দাড়ি টানার গুজব ছড়িয়ে পড়লে বরিশালে হিন্দু ব্যবসায়ীর দোকান ভাংচুর ও লুট
গত ১০ জানুয়ারি মঙ্গলবার বেলা ১১টার দিকে বরিশাল নদী বন্দর (পুরাতন লঞ্চ ঘাট) সংলগ্ন এলাকায় ঘোষ মিষ্টির দোকানে এসে সকালের নাস্তা সেরে ১০ টাকা নিয়ে দোকানের ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা কাটাকাটি হয় মুসলিম যুবক সৌরভ ঢালী। এক পর্যায়ে তিনি দোকানের এক কর্মচারীর সাথে ঝগড়ায় জড়িয়ে পড়েন এবং দাড়ি ছিঁড়ে ফেলার মিথ্যা গুজব ছড়িয়ে তার বিরুদ্ধে ব্লাসফেমির অভিযোগ তোলেন। স্থানীয় বিক্ষুব্ধ মুসলমানরা দোকানপাট ভাংচুর করে এবং সারা বাংলাদেশে হিন্দুদের সহিংসতার হুমকি দেয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও স্থানীয়রা জানান,
সৌরভ ঢালী নামে এক মুসলিম ব্যক্তি ও হাজী মোহাম্মদ মহসিন মার্কেটের দোকানের এক কর্মচারীর সকালের নাস্তার বিলের ১০ টাকা দেওয়া ও নেওয়াকে কেন্দ্র করে ঘোষ মিস্তান্না ভান্ডারের নগদ অর্থের দায়িত্বে থাকা হিন্দু ব্যক্তির সঙ্গে তর্কাতর্কি শুরু হয়। এরপর মিষ্টির দোকানের কর্মচারীর সঙ্গে সৌরভ ঢালীর হাতাহাতি হয়। লড়াইয়ের সময় সৌরভ দাড়িতে চোট পান।
এ ঘটনায় স্থানীয় মুসলিম তাওহিদী জনতার দাড়ি ছিঁড়ে ইসলাম অবমাননার অভিযোগ ওঠে। তারপর 'ঘোষ মিষ্টির দোকান' ভাংচুর করে এবং হিন্দুদের দেশ ছাড়ার হুমকি দেয়।
কট্টরপন্থী মুসলমানরা বাংলাদেশের সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর নিত্যনতুন নির্যাতন চালাচ্ছে। এবার মিষ্টির দাম চাওয়ার অপরাধে এক হিন্দু মিষ্টি বিক্রেতার দোকানে হামলা চালায় শতাধিক ধর্মান্ধ মুসলমান। পুলিশের উপস্থিতিতে ভাংচুর ও লুটপাটের ঘটনা ঘটে।
শেষ পর্যন্ত পুলিশ নির্দোষ ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করে কঠোর শাস্তির প্রতিশ্রুতি দিলে চরমপন্থীরা শান্ত হয়। মঙ্গলবার দুপুরে বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এদিকে সংখ্যাগরিষ্ঠ মুসলমান ও পুলিশের এ ধরনের মানসিকতায় বরিশালের হিন্দু সম্প্রদায়ের লোকজন চরম আতঙ্কে রয়েছে।
বরিশালের মুসলিম অধ্যুষিত লঞ্চঘাট এলাকার মহসিন মার্কেটে ঘোষ মিস্তান্না ভান্ডার নামের দোকানটি রয়েছে বলে জানা গেছে। এদিন বিকেলে স্থানীয় এক মুসলিম ব্যবসায়ী টিফিনের জন্য ওই দোকানে যান। বিল ছিল 40 টাকা।
কিন্তু খাবারের দাম না দিয়েই চলে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ। ক্রেতা নিয়ে দোকানদারের সঙ্গে বিরোধও হয়। উভয়ের মধ্যে সামান্য হাতাহাতিও হয়। আর হট্টগোলের মধ্যেই হিন্দু ব্যবসায়ীর হাত পড়ল মুসলিম ক্রেতার দাড়িতে। এরপর ওই মুসলিম ব্যক্তি দোকান থেকে বের হয়ে বাজারে অন্যদের কাছে দাড়ি টানার গুজব ছড়িয়ে দেন।
আর এর কিছুক্ষণ পরই শত শত মুসলমান গণেশ মিষ্টির দোকানে এসে ভাংচুর ও লুটপাট শুরু করে। তবে জনতার সঙ্গে ছিল পুলিশ বাহিনী। তবে পুলিশের সামনেই হামলার ঘটনা ঘটেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।
বাংলাদেশী স্বাধীনচেতা ব্লগার আসাদ নূর তার ব্লগে ঘটনার বেশ কিছু ভিডিও পোস্ট করেছেন। ওই ভিডিওতে ঘোষ মিষ্টির দোকানের সামনে জড়ো হওয়া লোকজনকে 'নারায়ে তাকবির, আল্লাহু আকবর' স্লোগান দিতে দেখা গেছে।
একজন আলেমকে বলতে শোনা গেছে, 'বরিশালের মাটিতে হিন্দুদের দোকান থাকতে দেওয়া হবে না'। ভিড়ের মধ্যে কাউকে বলতে শোনা যায়, 'বাংলাদেশে হিন্দুরা ভাড়ায় বসবাস করছে'। স্থানীয় মুসলিম নেতা আব্দুল রহমামুল টিটুর ভাষায়, তাদের সাহস অনেক বেড়েছে। নবীর সুন্নতকে আঘাত করা হয়েছে। ওই ব্যবসায়ীকে কোনোভাবেই এখানে ব্যবসা করতে দেওয়া হবে না।
জানা গেছে, ঘটনার পর বরিশাল লঞ্চঘাট এলাকায় এরই মধ্যে কট্টরপন্থীদের বেশ কয়েকটি ছোট মিছিল বের হয়েছে। স্থানীয় মসজিদে সভা করে বিশাল মিছিল করারও সিদ্ধান্ত হয়েছে।
যে কোনো সময় উগ্রবাদীদের দ্বারা আক্রান্ত হতে পারে বলে আশঙ্কা স্থানীয় হিন্দুদের। বিষয়টিকে 'ভয়ংকর' বলে বর্ণনা করেছেন ব্লগার আসাদ নূর। কট্টরপন্থী মুসলমানদের ভয়ে বরিশালের হিন্দুরা দেশ ছাড়তে বাধ্য হতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।