খিদিরপুর,মোমিনপুর মুসলিম এলাকা নিয়ে মানুষের অনুভূতি | People's feelings about Khidirpur, Mominpur Muslim areas
Click on the translator above to read the news in your respective language
খিদিরপুর, মোমিনপুর, ওয়াটগঞ্জ, রাজাবাজার, পার্কসার্কাস, মেটিয়াবুরুজ এসব এরিয়ায় দিনের যে কোনো সময় গিয়ে একটু ঘোরাঘুরি করলেই বুঝতে পারবেন আপনার আমার এলাকার যে সাধারণ নিয়মগুলো চলে সেগুলো এখানে অচল। বাইক চড়ে যারা ঘুরছে তাদের হেলমেট লাগেনা, ট্রাফিক লাইট নিজের মত রং বদলাতে থাকে - কেউ পাত্তাও দেয়না।
লোকজনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ একদম আলাদা, আপনার মত ন্যাতা জোবরানো মিনমিনে কাউকে রাস্তায় ঘুরে বেড়াতে দেখলে সেদিন লটারির টিকিট কাটতে পারেন। সাহস করে একটু গলিঘুঁজির মধ্যে উদ্দেশ্যহীন ভাবে ঘোরাঘুরি করার চেষ্টা করলে অনুভব করতে পারবেন আপনার পিঠে লোকজনের দৃষ্টি ঠোক্কর খাচ্ছে, নাকে যে বোঁটকা গন্ধটা যাবে তাতে গা গুলিয়ে উঠবে। গলির মধ্যে যে আধো অন্ধকার দোকানগুলো চোখে পড়বে, সেখানে রাংতা মোড়া বড় বড় ঝুলতে থাকা টুকরো আর দোকানে বসে থাকা লোকগুলোকে দেখে আপনার শিরদাঁড়াটা শিরশির করবে। মনে হবে কত তাড়াতাড়ি এখানে থেকে বেরোতে পারবেন।
আপনি ফ্ল্যাট খুঁজছিলেন, ধরুন এই গলির মধ্যে কম দামে একটা বেশ ভালো ফ্ল্যাট পেলেন - চোখ বন্ধ করে একবার নিজের বুকে হাত রেখে ভেবে বলুন তো,পারবেন এখানে বউ বাচ্চা নিয়ে শিফট করতে?
পারবেন না, এমনকি এখানে যদি নিজের একটা থাকার জায়গা থাকে সেটাও কম দামে ছেড়ে দিয়ে বেরিয়ে আসবেন আপনি। কারণ আপনি জানেন ওদের সাথে আপনি থাকতে পারবেন না।
ওখান থেকে বেরিয়ে আসবেন যখন, তখন আপনার গলাটা শুকনো, হঠাৎ বুঝতে পারবেন কপালের দু পাশের বিন্দু বিন্দু ঘাম জমেছে। রুমালে কপাল মুছে আপনি বাড়ির রাস্তা ধরবেন।
বাড়ি ফিরে চানটান করে ফ্রেশ হয়ে আপনি একটা বিদেশি হুইস্কি হাতে নিয়ে জগজিৎ সিংয়ের গজল চালিয়ে সোফায় বসবেন। সারাদিন যা ধকল গেলো, ফেসবুকটাই দেখা হয়নি... স্ক্রল করতে করতে একটা পোস্ট দেখে মুহূর্তের জন্য থমকে যাবেন "লক্ষ্মীপুজোর দিন মোমিনপুরে" না না মিথ্যে কথা, এসব গুজব "মোরা এক বৃন্তে" আপনি স্ক্রল করতে থাকবেন, করতেই থাকবেন!
Writter: পল্লব দত্ত
পুনশ্চ: মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম আওড়ানো লোকজনদের আমি ঠিক এই প্রশ্নটাই করি। আমি জানি, তাদের ঠিক কী উত্তর আসবে। ঠিক যেভাবে আমেরিকায় যেসব ভারতীয় কৃষ্ণাঙ্গদের জীবন অমূল্য বলে জ্ঞান ঝেড়ে নিজেরাই কৃষ্ণাঙ্গ অধ্যুষিত অঞ্চলে বাড়ি ভাড়া না নেওয়ার নিদান দেয়, এদের অবস্থাও ঠিক তেমনই।
পিএইচডি চলাকালীন আইএসআইতে আমার এক বন্ধুবৃত্ত ছিলো, যারা মুসলমানদের পিছনে উঠতে বসতে গালাগাল দিতো। অথচ, সামনাসামনি বা এদের সোশ্যাল মিডিয়া প্রোফাইল দেখলে আপনাদের মনে হবে, এদের মতো অসাম্প্রদায়িক, সুশীল শ্রেণী বোধ করি দ্বিতীয়টি হয় না, বোধহয় দেশের যাবতীয় সমস্যার জন্য এক এবং একমাত্র ওই ৫৬" ই দায়ী। এইরকম দোগলা, দুমুখো মানুষজন ইন্ডিয়ান অ্যাকাডেমিক বা তথাকথিত উচ্চশিক্ষিত কমিউনিটিতে ভর্তি।
এরকম সুবিধাবাদী, ভণ্ড কমিউনিটি আমি এই জীবনে খুব কমই দেখেছি। তাই আমি এদের মনের অন্তঃস্থল থেকে ঘৃনা করি।