Translate

নিহত দিলীপ কুমার দাসের পরিবারে নেই দূর্গাপূজার আনন্দ | There is no Durga Puja joy in the family of deceased Dilip Kumar Das

নিহত দিলীপ কুমার দাসের পরিবারে নেই দূর্গাপূজার আনন্দ
দিলীপ কুমার দাস

কয়েক দিন পরেই সনাতন ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় উৎসব দুর্গাপূজা। আনন্দ উৎসবে মেতে উঠবেন সনাতন সম্প্রদায়ের লোকজন। তবে আনন্দ নেই দিলীপ কুমার দাসের পরিবারে। কারণ ২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর মনোহরপুর রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরে হামলায় প্রাণ হারান দিলীপ। তাঁকে হারিয়ে আজও অনেকটা বাকরুদ্ধ পরিবারটি। অভাব-অনটনে কোনো রকম চলছে সংসার। মেলেনি কোনো সহায়তা। মৃত্যুর দুই বছর পূর্তিতে সমকালের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন দিলীপের স্ত্রী রূপা দাস।  

কোতোয়ালি থানার পাশে একটি টিনশেড বাসায় থাকেন রুপা দাস। এক ছেলে ও এক মেয়ে নিয়ে ছিল তাদের সাজানো সংসার। ঘরের সামনে দুটি দোকান। ঠিকাদারির পাশাপাশি দিলীপ একটি দোকানে লন্ড্রির কাজ করতেন। তাঁর মৃত্যুর পর সেগুলো ভাড়ায় চলছে। মাসে আট হাজার টাকা ভাড়া আসে। তা দিয়ে চলে সংসার।

মেয়ে প্রিয়া রানী দাস কুমিল্লা সরকারি কলেজে অনার্স শেষ করে ঢাকায় দৃষ্টিপাত নামে নাট্যদলে অভিনয় করেন। ছেলে রাহুল দাস ঢাকার একটি কলেজে অনার্স শেষ করে গত মাসে বৃত্তি নিয়ে ডেনমার্কে গেছেন। সব মিলে টানাপোড়েনের মধ্যে চলছে তাদের সংসার।

গতকাল বৃহস্পতিবার রুপা দাস মেয়েকে নিয়ে কুমিল্লায় আসেন। বাসায় তাদের সঙ্গে কথা হয় সমকালের। দিলীপ দাসের কথা বলতেই রুপা দাস বলেন, ‘এ কষ্ট আমরণ সহ্য করে যেতে হবে। প্রকাশ্য হামলায় একটি মানুষ নিহত হলো, অথচ আজ পর্যন্ত সরকারি কিংবা বেসরকারি কোনো সহায়তা পাইনি। এ কষ্ট কার কাছে বলব? কোথায় বিচার চাইব?’

পূজার আনন্দ বিষয়ে রুপা দাস বলেন, 

‘ঘরের মানুষটি ছাড়া আমাদের পরিবারে কীভাবে আনন্দ আসবে? তবুও ঈশ্বরের কাছে প্রার্থনা এমন পুজো কারও সংসারে যেন না আসে।’ তিনি বলেন, ‘২৮ বছরের সংসার ছেড়ে হঠাৎ তিনি হারিয়ে গেলেন। ইটের আঘাতে তার (দিলীপ) মাথা থেকে প্রচুর রক্তক্ষরণ হয়। তাঁকে উন্নত চিকিৎসার জন্য ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়। সেখানে ২১ অক্টোবর রাতে তাঁর মৃত্যু হয়।’

প্রিয়া রানী দাস বলেন, 

‘আমার মা বাদী হয়ে বাবাকে হত্যার ঘটনায় ৫০-৬০ জনকে অজ্ঞাতপরিচয় আসামি করে হত্যা মামলা করেন। জানি না আদৌ বাবা হত্যার বিচার পাব কিনা? কেননা যে কালীবাড়িতে বাবা আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে মারা গেছেন তারাও এ ঘটনা স্বীকার করতে চান না। মামলাটি এখন পিবিআই তদন্ত করছে।’ তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী বাবাহারা, আমিও বাবাকে হারিয়েছি। তাই মাকে নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করতে চাই।’  

জানা গেছে, 

২০২১ সালের ১৩ অক্টোবর কুমিল্লা নগরীর নানুয়ার দিঘিরপাড়ের পূজামণ্ডপে কোরআন রাখার ঘটনায় হামলা, ভাঙচুর, অগ্নিসংযোগ ও ককটেল বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। মহাঅষ্টমীর দিনে এই হামলায় মনোহরপুর রাজ রাজেশ্বরী কালীবাড়ি মন্দিরের প্রধান ফটক বন্ধ করতে গিয়ে আহত হয়ে মারা যান দিলীপ কুমার দাস। এ ঘটনায় কুমিল্লা কোতোয়ালি, সদর দক্ষিণ, দেবিদ্বার ও দাউদকান্দি থানায় ১২টি মামলা হয়। ছয়টির তদন্ত করে অভিযোগপত্র দিয়েছে সিআইডি। হত্যা মামলা ছাড়া পিবিআই তিনটি এবং দুটির অভিযোগপত্র দিয়েছে থানা পুলিশ। তবে কোনো মামলারই বিচার কাজ শেষ হয়নি। 

দিলীপ দাস হত্যা মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই কুমিল্লার পরিদর্শক তৌহিদুল ইসলাম বলেন, ‘ঘটনার সময় সিসিটিভি ফুটেজ ও তদন্তে প্রাপ্ত তথ্যে দু’জনকে গ্রেপ্তার করা হয়, তারা জামিনে মুক্ত। এরই মধ্যে কিছু লোককে শনাক্ত করা হয়েছে। শিগগিরই আদালতে অভিযোগপত্র দেওয়া হবে।’ 

মণ্ডপকাণ্ডে দায়ের মামলার প্রধান আসামি ইকবাল হোসেন (৩০)। সে কুমিল্লা নগরীর পাথুরিয়া পাড়ার বাসিন্দা। ঘটনার পর ২১ অক্টোবর তাকে কক্সবাজার থেকে গ্রেপ্তার করে র‍্যাব।

কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের সিনিয়র সুপার আবদুল্লাহ আল মামুন বলেন, আসামি ইকবাল হোসেন কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কারাগারে বন্দি। মাঝেমধ্যে হাজিরা দিতে বিভিন্ন কারাগারে নেওয়া হয়।


কুমিল্লায় পূজা মণ্ডপে হামলায় আহত দিলীপ দাসের মৃত্যু,দুর্গাপূজার আনন্দ নেই হামলায় নিহত দিলীপের পরিবারে,হিন্দু মুসলিম দাঙ্গা বাংলাদেশ,বাংলাদেশে সংখ্যালঘু কারা,হিন্দুদের উপর হামলা,হিন্দু সম্প্রদায়ের ওপর কারা হামলা করে,সংখ্যালঘু নির্যাতন:বিপন্ন মানবতা।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url