Translate

হিন্দুদের নিয়ে কুরুচিপূর্ণ, ভিডিওগুলো সরানো হোক

প্রাক্তন তথ্য প্রতিমন্ত্রী ডা. মুরাদ হাসানের নারীদের নিয়ে আপত্তিকর বক্তব্য দেশের আদালতের নির্দেশনায় সরিয়ে ফেলার উদ্যোগ নিয়েছে দেশের প্রশাসন। সে লক্ষ্যে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম থেকে ডা. মুরাদ হাসানের অমর্যাদাকর, অশ্লীল ও আপত্তিকর উক্তির ৩৮৭ অডিও-ভিডিওর লিংক চিহ্নিত করে বিটিআরসির দায়িত্বপ্রাপ্ত আইনজীবী।অমর্যাদাকর, অশ্লীল ও আপত্তিকর অডিও এবং ভিডিও লিংক চিহ্নিত করে তা অপসারণ করতে উদ্যোগের জন্য দেশের প্রশাসনকে ধন্যবাদ। কারণ এ আপত্তিকর ভিডিও অডিও উপাদানগুলো দেশের নতুন প্রজন্ম বিশেষ করে শিশুমনে বিরূপ প্রতিক্রিয়ায় সৃষ্টি করতে পারে। সাথে সাথে দেশের প্রশাসনকে অনুরোধ জানাচ্ছি, ফেসবুক, ইউটিউবসহ বিভিন্ন নেটজগতে হুজুরদের ওয়াজের নামে হিন্দু ধর্ম, সংস্কৃতি এবং দেবদেবী নিয়ে বিভিন্ন সময়ে দেয়া কুরুচিপূর্ণ বক্তব্যগুলোও সরিয়ে ফেলতে ব্যবস্থা নিতে। আশাকরি দেশের প্রশাসন এ উদ্যোগ গ্রহণ করবে। 


বিভিন্ন ইসলামি বক্তাদের বিভিন্ন অপ্রাসঙ্গিক অনাকাঙ্ক্ষিত আপত্তিকর বক্তব্য প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জন ইসলামি বক্তাকে চিহ্নিত করে। তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ দেশের বিভিন্ন প্রান্তে আয়োজিত ওয়াজ মাহফিলগুলোতে তারা সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক বক্তব্য, জঙ্গিবাদে উৎসাহ দেওয়া, ধর্মের নামে বিভিন্ন উপদল ও শোবিজ তারকাকে নিয়ে বিভিন্ন সময়ে কটূক্তি করেন। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ১৫ জন ওয়াজ বক্তাকে চিহ্নিত এবং এ ধরণের বক্তব্য প্রতিরোধে ছয়টি সুপারিশ প্রদান করে।এই ছয়টি সুপারিশ সম্বলিত ইসলামিক ফাউন্ডেশন বাংলাদেশ (ইফাবা), জাতীয় রাজস্ব বোর্ড ও সব বিভাগীয় কমিশনারের কাছে চিঠি পাঠানো হয়েছে বলে বাংলা ট্রিবিউনের একটি খবরে বলা হয়েছে। এসব চিঠিতে ৬টি সুপারিশ বাস্তবায়নে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ করতে বলা হয়েছে -"উসকানিমূলক বক্তব্যের জন্য চিহ্নিত ১৫ ওয়াজ বক্তা, ৬ সুপারিশ" ঢাকা ট্রিবিউন বাংলা, (১.৪. ২০১৯)।



সুপারিশমালার মধ্যে অন্যতম হলো ওয়াজের বক্তাদের করের আওতায় আনা। এছাড়াও ওয়াজ মাহফিলের বক্তারা দেশবিরোধী বক্তব্য দিলে আইনের আওতায় আনার কথাও সুপারিশমালায় উল্লেখ করা হয়েছে।  


এ প্রসঙ্গে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল বলেন, "ওয়াজ মাহফিলে কী ধরনের বক্তৃতা হয় তা সবসময় আমাদের কাছে প্রতিবেদন আকারে আসে। আমরা সেই অনুযায়ী কাজ করি। আর বক্তারা কীভাবে করের আওতায় আসবেন তা দেখবে আয়কর বিভাগ"।


বাংলা ট্রিবিউনের খবরে জানানো হয়, মার্চের তৃতীয় সপ্তাহে মন্ত্রণালয়ের রাজনৈতিক অধিশাখা-২ থেকে তৈরি এক প্রতিবেদনে মাহফিলের ১৫ জন বক্তার নাম উল্লেখ করে জানানো হয়েছে— "এই বক্তারা সাম্প্রদায়িকতা, ধর্মবিদ্বেষ, নারীবিদ্বেষ, জঙ্গিবাদ, গণতন্ত্রবিরোধী ও দেশীয় সংস্কৃতিবিরোধী বয়ান দেন বলে লক্ষ্য করা যাচ্ছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে দেশের ধর্মপ্রাণ মুসলিমরা রেডিক্যালাইজড হয়ে উগ্রবাদের দিকে ধাবিত হচ্ছে।"


এই ১৫ জন বক্তারা হলেন, আবদুর রাজ্জাক বিন ইউসূফ (সালাফি), মাওলানা মুফতি মাহমুদুল হাসান (মুহতামিম, জামিয়াতুল উলুমিল ইসলামিয়া, মোহাম্মদপুর), আল্লামা মামুনুল হক (যুগ্ম মহাসচিব, বাংলাদেশ খেলাফত মজলিস), মুফতি ইলিয়াছুর রহমান জিহাদী (প্রিন্সিপাল, বাইতুল রসূল ক্যাডেট মাদ্রাসা ও এতিমখানা, ক্যান্টনমেন্ট), মুফতি ফয়জুল করিম (জ্যেষ্ঠ নায়েবে আমির, ইসলামী আন্দোলন), মুজাফফর বিন বিন মুহসিন, মুফতি সাখাওয়াত হোসাইন (যুগ্ম মহাসচিব, ইসলামী ঐক্যজোট), মতিউর রহমান মাদানী, মাওলানা আমীর হামজা, মাওলানা সিফাত হাসান, দেওয়ানবাগী পীর, মাওলানা আরিফ বিল্লাহ, হাফেজ মাওলানা ফয়সাল আহমদ হেলাল, মোহাম্মদ রাক্বিব ইবনে সিরাজ।


এই প্রতিবেদনে ওয়াজে মঙ্গল শোভাযাত্রাসহ পহেলা বৈশাখে নববর্ষ পালন, সাম্প্রদায়িক বিদ্বেষ এবং নারী সম্পর্কিত বয়ানে কী কী বলা হয় তা তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদনে বিভিন্ন সময়ে ওয়াজের বক্তাদের করা নানা মন্তব্যও তুলে ধরা হয়েছে। যেসব মন্তব্যকে দেশবিরোধী হিসেবে প্রতিবেদনে তুলে ধরা হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে- ‘মূর্তি ভাঙা ধর্মীয় কাজ’, ‘রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কাফের’, ‘অমুসলিমদের সঙ্গে বন্ধুত্ব করলে ঈমান নষ্ট হয়ে যায়’, ‘গণতন্ত্র, সমাজতন্ত্র ধর্মনিরেপক্ষতাবাদ মুশরিকদের কাজ’, ‘শহীদ মিনারে ফুল দেওয়া, প্রতিমূর্তিতে ফুল দিয়ে নীরবতা পালন করা শিরক’, ‘গণতন্ত্র ইসলামে নাই, ইহা হারাম’ এবং ‘জাতীয় সংগীত কওমি মাদ্রাসায় চাপিয়ে দেওয়া যাবে না’, ‘আল্লাহর রাস্তার প্রতিষ্ঠায় উত্তম জিহাদ হচ্ছে সশস্ত্র জিহাদ’, ‘আল্লাহ রাসূলকে গালি দিলে কোপাতে হবে’, ‘ইসলামের বিরুদ্ধে আইন করলে কোপাতে হবে ইত্যাদি।এই ধরণের সাম্প্রদায়িক উসকানিমূলক মন্তব্য এবং বক্তব্য প্রতিরোধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে ৬ টি সুপারিশ করা হয়েছে। 



স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ছয়টি সুপারিশ হলো:

১. ওয়াজি হুজুররা যেন বাস্তবধর্মী ও ইসলামের মূল স্পিরিটের সঙ্গে সংহতিপূর্ণ বক্তব্য প্রদান করেন, সেজন্য তাদের প্রশিক্ষণ ও উদ্বুদ্ধকরণের ব্যবস্থা করা। এক্ষেত্রে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে স্থানীয় প্রশাসন ও কমিউনিটি পুলিশের ভূমিকা তাৎপর্যপূর্ণ।

২. যারা ওয়াজের নামে হাস্যকর ও বিতর্কিত বক্তব্য প্রদানের মাধ্যমে ধর্মের ভাবগাম্ভীর্য নষ্ট করার চেষ্টা চালান তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণসহ প্রো-অ্যাকটিভ উদ্বুদ্ধকরণ করা।

৩. অনেক আলেমের প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা নেই। দাওরায়ে হাদিস ডিগ্রির মতো উচ্চশিক্ষা ব্যতীত যারা ওয়াজ করে তারাই জঙ্গিবাদ ও বিভ্রান্তি ছড়াচ্ছে। তাই মাদ্রাসায় উচ্চশিক্ষিত ওয়াজকারীদের নিবন্ধনের আওতায় নিয়ে আসা।

৪. অনেকেই আছেন, যারা হেলিকপ্টারযোগে ওয়াজ মাহফিলে যোগ দেন এবং ঘণ্টাচুক্তিতে বক্তব্য দিয়ে বিশাল অঙ্কের অর্থ গ্রহণ করেন। তারা নিয়মিত ও সঠিকভাবে আয়কর প্রদান করেন কিনা তা নজরদারির জন্য আয়কর বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট সব বিভাগে কর্মতৎপরতা বৃদ্ধি করা।

৫. ওয়াজি হুজুরদের বক্তব্য স্থানীয় প্রশাসন কর্তৃক সংরক্ষণ ও পর্যালোচনার জন্য বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া এবং উস্কানিমূলক ও বিদ্বেষ ছড়ানোর বক্তব্য দিলে তাদের সতর্ক করা। প্রয়োজনে পরবর্তী সময়ে তাদের ওয়াজ করার অনুমতি না দেওয়া।

৬. সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি নষ্ট করে ও রাষ্ট্রবিরোধী বক্তব্য প্রদানকারীদের আইনের আওতায় আনা।



শীতের মৌসুমে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় জলসা নামে অন্য ধর্মাবলম্বী বিশেষ করে হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় বিশ্বাস নিয়ে প্রচণ্ডভাবে অশ্লীল কুরুচিপূর্ণ বিকৃতমস্তিষ্ক কথাবার্তা বলা হয়(Stages of Islamic revolution in Bangladesh)। এ কুরুচিপূর্ণ কথাবার্তার মাত্রা এমন পর্যায়ে চলে গেছে যে বিষয়টি নিয়ে বিষয় ৫ জানুয়ারি, ২০২০, রোববার জাতীয় সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকেও আলোচনা করা হয়। এ সময়ে কমিটির সভাপতি মো. হাফেজ রুহুল আমীন মাদানীর সভাপতিত্বে বৈঠকে কমিটির সদস্য মনোরঞ্জন শীল গোপাল, জিন্নাতুল বাকিয়া, তাহমিনা বেগম ও রত্না আহমেদসহ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।


ধর্ম মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় জলসা থেকে বিভিন্ন ধর্মীয় উসকানি এবং সরকারবিরোধী প্রচারণার সুস্পষ্ট অভিযোগ করা হয়। বিষয়টি নিয়ে প্রচণ্ড উদ্বেগ প্রকাশ করে কমিটির পক্ষ থেকে ধর্মীয় উসকানি বন্ধে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের বিভিন্ন সুপারিশ করা হয়।বৈঠকে আলোচনা শেষে সারা দেশে ইসলামী জলসার নামে ধর্মীয় উসকানিমূলক বক্তব্য ও প্রচারণা বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। কমিটির সদস্যরা দেশের বিভিন্ন স্থানে উসকানিমূলক ঘটনা তুলে ধরে তীব্র ক্ষোভ প্রকাশ করে এ পরিস্থিতি উত্তরণে ওয়াজ মাহফিলসহ ধর্মীয় জলসা আয়োজনে স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি বাধ্যতামূলক করে। এবং রাত ১১টার পর কোনো অনুষ্ঠান না রাখার পরামর্শ দেয়া হয়।


কুশল বরণ চক্রবর্ত্তী
সহকারী অধ্যাপক, 
সংস্কৃত বিভাগ, 
চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url