ্ঞ
  4. ভয়ঙ্কর লক্ষ্মীপূজো (নোয়াখালি দাঙ্গা ) ১৯৪৬ | Terrible Lakshmi Puja (Noakhali Riots) 1946
  5. ১৯৫০ সালে পূর্ববঙ্গ থেকে ১ মাসে ৫০ লক্ষ হিন্দু বিতাড়নের নৃশংস ইতিহাস | হিন্দু গণহত্যা | History | Hindu expulsion
ট্যাগঃ নোয়াখালী হিন্দু গণহত্যা,নোয়াখালীর দাঙ্গা pdf,দাঙ্গার ইতিহাস pdf,ছেচল্লিশের দাঙ্গা pdf,হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাংলাদেশ,নোয়াখালী দাঙ্গা বই,নোয়াখালী দাঙ্গায় কি পরিমাণ হিন্দু নিহত, ধর্মান্তরিত ও ধর্ষিত হয়েছিল এবং এর সঠিক ইতিহাস কী?
Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url