কুমারী পূজা কি ও কেন? | What is Kumari Puja and why?
Click on the translator above to read the Article in your respective language.
মনুসংহিতা ৩/৫৬ এ উল্লেখ আছেঃ
"যত্র নার্য্যস্তু পূজ্যন্তে রমন্তে তত্র দেবতাঃ..."
অর্থাৎ; যে স্থলে নারীরা পূজিত হন, সেই স্থলের প্রতি দেবতাদের প্রসন্নদৃষ্টি বর্তমান থাকে।
মনুসংহিতার এই স্তোত্রেই নারীর প্রতি সনাতনের দৃষ্টিভঙ্গি পরিষ্কার। দুর্গা পূজা জগতজননীর আরাধনার পাশাপাশি শক্তিরশক্তির আরাধনাও বটে।
এই নারী শক্তির আরাধনার স্নিগ্ধ কোমল রূপ "কুমারী পূজা" স্বামী বিবেকানন্দ ১৯০১ সালে বেলুর মঠে প্রচলন করেন। বর্তমানে এই কুমারী পূজা দুর্গাপূজার এক অবিচ্ছেদ্য অঙ্গ। সচরাচর দুর্গাপূজার অষ্টমী কিংবা নবমী তিথিতে কুমারী পূজা করা হয়ে থাকে। সনাতন শাস্ত্র মতে নারীকে সম্মান ও শ্রদ্ধাজ্ঞাপনের এবং দেবীর কুমারী রূপের অর্চনার হেতু এই পূজার বিধান দেয়া হয়েছে। এছাড়া নিজেদের মনের পশুত্বকে সংযত করে নারীকে যথাযথ সম্মান জানানোই এই পূজার মূল উদ্দেশ্য।
এমনও মত প্রচলিত আছে সেকালে মুনি ঋষিরা কুমারী পূজার মাধ্যমে প্রকৃতি পূজা করতেন কারণ প্রকৃতি নারীস্বরূপা তথা মাতৃস্বরূপা। সেই প্রকৃতিরই আরেক রূপ কুমারীর মধ্যে দেখতে পেতেন তাঁরা। কুমারী দের মন সৎ, কলুষতার প্রভাব মুক্ত, তাঁদের মধ্যে ঈশ্বরের প্রকাশ প্রকট। সেজন্যে কুমারী পূজার দেবী হিসেবে কুমারীদের বেছে নেয়া হতো। তন্ত্রসার মতে "১ থেকে ১৬ বছর পর্যন্ত বালিকারা কুমারী পূজার উপযুক্ত হয়ে থাকে; তবে অবশ্যই তাদের ঋতুমতি হওয়া চলবে না।"
মেরুতন্ত্রে বলা আছে, "সর্বকামনা সিদ্ধির জন্য ব্রাহ্মন কন্যা, যশোলাভের জন্য ক্ষত্রিয় কন্যা, ধনলাভের জন্য বৈশ্য কন্যা, ও পুত্র লাভের জন্য শুদ্রকূল জাত কন্যা কুমারী পূজার যোগ্য"। পূজারীরা কুমারীরপূজার মাধ্যমে মাতৃরূপে ঈশ্বরের আরাধনা করে থাকেন।
দেবী পুরাণে কুমারী পূজার সুস্পষ্ট উল্লেখ পাওয়া যায়। ১ থেকে ১৬ বছরের অজাতপুষ্প সুলক্ষণা কুমারীকে পূজা করার উল্লেখ রয়েছে শাস্ত্রে। শাস্ত্রে আরো বলা আছে, ১ থেকে ১৬ বছরের কুমারীর দেবীর ষোলটি রূপের প্রতীক। এক বছর বয়সী কুমারী সন্ধ্যা, দুই বছর বয়সী কুমারী সরস্বতী, তিন বছর বয়সী কুমারী ত্রিধা, চার বছর বয়সী কুমারী কালিকা, পাঁচ বছর বয়সী কুমারী সুভগা, ছয় বছর বয়সী কুমারী উমা, সাত বছর বয়সী কুমারী মালিনী, আট বছর বয়সী কুমারী কুষ্ঠিকা, নয় বছর বয়সী কুমারী কালসন্দর্ভা, দশ বছর বয়সী কুমারী অপরাজিতা, এগারো বছর বয়সী কুমারী রুদ্রাণী, বারো বছর বয়সী কুমারী ভৈরবী, তেরো বছর বয়সী কুমারী মহালক্ষ্মী, চোদ্দ বছর বয়সী কুমারী পীঠনায়িকা, পনেরো বছর বয়সী কুমারী ক্ষেত্রজ্ঞা এবং ষোল বছর বয়সী কুমারী অন্নদা বা অম্বিকা রূপের প্রতীক।
শ্রীরামকৃষ্ণ পরমহংসদেব বলেছেন, "শুদ্ধাত্মা কুমারীর মধ্যে ভগবতীর প্রকাশ।
সনাতন ধর্মে নারীকে সর্বোচ্চ স্থান প্রদান করা হয়েছে। তার প্রমাণ পাওয়া যায় যোগিনীতন্ত্র, কুলার্ণবতন্ত্র, দেবীপুরাণ, স্তোত্র, কবচ, সহস্রনাম, তন্ত্রসার, প্রাণতোষিণী, পুরোহিতদর্পণ প্রভৃতি ধর্মীয়গ্রন্থে বর্ণিত কুমারী পূজার বিশদ পদ্ধতি ও মাহাত্ম্য ব্যাখ্যার মধ্যে। আর দুর্গাপূজায় কুমারী পূজার মাধ্যমে সমগ্র নারী জাতির প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। বিশেষভাবে উল্লেখ্য যে কুমারী পূজায় কুমারী দেবী হিসেবে ভিন্নধর্মী কুমারীকেও বসানোর ঘটনা ঘটেছে অর্থাৎ এতেই স্পষ্ট যে এই পূজার বিধান সর্বজনীনভাবে সকল নারীর জন্যই নিবেদিত।
দক্ষিণ ভারতের কেরেলায় একটি রীতি আছে "থিরান্দুকল্যাণম" নামে। এই রীতিতে কন্যা যখন বয়ঃসন্ধি কাল অতিক্রম করে তখন আড়ম্বরপূর্ণ আয়োজনে কন্যাকে দেবীজ্ঞানে পূজা করা হয় যে প্রথা এখনও চলমান। এই প্রথাও অনেকটা কুমারী পূজার মাহাত্ম্যের সাথে সম্পর্কিত।
ইদানীং অনেকেই বলার চেষ্টা করে দুর্গাপূজায় কুমারী পূজা অবৈদিক ও অশাস্ত্রীয়। তাদের উদ্দেশ্যে বলবো নারী পূজস্য এটা বেদাদি শাস্ত্রেরই শ্বাসত বানী তাহলে এর উপর ভিত্তি করে কোন সংস্কার কিভাবে অবৈদিক ও অশাস্ত্রীয় হতে পারে! যে সংস্কার সৎ, শুদ্ধ, সুন্দর ও শুভত্বের বার্তা বহন করে তা কদাপি অবৈদিক নয়। বৈদিক শাস্ত্রের যথাযথ মনন হতেই কুমারী পূজার মতো সংস্কারের উদ্ভব হয়৷
Sanatan Philosophy and Scripture (SPS)
সনাতনী ঐক্য, প্রচার ও কল্যাণে অবিচল।
Sojasapta2 শুধুমাত্র হিন্দুত্বের জ্ঞান প্রপচার ও প্রসারে লেখাটি কপি করেছে। যদি কোনো ভুল করে থাকে তবে অবশ্যই Sojasapta2 কে সূচিত করবেন।